আমরা আশা করছি, আপনাদের ওয়েবসাইট Islam Q&A (ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব) কে সাপোর্ট দেয়ার জন্য মুক্তহস্তে দান করবেন; যাতে করে ইনশা আল্লাহ্ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবায় আপনাদের ওয়েবসাইট তার পথ চলা অব্যাহত রাখতে পারে।
আসসালামু আলাইকুম। আমি কিছু পরিভাষার ব্যাপারে জানতে চাই। আশা করব আপনারা সে পরিভাষাগুলো স্পষ্ট করবেন। যেমন কিছু আলোচনাতে শুনি: হাদিসে মারফু, হাদিসে মাকতু?
আলহামদু লিল্লাহ।.
হাদিস বিশারদগণ হাদিসকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে থাকেন। কয়েকটি দিক বিবেচনায় এ বিভাজনটি করা হয়ে থাকে। তেমনি একটি দিক হচ্ছে- বক্তা অনুসারে উক্তি (হাদিস) কে বিভাজন করা। হাদিসবিদগণ বলেন: বক্তা বা উক্তিকারীর দিক বিবেচনা করে হাদিসকে চার ভাগে ভাগ করা যায়।
এক: হাদিসে কুদসি:
যে হাদিস আমাদের নিকট নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সূত্রে তাঁর রব্ব থেকে বর্ণিত হয়েছে। এ হাদিসের ক্ষেত্রে রাবি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর রব্ব থেকে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন অথবা এ ধরনের কোন কথা।
দুই: হাদিসে মারফু
যে কথা, কাজ, অনুমোদন অথবা গুণকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সম্বন্ধিত করা হয়।
তিন: হাদিসে মাওকুফ
যে কথা, কাজ, অনুমোদন অথবা গুণকে সাহাবীর সাথে সম্বন্ধিত করা হয়। অর্থাৎ যে কথা, কাজ সাহাবী হতে প্রকাশিত হয়েছে; নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে নয়।
যেমন- আলী (রাঃ) এর উক্তি: “তুমি তোমার প্রিয় ব্যক্তিকে ভালোবাসার ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিল হও; হতে পারে সে একদিন তোমার দুশমন হয়ে যাবে। তুমি তোমার দুশমনকে ঘৃণা করার ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিল হও; হতে পারে সে একদিন তোমার প্রিয়ব্যক্তি হয়ে যাবে। [এই মাওকুফ হাদিসটি ইমাম বুখারী তাঁর ‘আদাবুল মুফরাদ’ গ্রন্থে সংকলন করেছেন (নং-৪৪৭)]
খতিব বাগদাদি বলেন: “বর্ণনাকারী যে হাদিসকে সাহাবীর সাথে সম্পৃক্ত করেন; সাহাবীকে অতিক্রম করে যায় না।”
ইমাম হাকেম সনদ (সূত্র) পরম্পরা কর্তন না হওয়ার শর্ত করেছেন। তিনি বলেছেন: হাদিসটি সাহাবী থেকে বর্ণনা করা হবে। এতে কোন ইরসাল (শেষের দিকে সূত্রচ্ছেদ) বা ইদাল (দুই বা ততোধিক ব্যক্তির সূত্রচ্ছেদ) থাকতে পারবে না। যখন সূত্র সাহাবী পর্যন্ত পৌঁছবে তখন বলবে: তিনি এই এই বলেছেন অথবা তিনি এই এই করেছেন অথবা তিনি এই এই নির্দেশ দিতেন।
অনেক সময় সাহাবী ছাড়া অন্য কারো কোন উক্তির ক্ষেত্রেও মাওকুফ শব্দটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে বলতে হবে যেমন: এই হাদিসটি অমুক রাবি ‘যুহরি’র মাওকুফ হিসেবে অথবা ‘আতা’র মাওকুফ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এ দুইজনের প্রত্যেকে তাবেঈ অথবা তাবে-তাবেঈ।
চার: হাদিসে মাকতু
যে কথা, কাজ, অনুমোদন অথবা গুণকে তাবেঈর সাথে সম্বন্ধিত করা হয়। এটাকে আছারও বলা হয়। যেমন- মাসরুক ইবনে আজদা থেকে বর্ণিত আছে: “কোন ব্যক্তির আল্লাহভীতি তাঁর ইলম সাব্যস্ত করার জন্য যথেষ্ট। আর কোন ব্যক্তির আত্মম্ভরিতা তার অজ্ঞতা সাব্যস্ত করার জন্য যথেষ্ট।”
ইবনে সালাহ (রহঃ) বলেন: সনদকর্তিত কোন হাদিসকে মুনকাতি না বলে মাকতু বলার উদাহরণ আমি শাফেয়ি (রহঃ), আবুল কাসেম তাবারানী (রহঃ) প্রমুখের বক্তব্যে পেয়েছি।[মুকাদ্দিমাতু ইবনে সালাহ ফি উলুমিল হাদিস, পৃষ্ঠা-২৮]
যে গ্রন্থগুলোতে মাওকুফ ও মাকতু হাদিস বেশি পাওয়া যায় সেগুলো হচ্ছে- মুসান্নাফে ইবনে আবু শায়বা, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক সানআনি, ইমাম তাবারির তাফসিরে তাবারি, ইবনে মুনযির এর গ্রন্থাবলী ইত্যাদি।
বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে হাদিসের প্রকারভেদ আরো বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন: ইবনে হাজারের ‘নুখবাতুল ফিকার” (পৃষ্ঠা-২১), অন্যান্য খুঁটিনাটি বিষয় জানার জন্য পড়ুন সাখাবীর “ফাতহুল মুগিছ” (১/১০৮-১১২), ড. আব্দুল্লাহ আল-জাদি এর “তাহরিরু উলুমিল হাদিস” (১/২৫) এবং ড. মাহমুদ তাহ্হান এর “তাইসিরু মুসতালাহিল হাদিস” (পৃষ্ঠা-৬৭)।
আল্লাহই ভাল জানেন।