বৃহস্পতিবার 18 রমজান 1445 - 28 মার্চ 2024
বাংলা

ইসরা ও মেরাজের ঘটনা সংশ্লিষ্ট একটি মিথ্যা তথ্য

প্রশ্ন

 কুরআন-হাদিসের এমন কোন সহিহ দলিল আছে কি যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মেরাজ থেকে ফিরে আসলেন তখনও তিনি তাঁর বিছানার ‘মুলাআ’ (চাদর) উষ্ণ পেলেন, তিনি পানির যে পাত্রটি উপড় করে রেখেছিলেন সে পাত্র থেকে তখনও মাটির উপর ফোটা ফোটা পানি পড়ছিল, দরজার শিকল তখনও কাঁপছিল, ঠিক মেরাজে যাওয়ার আগে তিনি যখন রুম বের হচ্ছিলেন তখন যেভাবে রেখে গিয়েছিলেন সেভাবে।

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

প্রশ্নে যে বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেরাজ থেকে ফিরে এসে তাঁর বিছানার মুলাআ বা চাদর উষ্ণ পেয়েছেন, যে পাত্রটি উপড় করে রেখে গিয়েছেন সেটি থেকে তখনও পানি ঝরছিল, দরজার শিকলকে কাঁপা কাঁপা অবস্থায় পেয়েছেন; আমরা এসবের কোন ভিত্তি জানি না। এ ধরণের কথা প্রচার করা জায়েয নয়; কারণ এতে স্পষ্ট কৃত্রিমতা ও কদর্যতা পাওয়া যায়।

আমরা জানি না এমন কেউ আছেন যিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চকিতে মুলাআ (চাদর) থাকার কথা উল্লেখ করেছেন। বিছানার চাদরকে ‘মুলাআ’ বলা এটি একটি আধুনিক ব্যবহার। আরবী ভাষায় ‘মুলাআ’ বলা হয় বিছানার চাদরকে কিংবা লুঙ্গিকে।[দেখুন: লিসানুল আরব (১/১৬০) ও আল-নিহায়া (৪/৩৫২)]

শাইখ শুকাইরি (রহঃ) বলেন:

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম রাতের বেলায় মেরাজে যাওয়া ও ফিরে এসে বিছানা উষ্ণ পাওয়া সাব্যস্ত নয়; বরং এটি মানুষের বানানো একটি বানোয়াট মিথ্যা।”[আস-সুনান ওয়াল মুবতাদিআত (পৃষ্ঠা-১৪৩) থেকে সমাপ্ত]

অনুরূপভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘরের দরজার শিকল ছিল দরজা বন্ধ রাখার জন্য; এমনটি আমরা জানি না। বরং প্রথম যামানায় ঘরের কোন দরজা থাকত না। আল্লাহর বাণী: “তোমাদের নিজেদের জন্যও দোষ নেই খাওয়া-দাওয়া করা তোমাদের ঘরে”... “অথবা তোমাদের বন্ধুদের ঘরে”[সূরা আন-নূর, আয়াত: ৬১] এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আব্দুর রহমান বিন যায়েদ বলেন: “এটি ছিল প্রথম দিকে। তখন তাদের ঘরের দরজা থাকত না; পর্দা টানিয়ে রাখা হত” [তাফসিরে তাবারি (১৯/২২১) থেকে সমাপ্ত]

উপরোক্ত তথ্যকে বাতিল প্রমাণ করার আরও একটি দলিল হচ্ছে যা বুখারি (৩৩৪২) ও মুসলিম (১৬৩) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন: আবু যর (রাঃ) হাদিস বর্ণনা করতেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “আমি তখন মক্কায় ছিলাম। আমার ঘরের ছাদ উন্মুক্ত হয়ে গেল এবং জিব্রাইল নাযিল হলেন। তিনি আমার বুক ফাঁড়লেন। এরপর সেটাকে জমজমের পানি দিয়ে ধৌত করলেন। তারপর তিনি সোনার তৈরী একটি আনলেন। সেটি হেকমত ও ঈমানে পরিপূর্ণ ছিল। সেগুলো আমার বুকে ভরে দিলেন। এরপর বুক লাগিয়ে দিলেন। অতঃপর আমার হাত ধরে আমাকে নিয়ে আকাশের দিকে উঠতে থাকলেন...” এরপর বাকী হাদিস উল্লেখ করলেন।

এ হাদিস প্রমাণ করে যে, জিব্রাইল (আঃ) সরাসরি ছাদের ছিদ্রপথ দিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে আকাশের দিকে উঠতে থাকেন; দরজা দিয়ে নয়।

আল্লাহই ভাল জানেন।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব