আমরা আশা করছি, আপনাদের ওয়েবসাইট Islam Q&A (ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব) কে সাপোর্ট দেয়ার জন্য মুক্তহস্তে দান করবেন; যাতে করে ইনশা আল্লাহ্ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবায় আপনাদের ওয়েবসাইট তার পথ চলা অব্যাহত রাখতে পারে।
আলহামদু লিল্লাহ।.
আলহামদুলিল্লাহ।এক:
প্রথমেই আমরা আল্লাহর দরবারে দুআ করি তিনি যেন, এ দুর্যোগ ও দুর্ভোগ থেকে আপনাদেরকে উদ্ধার করেন। আপনাদের মৃতদের প্রতি রহম করেন, তাদেরকে শহিদ হিসেবে কবুল করে নেন। নেওয়ার অধিকার আল্লাহর, দেওয়ার অধিকারও আল্লাহর। তাঁর কাছে সবকিছুর সুনির্দিষ্ট মেয়াদ রয়েছে। আল্লাহ তাআলা মাখলুকাতের মৃত্যুসময় লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন; নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। যার মৃত্যুসময় উপস্থিত হবে তাকে একটুও কম বা বেশি সময় দেয়া হবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন (ভাবানুবাদ): “আল্লাহ আত্মাগুলোকে হরণ করেন সেগুলোর মৃত্যুর সময় এবং যেগুলো ঘুমের মধ্যে মরেনি সেগুলোরও। অতঃপর যার মৃত্যুর সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে তার আত্মা রেখে দেন। অন্যদেরটা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ছেড়ে দেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।”[সূরা যুমার, আয়াত: ৪২]
শাইখ সা’দী (রহঃ) বলেন:
আল্লাহ অবহিত করেন যে, জাগরণ ও তন্দ্রাকালে, জীবদ্দশায় ও মৃত্যুকালে বান্দার তত্ত্বাবধায়ক একমাত্র তিনিই। আল্লাহ বলেন: “আল্লাহ আত্মাগুলোকে হরণ করেন সেগুলোর মৃত্যুর সময়” এটি হচ্ছে বড় তিরোধান, মৃত্যুর তিরোধান। আল্লাহ আরও বলেন: “যেগুলো ঘুমের মধ্যে মরেনি সেগুলোরও” এটি ছোট মৃত্যু। অর্থাৎ যে আত্মা ঘুমের মধ্যে মরেনি সে আত্মাকেও আল্লাহ হরণ করেন। এরপর এ দুটি আত্মা থেকে “যার মৃত্যুর সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে তার আত্মা রেখে দেন” সেটি এমন আত্মা যে মারা গেছে অথবা ঘুমের মধ্যেই যার মৃত্যু ঘটেছে। আর অপর আত্মাটিকে একটি সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্য পুনরায় প্রেরণ করেন; যেন সে আত্মা তার রিযিক ও বয়স পূর্ণ করে। তাফসিরে সাদী পৃষ্ঠা- ৭২৫ থেকে সমাপ্ত।
দুই:
পক্ষান্তরে আপনার স্বামীর সাথে –আপনাদের মাঝে বৈবাহিক সম্পর্ক সম্পন্ন হয়েছে ধরা হলে- আপনার যে আচরণ বা কসুর অথবা আত্মসম্মানবোধ কেন্দ্রিক অভিমান এগুলোর কোন না কোন কারণ ছিল। পরবর্তীতে আপনাদের মাঝে সমঝোতা হয়েছে, আপনি সম্পর্ক ছিন্ন করার চিন্তা ছেড়ে দিয়েছেন। আপনাদের সম্পর্ক আগের চেয়ে ভাল হয়েছে। সুতরাং এর আগে যা কিছু ঘটেছে সেসব নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করার কোন কারণ নেই। এসব চিন্তা আপনার কোন কাজে আসবে না। বরং আপনার শারীরিক ও মানসিক অশান্তির কারণ হবে। দুঃখিত-ভারাক্রান্ত হওয়া বা কিঞ্চিত কান্নাকাটি করাতে দোষের কিছু নেই। তবে আল্লাহর তাকদিরের ব্যাপারে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করা থেকে সাবধান থাকুন। হাউমাউ করে কান্নাকাটি করা থেকে বিরত থাকুন। আশা করছি এ মুসিবতে আল্লাহ আপনাকে ধৈর্য ধারণ করার তাওফিক দিবেন, আপনাকে এর প্রতিদান দিবেন এবং যা হারিয়েছেন তার চেয়ে ভাল কিছু আপনাকে দিবেন।
