আমরা আশা করছি, আপনাদের ওয়েবসাইট Islam Q&A (ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব) কে সাপোর্ট দেয়ার জন্য মুক্তহস্তে দান করবেন; যাতে করে ইনশা আল্লাহ্ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবায় আপনাদের ওয়েবসাইট তার পথ চলা অব্যাহত রাখতে পারে।
আমার স্ত্রী আমার ১০ মাসের শিশু সন্তানকে দুগ্ধপান করান। তাঁর জন্যে কি রমজানের রোজা না-রাখা জায়েয হবে?
আলহামদু লিল্লাহ।.
দুগ্ধপানকারিনী ও গর্ভবতী মায়ের দুইটি অবস্থা হতে পারে:
১. রোজা রাখার দ্বারা তার স্বাস্থ্যের উপর কোন প্রভাব না পড়া। অর্থাৎ তার জন্য রোজা রাখাটা কষ্টকর না হওয়া এবং তার সন্তানের জন্যেও আশংকাজনক না হওয়া। এমন নারীর উপর রোজা রাখা ফরজ; তার জন্য রোজা ভাঙ্গা নাজায়েয।
২. রোজা রাখলে তার নিজের স্বাস্থ্য অথবা সন্তানের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হওয়ার আশংকা করা এবং তার জন্যে রোজা রাখাটা কষ্টকর হওয়া। এমন নারীর জন্য রোজা না-রাখা জায়েয আছে; তিনি এ রোজাগুলো পরবর্তীতে কাযা পালন করবেন। বরং অবস্থায় এ নারীর জন্য রোজা না-রাখাই উত্তম; রোজা রাখা মাকরূহ। বরং কোন কোন আলেম উল্লেখ করেছেন যদি তার সন্তানের স্বাস্থ্যের ক্ষতির আশংকা হয় তাহলে তার উপর রোজা ছেড়ে দেয়া ফরজ; রোজা রাখা হারাম।
আল-মুরদাউয়ি ‘আল-ইনসাফ’ নামক গ্রন্থে (৭/৩৮২) বলেন:
“এমতাবস্থায় এ নারীর জন্য রোজা রাখা মাকরূহ...। ইবনে আকীল উল্লেখ করেছেন যে, গর্ভবতী ও দুগ্ধপানকারিনী নারী যদি নিজের গর্ভস্থিত ভ্রূণ ও সন্তানের ক্ষতির আশংকা করেন তাহলে রোজা রাখা জায়েয হবে না; আর যদি ক্ষতির আশংকা না করেন তাহলে রোজা ছেড়ে দেয়া জায়েয হবে না।” সংক্ষেপিত ও সমাপ্ত
শাইখ উছাইমীন (রহঃ) ফাতাওয়া আল-সিয়াম গ্রন্থে (পৃষ্ঠা- ১৬১) বলেন:
যদি গর্ভবতী ও দুগ্ধপানকারিনী নারী শারীরিকভাবে সবল ও কর্মোদ্যমী হয়, রোজা রাখার দ্বারা তার স্বাস্থ্যের উপর কোন প্রভাব না পড়ে; তদুপরি কোন ওজর ছাড়া রোজা না-রাখে এর হুকুম কি?
তিনি উত্তরে বলেন:
“গর্ভবতী ও দুগ্ধপানকারিনী নারীর জন্য কোন ওজর ছাড়া রমজান মাসের রোজা না-রাখা জায়েয নয়। যদি ওজরের কারণে রোজা না-রাখে তাহলে রোজা কাযা করতে হবে। দলিল হচ্ছে- আল্লাহর বাণী: “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে সে অন্যদিনগুলোতে এ সংখ্যা পূর্ণ করবে”[সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫] আর এ দুই শ্রেণীর নারী অসুস্থ ব্যক্তির পর্যায়ভুক্ত। যদি এ দুই শ্রেণীর নারীর ওজর হয় ‘তাদের সন্তানের স্বাস্থ্যহানির আশংকা’ তাহলে কোন কোন আলেমের মতে, এরা রোজাগুলোর কাযা পালনের সাথে প্রতিদিনের বদলে একজন মিসকীনকে গম, চাল, খেজুর বা স্থানীয় প্রধান কোন খাদ্য সদকা করবে। আর কোন কোন আলেমের মতে, কোন অবস্থাতে তাদেরকে কাযা পালন ছাড়া আর কিছু করতে হবে না। কারণ খাদ্য প্রদানের পক্ষে কিতাব ও সুন্নাহর কোন দলিল নেই। আর দলিল সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত ব্যক্তি যে কোন প্রকার দায়িত্ব থেকে মুক্ত থাকা- মৌলিক বিধান। এটি ইমাম আবু হানিফার মাযহাব ও মজবুত অভিমত।” সমাপ্ত
শাইখ উছাইমীনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল (ফাতাওয়াস সিয়াম পৃষ্ঠা-১৬২):
গর্ভবতী নারী যদি নিজের স্বাস্থ্যহানি বা সন্তানের স্বাস্থ্যহানির আশংকায় রোজা না রাখে এর কী হুকুম?
