আমরা আশা করছি, আপনাদের ওয়েবসাইট Islam Q&A (ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব) কে সাপোর্ট দেয়ার জন্য মুক্তহস্তে দান করবেন; যাতে করে ইনশা আল্লাহ্ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবায় আপনাদের ওয়েবসাইট তার পথ চলা অব্যাহত রাখতে পারে।
আমরা জেনেছি যে, ঘরের অভ্যন্তরে ও ঘরের বাহিরে কিছু স্থানে আমাদেরকে অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু আমি কি আপনাদের কাছে এ স্থানগুলোর ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু পাব। উদাহরণতঃ রান্নাঘরে প্রবেশ করা, ড্রয়িং রুমে আসা কিংবা ঘরে প্রবেশ করা। কারণ আমি আমার ছাত্রীদের কাছ থেকে এ প্রশ্নগুলোর মুখোমুখি হয়েছি? আমরা যে বলি: ‘অমুকের প্রশংসা’ এ কথা বলার হুকুম কি?
আলহামদু লিল্লাহ।.
এক:
আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের ঘর ছাড়া অন্য কারো ঘরে এর অধিবাসীদের থেকে অনুমতি নেয়া ও তাদেরকে সালাম দেয়ার পূর্বে প্রবেশ করো না। এটা তোমাদের জন্য উত্তম। আশা করা যায় তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে।”[সূরা নূর, আয়াত: ২৭]
শাইখ সা’দী বলেন: “বারী তাআলা তাঁর মুমিন বান্দাদেরকে নিজেদের ঘর ছাড়া অন্যদের ঘরে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ না করার দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। কারণ অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করার অনেক অপকারিতা রয়েছে। এ ধরণের কিছু অপকারিতার কথা রাসূল সাল্লাল্লাহু্ আলাইহি ওয়া সাল্লাম উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন: ‘অনুমতি নেয়ার বিধান দেয়া হয়েছে দৃষ্টির কারণে।’ অনুমতি নেয়ায় ব্যত্যয় ঘটলে ঘরের অভ্যন্তরে আচ্ছাদিত রাখা বাঞ্চনীয় এমন কিছুর উপর দৃষ্টি পড়ে যেতে পারে। কারণ ঘর মানুষের জন্য ঘরের ভেতরে যা আছে সেটার জন্য আচ্ছাদন; যেভাবে পোশাক মানুষের দেহের বিশেষ অংশের জন্য আচ্ছাদন।
এর অপকারিতার মধ্যে আরও রয়েছে: অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করলে এটি প্রবেশকারীর প্রতি সন্দেহ তৈরী করে, প্রবেশকারীকে চুরি বা এ জাতীয় খারাপ কিছুর অপবাদে ফেলে দেয়। কেননা গোপনে প্রবেশ করা খারাপের আলামত বহন করে। আল্লাহ্ তাআলা মুমিনদেরকে অন্যদের ঘরে পরিচয় না দিয়ে তথা অনুমতি না নিয়ে প্রবেশ করতে বারণ করেছেন। অনুমতি নেয়াকে পরিচয় দেয়া হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা অনুমতি নেয়ার মাধ্যমে পরিচিতি লাভ হয়; পরিচয় না থাকলে ভয় তৈরী হয়।
‘তাদেরকে সালাম দেয়া’: সালাম দেয়ার পদ্ধতি হাদিসে এভাবে উদ্ধৃত হয়েছে: ‘আসসালামু আলাইকুম; আমি কি প্রবেশ করতে পারি?’
