আমরা আশা করছি, আপনাদের ওয়েবসাইট Islam Q&A (ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব) কে সাপোর্ট দেয়ার জন্য মুক্তহস্তে দান করবেন; যাতে করে ইনশা আল্লাহ্ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবায় আপনাদের ওয়েবসাইট তার পথ চলা অব্যাহত রাখতে পারে।
সিয়ামের আয়াতে উল্লেখিত ফিদিয়া এর পরিমাণ কতটুকু?
আলহামদু লিল্লাহ।.
এক :
যে ব্যক্তি রমজান মাস পেলেন কিন্তু তিনি সিয়াম পালনে সক্ষম নয়- অতিশয় বৃদ্ধ হওয়ার কারণে অথবা এমন অসুস্থ হওয়ার কারণে যার আরোগ্য লাভের আশা করা যায় না,তার উপর সিয়াম পালনফরজনয়। তিনি রোযা ভঙ্গ করবেন এবং প্রতিদিনের বদলে একজন মিসকীনকে খাওয়াবেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন :
“হে মুমিনগণ, তোমাদের উপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর। নির্দিষ্ট কয়েক দিন। তবে তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ থাকবে, কিংবা সফরে থাকবে, তাহলে অন্যান্য দিনে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আর যাদের জন্য তা কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য ফিদিয়া তথা একজন দরিদ্রকে খাবার প্রদান করা। অতএব যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় অতিরিক্ত সৎকাজ করবে, তা তার জন্য কল্যাণকর হবে। আর সিয়াম পালন তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জানতে। [সূরা বাক্বারাহ, ২: ১৮৩-১৮৪]
ইমাম বুখারী (৪৫০৫) ইবনে আব্বাস হতে বর্ণনা করেছেন যে তিনি বলেছেন: “এ আয়াতটি মানসুখ (রহিত)নয়,বরং আয়াতটি অতি বৃদ্ধ নর ও নারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য- যারা রোযা পালনে অক্ষম। তারা প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাওয়াবেন।”
ইবনে ক্বুদামাহ “আলমুগনী”গ্রন্থে (৪/৩৯৬)বলেছেন:
“অতিশয় বৃদ্ধ নর ও নারীর জন্য রোযা পালন যদি কঠিন ও কষ্টসাধ্য হয় তবে তাঁরা রোযা পালন না করে প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাওয়াবেন। তাঁরা যদি মিসকীন খাওয়াতেও অক্ষম হন তবে তাদের উপর কোন কিছুবর্তাবে না।
(لايُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْساًإِلا وُسْعَهَا ) [ 2 البقرة: 286]
“আল্লাহ কারো উপর তার সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা চাপান না।”[সূরা বাক্বারাহ, ২ :২৮৬]
আর যে রোগীর আরোগ্য লাভের আশা করা যায় না,সেও রোযা ভঙ্গ করবে এবং প্রতিদিনের বদলে একজন মিসকীনকে খাওয়াবে।কারণ সে রোগীও বৃদ্ধ লোকের পর্যায়ভুক্ত।”সংক্ষিপ্তসার সমাপ্ত।
“আলমাওসূআহ আলফিক্বহিয়্যাহ”(৫/১১৭)তে বলা হয়েছে:
“হানাফী,শাফেয়ী ও হাম্বলী মাজহাবের আলেমগণ এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন যে, ফিদিয়া তখনই আদায় করা যাবে,যখন কাযা আদায় করতে পারার ব্যাপারে নিরাশা দেখা দিবে। এই নিরাশা হতে পারে বার্ধক্যের কারণে, যার ফলে ব্যক্তি রোযা রাখার সক্ষমতা রাখেন না।অথবা এমন কোন রোগের কারণে যে রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করা দুরূহ। যেহেতু আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
( وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ ) [ 2 البقرة: 184]
“আর যাদের জন্য তা কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য ফিদিয়া তথা একজন দরিদ্রকে খাবার প্রদান করা।”[সূরা বাক্বারাহ, ২:১৮৪]এর অর্থ হচ্ছে- যাদের জন্য সিয়াম পালন কষ্টসাধ্য।”সমাপ্ত ।
আর শাইখ ইবনে উছাইমীন “ফাতাওয়াস্ সিয়াম” গ্রন্থে (পৃঃ ১১১) বলেছেন : “আমাদের জানা উচিত যে রোগী দুই প্রকার :
প্রথম প্রকার :
এমন রোগী যার রোগমুক্তির আশা করা যায়।যেমন-সাময়িক রোগ যা থেকে আরোগ্য লাভের আশা করা যায়।এ শ্রেণীর রোগীর হুকুম হল যেমনটি আল্লাহ তাআলা বলেছেন :
(فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ)
“তবে তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ হবে, কিংবা সফরে থাকবে, তাহলে অন্য দিনে সংখ্যা পূরণ করে নেবে।”[সূরা বাক্বারাহ, ২:১৮৪]
এ শ্রেণীর রোগী সুস্থতার জন্য অপেক্ষা করবে। এরপর রোযা পালন করবে।যদি এমন হয় যে তার রোগ থেকেই যায় এবং সুস্থ না হয়ে সে মারা যায়, তবে তার উপর কোন কিছু বর্তাবে না।কারণ আল্লাহ্ তাআলা তার উপর অন্য দিনগুলোতে রোযার কাযা আদায় করা ফরজ করেছিলেন। কিন্তু সে সুযোগ পাওয়ার আগেই সে মারা গেছে।এক্ষেত্রে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে ব্যক্তি রমজান আসার আগেই শা‘বান মাসে মারা গেল,তার পক্ষ থেকে কাযা আদায় করতে হবে না।
দ্বিতীয় প্রকার :
এমন রোগী যার রোগ স্থায়ী।যেমন-ক্যান্সারের রোগ (আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই), কিডনি রোগ, ডায়াবেটিকস বা এ ধরণের স্থায়ী রোগ যা থেকে রোগীর আরোগ্য লাভ আশা করা যায় না। এ শ্রেণীর রোগী রমজান মাসে সিয়াম পালন বর্জন করতে পারবে এবং প্রতিদিনের রোযার বদলে একজন মিসকীন খাওয়ানো তার উপর আবশ্যক হবে। ঠিক যেমন অতিশয় বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা যারা সিয়াম পালনে সক্ষম নয় তারা করে থাকেন- রোযা না রেখে প্রতিদিনের বদলে একজন মিসকীন খাওয়ান।এর সপক্ষে কুরআনের দলীল হচ্ছে- আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(وَعَلَى ٱلَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ)
“আর যাদের জন্য তা কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য ফিদিয়া তথা একজন দরিদ্রকে খাবার প্রদান করা।”[২ আল-বাক্বারাহ : ১৮৪]উদ্ধৃতির সমাপ্তি
দুই :
ইত্ব‘আম বা খাওয়ানোর পদ্ধতি হল প্রত্যেক মিসকীনকে অর্ধেক স্বা‘(প্রায় ১.৫ কিলোগ্রাম) খাবার যেমন-চাল বা অন্যকিছু প্রদান করা। অথবা খাবার বানিয়ে মিসকীনদেরকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানো।
ইমাম বুখারী বলেছেন :
“আর যে বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তি রোযা পালনে সক্ষম নন তিনি মিসকীন খাওয়াবেন। যেমন আনাস (রাঃ) বৃদ্ধ হওয়ার পর একবছর কি দুইবছর প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে রুটি ও গোশত খাইয়েছেন; নিজে সিয়াম পালন করেননি।” উদ্ধৃতি সমাপ্ত।
শাইখ ইবনে বাযকে একজন অতিশয় বৃদ্ধা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল (যিনি রোযা পালনে সক্ষম নন) তিনি কী করবেন?
