মঙ্গলবার 7 শাওয়াল 1445 - 16 এপ্রিল 2024
বাংলা

"ক্যাশইউ" কার্ড ব্যবহার করার হুকুম

প্রশ্ন

সম্প্রতি ইন্টারনেটে কেনাকাটার জন্য "ক্যাশইউ" নামে প্রিপেইড কার্ড বেরিয়েছে। এ কার্ড ব্যবহারের পদ্ধতি হচ্ছে: ১. আপনি প্রথমে একাউন্ট খোলার ৫৫ রিয়াল দিয়ে একটি নিবন্ধন কার্ড খরিদ করবেন। ২. এরপর আপনি বিভিন্ন দামের কার্ড খরিদ করে আপনার একাউন্ট রিচার্জ করতে পারবেন। যেমন ধরুন, ১০ ডলারের একটি কার্ড আপনি ৪২ রিয়াল দিয়ে খরিদ করলেন। ৩০ ডলার, ৫০ ডলার থেকে ৩০০ ডলারের কার্ডও আছে। ৩. কার্ডের মেয়াদ এক বছর। এক বছর পর আপনি কার্ডটি ব্যবহার করতে পারবেন না; এমনকি কার্ডে ব্যালেন্স থাকলেও। তবে ১০ ডলার নবায়ন ফি দিলে পারবেন। আরও জানতে ক্যাশইউ কোম্পানীর ওয়েবসাইট www.cashu.com ভিজিট করা যেতে পারে। এ মাসয়ালায় আমাদেরকে ফতোয়া দিন। জাযাকুমুল্লাহু খাইরা।

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

আমাদের কাছে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, এ কার্ডগুলো ক্রয় করা এবং এ কার্ডগুলো ব্যবহার করে কেনাকাটা করা জায়েয। তবে, শর্ত হচ্ছে- এ কার্ডগুলো দিয়ে এমন কিছু খরিদ করা যাবে না যেগুলোর আদানপ্রদান নগদ নগদ হওয়া শর্ত; যেমন- বিভিন্ন মুদ্রা ক্রয় করা, স্বর্ণ ও রৌপ্য ক্রয় করা। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বর্ণ ও রৌপ্য হাতে হাতে খরিদ করার নির্দেশ দিয়েছেন। কাগুজে মুদ্রার হুকুম স্বর্ণ ও রৌপ্যের অনুরূপ। উবাদা বিন সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ, রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য, গমের বিনিময়ে গম, যবের বিনিময়ে যব, খেজুরের বিনিমিয়ে খেজুর ও লবণের বিনিময়ে লবণ সমান সমান পরিমাণ ও হাতে হাতে (নগদ) হতে হবে। যদি প্রকার ভিন্ন হয় তাহলে তোমরা যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে বিক্রি করতে পার; যদি সেটা হাতে হাতে হয়।"[সহিহ মুসলিম (১৫৮৭)]

রাবেতা আলমে ইসলামী-এর অধিভুক্ত 'ফিকাহ একাডেমি' এর সিদ্ধান্তে এসেছে যে:

ক. কাগুজে মুদ্রা একটির বিনিময়ে অপরটি কিংবা স্বর্ণ, রৌপ্য বা অন্য কোন মুদ্রার সাথে বাকীতে লেনদেন করা সম্পূর্ণরূপে নাজায়েয। উদাহরণতঃ সৌদি রিয়াল অন্য কোন মুদ্রার সাথে বেশকম করে নগদ নগদ না হয়ে বাকীতে বিক্রি করা নাজায়েয।

খ. এক জাতীয় কাগুজে মুদ্র্রার লেনদেনে কমবেশ করা নাজায়েয; সেটা বাকীতে হোক কিংবা নগদ নগদ হোক। উদাহরণতঃ কাগুজে মুদ্রায় সৌদি ১০ রিয়াল কাগুজে মুদ্রায় সৌদি ১১ রিয়ালের সাথে বিনিময় করা নাজায়েয।

গ.  কাগুজে মুদ্রা ভিন্ন ভিন্ন জাতের হলে একটির সাথে অপরটির লেনদেন জায়েয; যদি হাতে হাতে হয়। অতএব, সিরিয়ান লিরা বা লেবানিজ লিরা এর সাথে সৌদি রিয়াল কাগুজে মুদ্রায় হোক কিংবা রৌপ্য মুদ্রায় হোক কমবেশ করে বিনিময় করা জায়েয; অনুরূপভাবে আমেরিকান এক ডলারের বিনিময়ে সৌদি ৩ রিয়াল, বা এর চেয়ে কম বা এর চেয়ে বেশি দামে লেনদেন করা জায়েয; যদি সেটা হাতে হাতে (নগদে) হয়। অনুরূপভাবে সৌদি ১ রিয়াল রৌপ্য মুদ্রা সৌদি ৩ রিয়াল কাগুজে মুদ্রা দিয়ে কিংবা এর চেয়ে বেশি বা কম দিয়ে নগদে লেনদেন করা জায়েয। কেননা এ লেনদেন এক জাতের সাথে অন্য জাতের লেনদেন হিসেবে ধর্তব্য হবে। নাম অভিন্ন হওয়াতে কিছু আসে যায় না; যেহেতু প্রত্যেকটির হাকীকত ভিন্ন।[সমাপ্ত]

[মাজলিসুল মাজমাইল ফিকহি লি-রাবিতাতিল আলাম আল-ইসলামী (ফতোয়া নং ৫৯)]

দুই:

ব্যবহার করা ছাড়া কার্ডের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি এটাকে নাজায়েযে পরিণত করবে না। যেহেতু এক্ষেত্রে কার্ডের মালিকের অবহেলা রয়েছে। কেউ গাড়ী বা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে যদি ভাড়াকৃত সময়ের মধ্যে ব্যবহার না করে এটাও সে রকম।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব