আমরা আশা করছি, আপনাদের ওয়েবসাইট Islam Q&A (ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব) কে সাপোর্ট দেয়ার জন্য মুক্তহস্তে দান করবেন; যাতে করে ইনশা আল্লাহ্ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবায় আপনাদের ওয়েবসাইট তার পথ চলা অব্যাহত রাখতে পারে।
যে ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ এমন একটি কর্মে লিপ্ত হয়েছে; তবে সে জানত না যে, এই নিষিদ্ধ কর্ম করার কারণে তার উপরে কী ধরণের কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে?
আলহামদু লিল্লাহ।.
এখানে আমরা এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই যে, অনেক হজ্জ ও উমরা পালনেচ্ছু ব্যক্তি এ ইবাদতের বিধি-বিধান জানেন না। এর ফলে তারা ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ বিষয়াবলীতে লিপ্ত হন কিংবা ইবাদতটি অনাকাঙ্ক্ষিত পদ্ধতিতে আদায় করেন। আপনি দেখবেন যে, তাদের কেউ একজন অনেক অর্থ খরচ করেছে; বিশেষতঃ সে যদি দূরবর্তী কোন দেশ থেকে এসে থাকে; এরপর সে তার সওয়াবটা নষ্ট করে দেয় কিংবা সওয়াবে ঘাটতি করে; তার উপর অপরিহার্য বিধিবিধান না জানার কারণে।
তাই এ যে ব্যক্তি হজ্জ-উমরা আদায় করতে চায় তার উপর ওয়াজিব হল আমলটা শুরু করার আগেই এর বিধিবিধান শিখে নেয়া। আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "প্রত্যেক মুসলিমের উপর ইলম অর্জন করা ফরয"।[সুনানে ইবনে মাজাহ ও অন্যান্য; আলবানী তার 'তাখরিজু মুশকিলাতুল ফাকর' গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন] ইমাম আহমাদ বলেন: হাদিসের মর্ম হল— যে ইলম তার প্রয়োজন; যেমন ওযু, নামায, যাকাত (যদি সে সম্পদশালী হয়), হজ্জ ইত্যাদি; সে ইলম অর্জন করা তার জন্য আবশ্যকীয়।[ইবনে আব্দুল বার রচিত 'জামেউ বায়ানিল ইলম' (১/৫২)]
হাসান বিন শাক্বিক বলেন: আমি আব্দুল্লাহ্ ইবনুল মুবারককে জিজ্ঞেস করেছি: মানুষের ওপর কোন ইলম শিক্ষা করা ওয়াজিব? তিনি বলেন: কোন ব্যক্তি ইলম ছাড়া কোন আমল পালন করার প্রতি অগ্রসর হবে না। জিজ্ঞেস করে শিখে নিবে। এতটুকু ইলম শেখা মানুষের উপর ওয়াজিব।[বাগদাদীর রচিত 'আল-ফাক্বীহ ওয়াল মুতাকাফ্কিহ' (পৃষ্ঠা-৪৫)]
এ কারণে ইমাম বুখারী তাঁর সহিহ গ্রন্থে একটি পরিচ্ছেদের শিরোনাম দিয়েছেন এভাবে: باب العلم قبل القول والعمل (কথা ও কাজের আগে ইলম অর্জন)। তবে তার মানে এটা নয় যে, প্রত্যেক ব্যক্তিকে হজ্জ বিষয়ক একটি বই মুখস্ত করতে হবে। বরং প্রত্যেক মুসলিমের উপর ওয়াজিব হল তার অবস্থার সাথে যে বিধানগুলো মিলে সেগুলো নিজের যোগ্যতা থাকলে নিজে শিখে নেয়া কিংবা আলেমদেরকে জিজ্ঞেস করে জেনে নেয়া কিংবা এমন কারো সঙ্গে থাকা যিনি তাকে বিধিবিধানগুলো জানাতে পারবেন এবং যখনই প্রয়োজন হবে তখনই তাকে ওয়াজিব বিধানগুলো জানিয়ে দিবেন।
ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ বিষয়াবলী ইতিপূর্বে 11356 নং প্রশ্নোত্তরে আলোচিত হয়েছে।
কিন্তু, যে ব্যক্তি কোন একটি নিষিদ্ধ বিষয়ে লিপ্ত হয়ে গেছে; তবে সে জানত না যে, আল্লাহ্ তার উপর এতে লিপ্ত হওয়া হারাম করেছেন; তার উপর কোন কিছু বর্তাবে না। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: "আর এ ব্যাপারে তোমরা কোন অনিচ্ছাকৃত ভুল করলে তোমাদের কোন অপরাধ নেই; কিন্তু তোমাদের অন্তর যা স্বেচ্ছায় করেছে (তা অপরাধ), আর আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।"[সূরা আহযাব, আয়াত: ৫]
কিন্তু, সে ব্যক্তি যদি জানে যে, যে কাজটি সে করেছে সেটি ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ, ইহরাম অবস্থায় করা হারাম; কিন্তু সে ধারণা করেনি যে, এ কাজের কারণে এতসব বিধিবিধান আরোপিত হবে; এর সম্পর্কে শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন: "এটি কোন ওজর নয়। কেননা ওজর হচ্ছে— ব্যক্তি বিধানটি না-জানা এবং না জানা যে, এটি হারাম। সে নিষিদ্ধ কর্মে লিপ্ত হওয়ার করার কারণে কী ঘটবে সেটা না-জানা কোন ওজর নয়। তাই কোন বিবাহিত, বালেগ ও বুদ্ধিসম্পন্ন পুরুষ যদি জানে যে, ব্যভিচার করা হারাম— তার ব্যাপারে إحصان তথা বিবাহিত সাব্যস্ত হওয়ার শর্তাবলী পূর্ণতা পেয়েছে এবং তাকে রজম করা তথা পাথর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব। যদি বলে, আমি জানতাম না যে, এর শাস্তি পাথর নিক্ষেপে হত্যা। যদি আমি জানতাম এর শাস্তি পাথর নিক্ষেপ তাহলে আমি এটা করতাম না। তখন আমরা তাকে বলব: এটা কোন ওজর নয়; আপনাকে রজম করা ওয়াজিব; এমনকি আপনি যদি ব্যভিচারের শাস্তি আদৌ না জানেন তবুও। এ কারণে যে ব্যক্তি রমযানের দিনের বেলায় স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হয়ে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে ফতোয়া জিজ্ঞেস করতে এসেছিল যে, তার উপর কী ওয়াজিব; তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার উপর কাফ্ফারা আবশ্যক করেন; যদিও সহবাসকালে সে জানত না যে, তার উপর কী আবশ্যক হবে। এতে প্রমাণিত হয় যে, যদি কোন ব্যক্তি পাপে লিপ্ত হওয়ার স্পর্ধা করে এবং আল্লাহ্র সীমারেখা লঙ্ঘন করে তার উপর উক্ত পাপের প্রতিক্রিয়াগুলো আরোপিত হবে; এমনকি সে যদি উক্ত পাপ করার সময় এর প্রতিক্রিয়াগুলো সম্পর্কে না জানে তবুও।[আল-ফাতাওয়া, ২২/১৭৩-১৭৪)]