বৃহস্পতিবার 18 রমজান 1445 - 28 মার্চ 2024
বাংলা

কোরবানীর একটি পশু কয়জনের পক্ষ থেকে বৈধ হবে?

প্রশ্ন

আমি, আমার স্ত্রী ও সন্তানেরা সহ পরিবারের সদস্য আটজন। আমাদের জন্য কি একটি কোরবানীর পশু যথেষ্ট হবে? নাকি প্রত্যেকের পক্ষ থেকে একটি পশু কোরবানী দিতে হবে? যদি একটি পশু যথেষ্ট হয় তাহলে আমি ও আমার প্রতিবেশী একই কোরবানীর পশুতে অংশীদার হওয়া বৈধ হবে কি?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

কোরবানীর পশু হিসেবে একটি মেষ ব্যক্তি নিজের পক্ষ থেকে, তার পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে এবং যত মুসলমানের পক্ষ থেকে নিয়ত করে সবার পক্ষ থেকে যথেষ্ট হবে। দলিল হচ্ছে আয়েশা (রাঃ) এর হাদিস, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন একটি মেষ আনার নির্দেশ দিলেন যেটির পায়ের রঙ কালো, পেটের রঙ কালো, চোখের রঙ কালো। নির্দেশ অনুযায়ী কোরবানীর জন্য মেষটি আনা হল। তখন তিনি আয়েশা (রাঃ) কে বললেন: হে আয়েশা! তুমি ছুরিটি নিয়ে আস (অর্থাৎ আমাকে ছুরিটি দাও)। তিনি ছুরিটি নিয়ে এলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছুরিটি এবং মেষটিকেও নিলেন। এরপর মেষটিকে শুইয়ে দিয়ে জবাই করলেন (অর্থাৎ জবাই করার প্রস্তুতি নিলেন)। এরপর বললেন: বিসমিল্লাহ, হে আল্লাহ! এটি মুহাম্মদের পক্ষ থেকে, মুহাম্মদের পরিবারের পক্ষ থেকে এবং উম্মতে মুহাম্মদীর পক্ষ থেকে কবুল করুন। অতঃপর তিনি সে মেষটি কোরবানী করলেন।[সহিহ মুসলিম]

ব্যাকেটের ভেতরের অংশটুকু ব্যাখ্যা; মূল হাদিসের অংশ নয়।

আবু আইয়ুব আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি্ ওয়া সাল্লামের যামানায় একজন ব্যক্তি একটি ছাগল দিয়ে নিজের পক্ষ থেকে ও নিজের পরিবারের পক্ষ থেকে কোরবানী দিত। নিজেরা খেত এবং অন্যদেরকেও খাওয়াত।”।[সুনানে ইবনে মাজাহ ও সুনানে তিরমিযি; তিরমিযি হাদিসটিকে ‘সহিহ’ বলেছেন। আলবানী সহিহুত তিরমিযি গ্রন্থে (১২১৬) হাদিসটিকে ‘সহিহ’ আখ্যায়িত করেছেন]

অতএব, কোন লোক যদি একটি ছাগল কিংবা একটি ভেড়া দিয়ে কোরবানী দেয় তাহলে সেটা তার নিজের পক্ষ থেকে, তার পরিবারের মৃত বা জীবিত যত সদস্যদের পক্ষ থেকে নিয়ত করে সকলের পক্ষ থেকে জায়েয হবে। যদি আমভাবে বা খাসভাবে কোন নিয়ত না করে তাহলে ‘আহলে বাইত’ বা পরিবার বলতে মানুষের ব্যবহারে যাদেরকে বুঝায় কিংবা ভাষাগতভাবে যাদেরকে বুঝায় তারা সকলে এর অন্তর্ভুক্ত হবে। প্রথাগতভাবে ব্যক্তি যাদের ভরণপোষণ করে— স্ত্রী, সন্তান ও আত্মীয়স্বজন তাদেরকে পরিবার বলে। আভিধানিক অর্থে পরিবার বলতে ব্যক্তির সেসব আত্মীয়দেরকে বুঝায় যারা তার নিজের বংশধর, তার পিতার বংশধর, তার দাদার বংশধর কিংবা তার প্রপিতামহের বংশধর।

একটি মেষ দিয়ে যাদের যাদের পক্ষ থেকে কোরবানী করা জায়েয একটি উটের সপ্তমাংশ কিংবা একটি গরুর এক সপ্তমাংশ দিয়ে তাদের সবার পক্ষ থেকে কোরবানী করা জায়েয। তাই, কেউ যদি এক সপ্তমাংশ উট দিয়ে কিংবা এক সপ্তমাংশ গরু দিয়ে তার পক্ষ থেকে, তার পরিবারের পক্ষ থেকে কোরবানী দেয় সেটা জায়েয হবে। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি্ ওয়া সাল্লাম হাদির পশুর ক্ষেত্রে এক সপ্তমাংশ উট ও এক সপ্তমাংশ গরুকে একটি ছাগলের স্থলাভিষিক্ত করেছেন। অনুরূপ বিধান কোরবানীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। যেহেতু এক্ষেত্রে কোরবানী ও হাদির মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।

দুই:

দুই বা ততোধিক ব্যক্তি একটি মেষ ক্রয়ে অংশীদার হয়ে সবার পক্ষ থেকে কোরবানী দেয়া জায়েয নয়। কেননা কুরআন-সুন্নাতে এই মর্মে কিছু উদ্ধৃত হয়নি। অনুরূপভাবে আট বা ততোধিক ব্যক্তি একটি উট কিংবা একটি গরুতে অংশীদার হওয়া জায়েয নেই (তবে সাতজনের একটি উটে কিংবা গরুতে অংশীদার হওয়া জায়েয আছে)। কেননা ইবাদতগুলো তাওকিফিয়্যা (দলিলের সীমায় বিধান সীমাবদ্ধ এমন)। এগুলোর ক্ষেত্রে নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করা যাবে না; সেটা সংখ্যাগত সীমা হোক কিংবা পদ্ধতিগত সীমা হোক। তবে, সওয়াবের ক্ষেত্রে অংশীদার করা যেতে পারে। যেমন সওয়াবের ক্ষেত্রে অগণিত মানুষকে অংশীদার করার কথা উল্লেখ আছে।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব