আমরা আশা করছি, আপনাদের ওয়েবসাইট Islam Q&A (ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব) কে সাপোর্ট দেয়ার জন্য মুক্তহস্তে দান করবেন; যাতে করে ইনশা আল্লাহ্ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবায় আপনাদের ওয়েবসাইট তার পথ চলা অব্যাহত রাখতে পারে।
স্যালাইন, ভিটামিন ইনজেকশন, শিরাতে পুশকৃত ইনজেকশন ও সাপোজিটরি ব্যবহারে কি রোযা ভাঙ্গবে? আমি অগ্রগণ্য অভিমতটি জানতে চাই।
আলহামদু লিল্লাহ।.
এক:
যা কিছু পানাহার, কিংবা পানাহারের স্থলাভিষিক্ত সেটাই রোযা ভঙ্গকারীর অন্তর্ভুক্ত। ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির আলেমগণ বলেন:
“রোযা ভঙ্গকারী বিষয় অনেক। এর মধ্যে রয়েছে- ইচ্ছাকৃত পানাহার। পানাহারের অধীনে পড়বে প্রত্যেক খাদ্য বা পানি যা পেটে প্রবেশ করে। রাইস টউবের মাধ্যমে নাক দিয়ে যা পেটে পৌঁছানো হয় সেটাও এর অধিভুক্ত হবে। অনুরূপভাবে খাদ্যের বিকল্প ইনজেকশনও এর অধিভুক্ত হবে।”[ফাতওয়াল লাজনা আদ-দায়িমা (৯/১৭৮)]
শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:
“রোযা ভঙ্গকারী বিষয়গুলো হচ্ছে- খাওয়া ও পান করা: সে খাদ্য বা পানীয় যে শ্রেণীরই হোক না কেন। খাওয়া ও পান করার অধিভুক্ত হবে ইনজেকশনসমূহ। অর্থাৎ ঐ সকল ইনজেকশনসমূহ যেগুলো শরীরে পুষ্টি যোগায় কিংবা খাদ্যের মাধ্যমে শরীরে যে শক্তি অর্জিত হয় এসব ইনজেকশনের মাধ্যমেও একই শক্তি অর্জিত হয়। তাই এগুলো রোযা ভঙ্গ করবে...।”[মাজমুউ ফাতাওয়া ও রাসায়িলিল উছাইমীন (১৯/২১)]
তিনি আরও বলেন:
আলেমগণ মুফাত্তিরাত বা রোযা ভঙ্গকারী বিষয়গুলোর অধিভুক্ত করেছেন ঐ সব বিষয়কে যেগুলো পানাহারের পর্যায়ে পড়ে। যেমন- পুষ্টিদায়ক ইনজেকশন। যে সকল ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীর চাঙ্গা হয় কিংবা রোগ মুক্ত হয় এটি সেসব ইনজেকশন নয়। বরং এটি হচ্ছে পুষ্টিদায়ক ইনজেকশন; যা পানাহারের স্থলাভিষিক্ত। এ আলোচনার ভিত্তিতে যে সব ইনজেকশন পানাহারের স্থলাভিষিক্ত নয় সেগুলো রোযা ভঙ্গ করবে না। চাই সে ইনজেকশন রগে দেয়া হোক কিংবা রানে দেয়া হোক কিংবা অন্য কোন স্থান দিয়ে দেয়া হোক।[শাইখ উছাইমীনের ‘মাজমুউ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়িলিল উছাইমীন (১৯/১৯৯)]
দুই:
কিছু কিছু রোগীকে রগ দিয়ে যে স্যালাইন পুশ করা হয় এটি রোযা ভঙ্গ করবে। কেননা এটি খাদ্য দ্রব্যের অন্তর্ভুক্ত। (কারণ এর মধ্যে লবণ ও তরল রয়েছে) যা পেটে প্রবেশ করবে এবং এর দ্বারা শরীর উপকৃত হবে।
তিন:
ভিটামিন ইনজেকশন ও রগে পুশ করা ইনজেকশন:
যদি এ সকল ইনজেকশন শরীরকে চাঙ্গা করার জন্য, ব্যথ্যা দূর করার জন্য, কিংবা লাঘব করার জন্য, জ্বর কমানোর জন্য গ্রহণ করা হয় এবং এটি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন না হয় তাহলে এসব ইনজেকশনের কারণে রোযা ভঙ্গ হবে না।
পক্ষান্তরে, যদি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হয় তাহলে এটি রোযা নষ্ট করবে। কারণ এটি খাবার ও পানীয়ের স্থলাভিষিক্ত; তাই এটাকে খাবার ও পানীয়ের হুকুম দেয়া হবে।
ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটি বলেন: চিকিৎসার উদ্দেশ্যে রোযাদারের জন্য রমযানের দিনের বেলায় পেশীতে ইনজেকশন দেয়া জায়েয আছে। কিন্তু, রোযাদারের জন্য খাদ্য-ইনজেকশন গ্রহণ করা নাজায়েয। কেননা ইনজেকশন গ্রহণ করা খাবার-দাবার গ্রহণ করার ন্যায়। তাই এ ধরণের ইনজেকশন গ্রহণ করা রমযান মাসে রোযা ভাঙ্গার একটা একটা কৌশল। যদি পেশীতে ও রগের ইনজেকশন রাতের বেলায় দেয়া যায় তাহলে সেটা উত্তম।[স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র থেকে (১০/২৫২) সমাপ্ত]
চার:
সাপোজিটরি রোযা ভাঙ্গে না। কারণ এটি চিকিৎসার জন্য গ্রহণ করা হয়। এটি খাবার ও পানীয় এর মধ্যে পড়ে না।
শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:
রোযাদার ব্যক্তি অসুস্থ হলে গুহ্যদ্বার দিয়ে প্রবেশকৃত সাপোজিটরি ব্যবহারে কোন গুনাহ্ নেই। কেননা এটি পানাহার নয় এবং পানাহারের স্থলাভিষিক্তও নয়। শরিয়ত প্রণেতা আমাদের উপর শুধু পানাহার করা হারাম করেছেন। অতএব, যা কিছু পানাহারের স্থলাভিষিক্ত সেটাকে পানাহারের হুকুম দেয়া হবে। আর যা কিছু এরকম নয় সেগুলো শব্দগত কিংবা অর্থগতভাবে পানাহারের অধীনে পড়বে না। ফলে সেগুলোর জন্য পানাহারের হুকুমও সাব্যস্ত হবে না।[ফাতাওয়া ওয়া রাসায়িলিল উছাইমীন (১৯/২০৪]
আরও জানতে দেখুন: 37749 নং ও 38023 নং প্রশ্নোত্তর।
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।