তিনি উত্তরে বলেন:
“তাঁকে প্রতিদিনের বদলে একজন মিসকীনকেঅর্ধ স্বা‘ স্থানীয় খাবারখাওয়াতে হবে।যেমন-খেজুর, চাল বা অন্য কোন খাদ্যদ্রব্য।ওজন হিসেবে এর পরিমাণ হল প্রায়দেড় (১.৫)কিলোগ্রাম।নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর একদল সাহাবী এই মর্মেফতোয়া দিয়েছেন,যাঁদেরমাঝেইবনেআব্বাস (রাঃওআছেন।আরযদিতিনিহতদরিদ্রহনঅর্থাৎ মিসকীন খাওয়াতেসক্ষমনা হন,তবেতারউপর অন্যকিছুবর্তাবেনা।উল্লেখিতএইকাফফারা একজনমিসকীনকেও দেওয়া যেতে পারে,একাধিক মিসকীনকেদেওয়াযেতেপারে।মাসেরশুরুতেও দেয়া যেতে পারে, মাঝখানেও দেয়া যেতে পারে, শেষেও দেয়া যেতে পারে।আরআল্লাহইতাওফিকদাতা।”সমাপ্ত
[মাজমূ‘ফাতাওয়া ইবনে বায (বিন বাযের ফতোয়া সংকলন), পৃষ্ঠা-১৫/২০৩]
শাইখ ইবনে ‘উছাইমীন ফাতাওয়াস্ সিয়াম (পৃঃ-১১১)এ বলেছেন :“তাই স্থায়ী রোগে আক্রান্ত রোগী, অতিশয় বৃদ্ধ ও বৃদ্ধাদের মধ্যে যারা রোযা পালনে অক্ষম তাদের উপর প্রতিদিনের রোযার পরিবর্তে একজন মিসকীন খাওয়ানো ওয়াজিব।সেটা খাদ্য দান করার মাধ্যমে হোক অথবা রমজান মাসের দিনের সমান সংখ্যক মিসকীনকে দাওয়াত করেখাওয়ানোরমাধ্যমেহোক। ঠিক যেমনটি আনাস বিন মালেক (রাঃ) বৃদ্ধ হওয়ার পর করতেন। তিনি ৩০ জন মিসকীনকে একত্রে দাওয়াত করে খাওয়াতেন। এতে তার একমাসের রোযার কাফফারা হয়ে যেত। ”
ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটিকে (১১/১৬৪) একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল রমজানের রোযা রাখতে অক্ষম ব্যক্তির পক্ষ থেকে মিসকীন খাওয়ানোর ব্যাপারে। যেমন-বার্ধক্যের কারণে অক্ষম বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা এবং সুস্থতার আশা নেই এমন রোগী।
তাঁরা উত্তরে বলেন :
“বার্ধক্যের কারণে যে ব্যক্তি রমজানের রোযা পালনে অক্ষম যেমন-অশীতিপর বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা অথবা রোযা পালন যার জন্য খুবই কষ্টসাধ্য তার জন্য রোযানা-রাখার ব্যাপারে ছাড় (রোখসত) আছে। তার জন্য প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন মিসকীন খাওয়ানো ওয়াজিব। খাদ্যের পরিমাণ হবে- অর্ধ স্বা গম,খেজুর,চাল বা এ জাতীয় অন্য কোন খাবার। যে খাবার তিনিনিজ পরিবারকে খাদ্য হিসেবে খাইয়ে থাকেন।একই বিধান প্রযোজ্য এমনঅসুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রেও, যিনি রোযা পালনে অক্ষম বা রোযা পালন করা তার জন্য অত্যন্ত কষ্টসাধ্য এবং তার রোগমুক্তির কোন আশা নেই।”এর দলীল হলো আল্লাহ তা‘আলারবাণী:
(لا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْساً إِلا وُسْعَهَا ) [2 البقرة : 286 ]
“আল্লাহ কারও উপর তার সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা চাপান না।”[সূরা বাক্বারাহ, ২:২৮৬]এবং আরও এসেছে :
( وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ ) [22 الحج : 78]
“আর তিনি দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের উপরকোন কাঠিন্য রাখেননি।”[সূরা হাজ্জ, ২২: ৭৮]
এবং তাঁর বাণী :
( وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ ) [2 البقرة : 184]
“আর যাদের জন্য তা কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য ফিদিয়া তথা একজন দরিদ্রকে খাবার প্রদান করা।”[সূরা বাক্বারাহ, ২ :১৮৪] উদ্ধৃতি সমাপ্ত।
আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।