আপনি 71236 নং প্রশ্নোত্তরটি দেখতে পারে; সেখানে বিপদ-মুসিবতে মুমিনের করণীয় কী এবং কী বলবে বা কী করবে তা তুলে ধরা হয়েছে।
তিন:
তিনি যে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন সেটার দায় জালেম ও তাগুত বাহিনী ছাড়া অন্য কারো উপর বর্তানো উচিত হবে না। কারণ তারাই তাকে হত্যা করেছে, তার বোনকে হত্যা করেছে। আল্লাহ তাআলা এটাই তাকদির (নির্ধারণ) করে রেখেছেন। তিনি ভেবেছিলেন রাত্রিবেলা গ্রামে ফিরে যাওয়াটা কঠিন হবে না। কোন সন্দেহ নেই যদি তিনি এমন কিছু আশংকা করতেন তাহলে তার কোন বন্ধুর কাছে ঘুমাতেন। অথবা রাতের বেলা আপনাদের বাড়ীতেই থাকতে চাইতেন। অতএব, আপনার অথবা আপনার পরিবারের কোন দোষ নেই। আল্লাহ তাআলা আযলে বা সৃষ্টির পূর্বে যা নির্ধারণ করে রেখেছেন তার ক্ষেত্রে সেটাই ঘটেছে। এটা যে, তার তাকদিরে ছিল এর সমর্থন পাওয়া যায় তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার ফুফাতো ভাই ও তার বোনের আপনাদের বাড়ীতে আগমন। যদি রাত্রিবেলা পরিস্থিতি চলাফেরার উপযুক্ত না হত তাহলে তার ফুফাতো ভাই অথবা তার বোন আপত্তি জানাত এবং তারা গ্রাম থেকে তাকে নিতে আসত না।
অতএব, তাকে অথবা তার পরিবারকে দোষারোপ করার কিছু নেই। আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে দোষারোপ করার কিছু নেই। আল্লাহ যা নির্ধারণ করে রেখেছেন, যা ইচ্ছা করেছেন সেটাই ঘটেছে। আমরা দুআ করি, আল্লাহ তাকে রহম করুন, তাকে ক্ষমা করে দিন। তাকে, তার বোনকে এবং অন্যায়ভাবে নিহত হওয়া সকল মুসলমানকে আল্লাহ শহিদ হিসেবে কবুল করুন। কারণ তিনি নাস্তিক্যবাদী ও বাতেনি চিন্তাধারার অধিকারী বাথ পার্টির বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন। কারণ তিনি তার গাড়ীতে নিহত হয়েছেন; গাড়ীতে মারা যাওয়া ভূমি ধ্বসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ভূমি ধ্বসে মারা গেলে শহিদের সওয়াব পাওয়ার কথা হাদিসে সাব্যস্ত হয়েছে। এ বিষয়ে আরও জানতে 129214 নং প্রশ্নোত্তরটি দেখা যেতে পারে; সেখানে আরও বিস্তারিত বিবরণ আছে।
চার:
জেনে রাখুন, আপনার উপর চার মাস দশদিন ইদ্দত পালন করা ওয়াজিব— এ বিষয়ে আমরা আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। যে নারীর স্বামী মারা গেছেন তার উপর কি কি বিষয় পরিত্যাগ করা অপরিহার্য সেগুলো আমরা 10670 ও 13966 নং প্রশ্নোত্তরে উল্লেখ করেছি। যেমন- প্রয়োজন ছাড়া দিনের বেলায় এবং জরুরত ছাড়া রাতের বেলায় ঘর থেকে হওয়া। সুন্দর পোশাক পরিধান। স্বর্ণ ও অন্য কোন অলংকার পরিধান। সুগন্ধির ব্যবহার; তবে হায়েয ও নিফাস থেকে পবিত্র হওয়ার পর সামান্য ব্যবহার করা যেতে পারে। সুরমা ও মেহেদির ব্যবহার।
আল্লাহই ভাল জানেন।