‘এটা’: অর্থাৎ এই অনুমতি গ্রহণ। ‘তোমাদের জন্য উত্তম। আশা করা যায় তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে’: যেহেতু এর মধ্যে অনেকগুলো কল্যাণ নিহিত রয়েছে এবং এটি আবশ্যকীয় উত্তম আখলাকের অন্তর্ভুক্ত। যদি অনুমতি দেয় তাহলে প্রবেশ করবে।”[তাফসিরুস সা’দী (পৃষ্ঠা-৫৬৫) থেকে সমাপ্ত]
দুই:
অনুমতি নেয়ার স্থানগুলোর বিস্তারিত বিবরণ ‘আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা”-র (৩/১৪৫) ও তদপরবর্তীতে আলোচিত হয়েছে। আমরা সেটাকে সংক্ষেপ করে আরেকটু পরিস্কারভাবে নিম্নোক্ত পয়েন্টে তুলে ধরব:
১। কেউ কোন ঘরে প্রবেশ করতে চাইলে সেই ঘর হয়তো তার নিজের ঘর হবে; কিংবা অন্য কারো ঘর হবে। যদি নিজের ঘর হয় তাহলে হয়তো ঘরটি খালি হবে; তার সাথে আর কেউ সেখানে বাস করে না কিংবা সেখানে তার স্ত্রী বাস করে; তার সাথে আর কেউ নেই। কিংবা স্ত্রীর সাথে স্বামীর কোন মাহরাম যেমন- বোন, মেয়ে বা মা এমন কেউ থাকে।
যদি ঘরটি নিজের হয় এবং সাথে কেউ না থাকে তাহলে অনুমতি না নিয়েই ঘরে প্রবেশ করবে। কেননা অনুমতি দেয়ার মালিক তো সে নিজেই। নিজে নিজের কাছে অনুমতি চাওয়াটা একটি অনর্থক কাজ; ইসলামী শরিয়া অনর্থক কিছু থেকে পবিত্র।
২। যদি ঘরে কেবলমাত্র তার স্ত্রী থাকে, তার সাথে আর কেউ না থাকে; তাহলে ঘরে প্রবেশ করার জন্য অনুমতি নেয়া আবশ্যক নয়। কেননা তার জন্য স্ত্রীর সমস্ত শরীর দেখা জায়েয। তবে গলা খাঁকারি দেওয়া ও জুতার শব্দের মাধ্যমে ঘরে প্রবেশের জানান দেয়া মুস্তাহাব। কেননা হতে পারে স্ত্রী এমন কোন অবস্থায় আছে; যে অবস্থায় স্বামী তাকে দেখুক সেটা স্ত্রী পছন্দ করে না।
৩। আর যদি ঘরে তার অন্য কোন মাহরাম থাকে; যেমন তার মা, বোন বা এমন অন্য কোন পুরুষ বা নারী, যাদেরকে উলঙ্গ দেখা তার জন্য সঙ্গত নয়; সেক্ষেত্রে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করা বৈধ নয়। কিছু অবস্থা আছে ব্যাখ্যাসাপেক্ষ।
৪। আর যদি ঘরটি অন্য কারো হয়; তাহলে যে ব্যক্তি সেই ঘরে প্রবেশ করতে চায় তার উপর অনুমতি নেয়া আবশ্যক। অনুমতি নেয়ার পূর্বে প্রবেশ করা সর্বসম্মতিক্রমে বৈধ নয়; চাই ঘরের দরজা খোলা থাকুক কিংবা বন্ধ থাকুক।
ঘরে প্রবেশের অনুমতি নেয়ার আবশ্যকতা থেকে কিছু ব্যতিক্রম অবস্থা নিম্নরূপ:
- কেউ থাকে না এমন কোন ঘরের মধ্যে যদি কোন মানুষের কোন প্রয়োজন থাকে; তাহলে সেই ঘরগুলোতে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করা জায়েয আছে। এটি এ ধরণের ঘরগুলোতে প্রবেশ করার সাধারণ অনুমতির ভিত্তিতে। তবে এই ঘরগুলো নির্দিষ্ট করার ক্ষেত্রে মতভেদ রয়েছে।
- অনুরূপভাবে অনুমতি না নেয়ার মধ্যে যদি কোন প্রাণ বাঁচানো কিংবা কোন সম্পদ রক্ষা করার ইস্যু থাকে। এমন হয় যে, অনুমতির জন্য অপেক্ষা করতে গেলে সেই প্রাণ ধ্বংস হয়ে যাবে ও সেই সম্পদ নষ্ট হয়ে যাবে।
৫। মূল বিধান হলো: অন্যের মালিকানায় কিংবা অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করা জায়েয নেই— শরিয়তের অনুমতি কিংবা সত্ত্বাধিকারীর অনুমতি ছাড়া। অনুমতি থাকলে সেটা সীমালঙ্ঘন হবে না। তাই অন্যের খাবার খাওয়া জায়েয নয়— মালিকের অনুমতি ছাড়া কিংবা জরুরী পরিস্থিতি ছাড়া। তেমনিভাবে অন্যের ঘরে তার অনুমতি ছাড়া থাকা জায়েয নয়।
