আমরা আশা করছি, আপনাদের ওয়েবসাইট Islam Q&A (ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব) কে সাপোর্ট দেয়ার জন্য মুক্তহস্তে দান করবেন; যাতে করে ইনশা আল্লাহ্ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবায় আপনাদের ওয়েবসাইট তার পথ চলা অব্যাহত রাখতে পারে।
নামাযের আযান কে দিবে? অর্থাৎ এই দায়িত্ব কার উপর বর্তাবে? এটার জন্য কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি আছে কি?
আলহামদু লিল্লাহ।.
এক:
সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি আযান দেয়া শর্ত নয়। যে কোনো মুসলিম ব্যক্তি যদি নামাযের জন্য আযান দেয় তাহলে সংশ্লিষ্ট স্থানের অধিবাসীদের পক্ষ থেকে আযানের ফরয আদায় হয়ে যাবে। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “তোমাদের মধ্য থেকে একজন যেন আযান দেয়। আর বয়সে সবচেয়ে বড় ব্যক্তি যেন ইমামতি করে।”[সহিহ বুখারী: ৬২৮ ও সহিহ মুসলিম: ৬৭৪]
দুই:
আলেমরা মুয়াজ্জিনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু শর্ত উল্লেখ করেছেন। আর কিছু বিষয় মুস্তাহাব হিসেবে বিবেচনায় রাখা উচিত।
যে সকল শর্ত পূর্ণ হওয়া ছাড়া আযান দেয়া সঠিক হবে না সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: মুয়াজ্জিন মুসলিম, সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী ও পুরুষ হওয়া।
ইবনে কুদামা রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “মুসলিম, আকলসম্পন্ন ও পুরুষের পক্ষ থেকে ছাড়া আযান দেয়া সঠিক হবে না। কাফের ও পাগলের আযান দেয়া সঠিক নয়। কারণ তারা ইবাদত পালন করার যোগ্য নয়। নারীর আযান দেয়াও শুদ্ধ হিসেবে গণ্য নয়। কারণ নারীর জন্য আযান দেওয়া শরিয়তে বৈধ নয়। ... উক্ত বিষয়ে কোনো মতভেদ আমাদের জানা নেই।”[আল-মুগনী (১/২৪৯)]
আর মুয়াজ্জিনের মাঝে যে সকল বৈশিষ্ট্য থাকা উত্তম সেগুলো হলো: সুকণ্ঠের অধিকারী, বিশ্বস্ত, সৎ, ওয়াক্তের ব্যাপারে বিজ্ঞ ও প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া।
ইবনে কুদামা রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “মুয়াজ্জিন সৎ, বিশ্বস্ত ও প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া মুস্তাহাব। কারণ নামায-রোযার ক্ষেত্রে সে নির্ভরযোগ্য। যদি মুয়াজ্জিন নির্ভরযোগ্য না হয় তাহলে সে আযান দিয়ে মানুষকে ধোঁকায় ফেলে দেয়া থেকে নিরাপদ নয়। আর মুয়াজ্জিন যেহেতু উঁচু স্থান থেকে আযান দেয় সেহেতু সে মানুষের গোপন অঙ্গগুলো দেখে ফেলা থেকেও নিরাপদ নয়।”[আল-মুগনী (১/২৪৯)]
আল-মাউসুয়াতুল ফিকহিয়্যা (২/৩৬৮)-তে আছে:
“মুয়াজ্জিনের মধ্যে যে বৈশিষ্ট্যসমূহ থাকা মুস্তাহাব সেগুলো হলো: তিনি সৎ হবেন। কারণ ওয়াক্তের ক্ষেত্রে তাকে আমানতদার নিযুক্ত করা হয়েছে। আর যাতে করে মানুষের গোপন অঙ্গগুলোর দিকে নজর দেওয়া থেকে তার উপর আস্থা রাখা যায়। ফাসেক ব্যক্তি আযান দিলে সঠিক হবে; তবে সেটা মাকরুহ...। মুয়াজ্জিন সুকণ্ঠের অধিকারী হওয়া মুস্তাহাব। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্দুল্লাহ ইবনে যাইদকে বলেন, “তুমি বিলালের সাথে উঠ এবং তুমি যা (স্বপ্নে) দেখেছ সেটা তাকে পড়ে শোনাও। কারণ সে তোমার চেয়ে সুকণ্ঠের অধিকারী।” আর কণ্ঠস্বর উঁচু হলে আযান ভালোভাবে পৌঁছে দেওয়া যায়...। মুয়াজ্জিনের জন্য নামাযের ওয়াক্ত সম্পর্কে জ্ঞানী হওয়া মুস্তাহাব; যাতে করে ওয়াক্তের ব্যাপারে তিনি সতর্ক থাকে এবং ওয়াক্তের শুরুতেই আযান দেয়। এমনকি অন্ধ ব্যক্তির চেয়ে দৃষ্টিশক্তির অধিকারী ব্যক্তি উত্তম। কেননা অন্ধ ব্যক্তি ওয়াক্ত প্রবেশ করেছে কিনা সেটা জানতে পারে না।”[ঈষৎ পরিমার্জিত ও সংক্ষেপিত]
এ বিষয়টি লক্ষ্য রাখা আবশ্যক যে, কোনো মসজিদে যদি নির্ধারিত মুয়াজ্জিন থাকে তখন অন্য কারো জন্য সেই মুয়াজ্জিনের আযান দেওয়ার অধিকারে হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই কিংবা বাড়াবাড়ি করে তার অনুমতি ছাড়া তার বদলে আযান দেওয়ারও অধিকার নেই।
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।