উ্ত্তরে তিনি বলেন: “আমাদের জবাব হচ্ছে- গর্ভবতী নারীর দুইটি অবস্থার কোন একটি হতে পারে:
১. শারীরিকভাবে শক্তিশালী ও কর্মোদ্যমী হওয়া, রোজা রাখতে কষ্ট না হওয়া, গর্ভস্থিত সন্তানের উপর কোন প্রভাব না পড়া- এ নারীর উপর রোজা রাখা ফরজ। যেহেতু রোজা ছেড়ে দেয়ারজন্য তার কোন ওজর নেই।
২. গর্ভবতী নারী রোজা রাখতে সক্ষম না হওয়া: গর্ভ ধারণের কাঠিন্যের কারণে অথবা তার শারীরিক দুর্বলতার কারণে অথবা অন্য যে কোন কারণে। এ অবস্থায় এ নারী রোজা রাখবে না। বিশেষতঃ যদি তার গর্ভস্থিত সন্তানের ক্ষতির আশংকা করে সেক্ষেত্রে রোজা ছেড়ে দেয়া তার উপর ফরজ। যদি সে রোজা ছেড়ে দেয় তাহলে অন্য ওজরগ্রস্ত ব্যক্তিদের যে হুকুম তার ক্ষেত্রেও একই হুকুম হবে তথা পরবর্তীতে এ রোজাগুলো কাযা পালন করা তার উপর ফরজ। অর্থাৎ সন্তান প্রসব ও নিফাস থেকে পবিত্র হওয়ার পর এ রোজাগুলো কাযা পালন করা তার উপর ফরজ। তবে কখনো হতে পারে গর্ভধারণের ওজর থেকে সে মুক্ত হয়েছে ঠিক; কিন্তু নতুন একটি ওজরগ্রস্ত হয়ে পড়েছে, অর্থাৎ দুগ্ধপান করানোর ওজর। দুগ্ধপানকারিনী নারী পানাহার করার মুখাপেক্ষী হয়ে পড়তে পারে; বিশেষতঃ গ্রীষ্মের দীর্ঘতর ও উত্তপ্ত দিনগুলোতে। এ দিনগুলোতে এমন নারী তার সন্তানকে বুকের দুধ পান করানোর জন্য রোজা ছেড়ে দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। এমতাবস্থায় আমরা সে নারীকে বলব: আপনি রোজা ছেড়ে দিন। এ ওজর দূর হওয়ার পর আপনি এ রোজাগুলো কাযা পালন করবেন।” সমাপ্ত
শাইখ বিন বায (মাজমুউল ফাতাওয়া ১৫/২২৪) বলেন:
“গর্ভবতী ও দুগ্ধপানকারিনী নারীর ব্যাপারে ইমাম আহমাদ ও সুনান সংকলকগণের গ্রন্থে সহিহ সনদে আনাস বিন মালিক আল-কাবী এর বর্ণিত হাদিস নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি এ দুই প্রকারের নারীকে রোজা ছেড়ে দেয়ার অবকাশ দিয়েছেন এবং এদেরকে মুসাফিরের পর্যায়ে গণ্য করেছেন। অতএব, জানা গেল যে, এরা মুসাফিরের মত রোজা না-রেখে পরবর্তীতে কাযা পালন করবে। আলেমগণ উল্লেখ করেছেন যে, রোগীর অনুরূপ কষ্ট না হলে অথবা সন্তানের স্বাস্থ্যহানির আশংকা না থাকলে এ দুই শ্রেণীর নারীগণ রোজা ছেড়েদিবে না। আল্লাহই ভাল জানেন।” সমাপ্ত
স্থায়ী কমিটির ফতোয়াতে (১০/২২৬) এসেছে-
“গর্ভবতী নারীর উপরও রোজা রাখা ফরজ; তবে যদি রোজা রাখলে নিজের স্বাস্থ্যহানি অথবা গর্ভস্থিত সন্তানের স্বাস্থ্যহানির আশংকা হয় তাহলে তার জন্যে রোজা না-রাখার অবকাশ থাকবে এবং প্রসব করার পর নিফাস থেকে পবিত্র হয়ে এ রোজাগুলো কাযা করবে।” সমাপ্ত