৬। অধীনস্তের তার অধিকর্তা থেকে অনুমতি নেয়া। এই মাসয়ালা প্রচলিত প্রথার উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ উদাহরণস্বরূপ যদি প্রথা এমন হয় যে, শিক্ষক অনুমতি ছাড়া ছাত্রদের প্রবেশ করাকে গ্রাহ্য করেন না; তাহলে ছাত্রদের উপর অনুমতি নেয়া আবশ্যক। কেননা কর্তৃত্বগুলো দেয়া হয়েছে স্বার্থগুলোকে সুরক্ষা ও সংরক্ষণের জন্য। যিনি কর্তৃত্বের মালিক তার কর্তৃত্বের পরিধিতে তার থেকে অনুমতি চাওয়া আবশ্যকীয়। যাতে করে বিষয়গুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় এবং বিশৃঙ্খলা না হয়। এই বিষয়টিতে প্রশস্ততা রয়েছে।
৭। মেহমানের উচিত মেজবানের ঘর থেকে প্রস্থানের আগে অনুমতি নেয়া।
৮। যদি কোন ব্যক্তি দুই ব্যক্তির মাঝখানে বসতে চায় তাহলে অনুমতি নেয়া আবশ্যক।
৯। যদি কেউ কোন বই দেখতে চায়; যে বইয়ের ভেতরে অন্যের খাস কিছু আছে; তাহলে বইটি দেখার আগে অনুমতি নেয়া আবশ্যক।
তিন:
কিছু কিছু কারণে অনুমতি নেয়ার বিধান মওকুফ হয়ে যায়:
১. অনুমতি নেয়া অসম্ভব হলে: কোন কারণে অনুমতি নেয়া অসম্ভব হলে অনুমতি নেয়া মওকুফ হবে; যেমন অনুমতিদাতার মৃত্যু, কিংবা দূরবর্তী কোথাও ভ্রমণ কিংবা তাকে কারো সাথে সাক্ষাৎ করা থেকে আটক করে রাখা এবং তিনি ভ্রমণ থেকে ফিরে আসা কিংবা আটকাবস্থা থেকে বের হওয়া পর্যন্ত হস্তক্ষেপটিকে দেরী করানো না যায়।
২. ক্ষতি প্রতিহত করা: যদি অনুমতি নেয়ার মধ্যে ক্ষতি নিহিত থাকে; তাহলে অনুমতি নেয়ার বিধান মওকুফ হয়ে যাবে। এ কারণে কোন গচ্ছিত জিনিস (আমানত) নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা হলে সেটি অনুমতি না নিয়ে বিক্রি করে দেয়া জায়েয এবং কোন ঘরে প্রবেশ করার মাধ্যমে যদি কোন অপরাধ সংঘটনকে ঠেকানো যায় সেক্ষেত্রে অনুমতি না নিয়ে ঘরে প্রবেশ করা জায়েয।
৩। অনুমতি নিয়ে যে অধিকার আদায় করা সম্ভবপর নয়: হকদারের উপর অনুমতি নেয়ার বিধান মওকুফ হয়ে যাবে যদি অনুমতি নিতে গেলে তার হক ছুটে যায়। এ কারণে যদি কোন স্বামী নিজের স্ত্রীকে প্রাপ্য ভরণপোষণ না দেয় তাহলে স্ত্রীর জন্য স্বামীর সম্পদ থেকে প্রচলিত প্রথায় যতটুকু তার নিজের ও সন্তানের জন্য যথেষ্ট ততটুকু অনুমতি ছাড়া গ্রহণ করা জায়েয।
অনুমতি ও অনুমতির আদবগুলো সম্পর্কে জানতে দেখুন:
চার:
অমুকের প্রশংসা অর্থাৎ সেই ব্যক্তির কোন ভাল কাজ বা ভালো গুণের প্রশংসা করা; এটি জায়েয। যখন আপনি কারো গুণাবলীর প্রশংসা করেন তখন এভাবে বলা হয়: حمدت فلانًا أحمده (আমি অমুকের প্রশংসা করলাম, প্রশংসা করছি)।
হাদিসে এসেছে: “যে ব্যক্তি মানুষের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না; সে আল্লাহ্র কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।”[মুসনাদে আহমাদ (৭৯৩৯)]
আর যে প্রশংসা আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো জন্য করা নাজায়েয সেটি হলো: নিঃশর্ত প্রশংসা। আরও জানতে দেখুন: 146025 নং প্রশ্নোত্তর।
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।