আমরা আশা করছি, আপনাদের ওয়েবসাইট Islam Q&A (ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব) কে সাপোর্ট দেয়ার জন্য মুক্তহস্তে দান করবেন; যাতে করে ইনশা আল্লাহ্ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবায় আপনাদের ওয়েবসাইট তার পথ চলা অব্যাহত রাখতে পারে।
গবাদিপশুর যাকাতের নেসাব কত?
আলহামদু লিল্লাহ।.
গবাদিপশু হলো উট, গরু ও ছাগল-ভেড়া। এছাড়া অন্য কোনো পশুতে যাকাত ফরয হয় না। কেবল অন্যসব পশু দিয়ে ব্যবসা করা হলে তখন যাকাত ফরয হয়।
১- উটের নেসাব: আলেমদের ঐকমত্যে পাঁচটি উট। পাঁচ উটে একটা ছাগল বা ভেড়া যাকাত দিতে হবে। এরপর দশটি উটে দুটি ছাগল বা ভেড়া। পনেরটি উটে তিনটি ছাগল বা ভেড়া। বিশটি উটে চারটি ছাগল বা ভেড়া। পঁচিশটি উটে একটি এক বছর বয়সী উষ্ট্রী। ... এভাবে হাদীসে বর্ণিত নেসাব যেমনটা সামনে আসবে।
সুতরাং কারো যদি চারটি বা তার চেয়ে কম উট থাকে তাহলে তার উপর যাকাত ফরয নয়। তবে সে চাইলে দিতে পারে।
এর দলীল বুখারীতে (১৪৫৪) বর্ণিত হাদীস, আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন তাকে বাহরাইনে প্রেরণ করেছিলেন তখন তিনি তাকে এই পত্রটি লিখেছিলেন: “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম (পরম দয়ালু করুণাময় আল্লাহর নামে)। এটাই যাকাতের নিসাব যা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদের জন্য নির্ধারণ করেছেন এবং যা আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে নির্দেশ দিয়েছেন। মুসলিমদের মধ্যে যার নিকট হতে এ নিয়ম অনুযায়ী যাকাত চাওয়া হবে সে যেন তা আদায় করে। আর এ নিয়মের চেয়ে বেশি চাওয়া হলে সে যেন তা না দেয়: চব্বিশটি বা তার চেয়ে কম সংখ্যক উটের যাকাত প্রতি পাঁচটি উটের বিপরীতে একটি ভাড়ে বা ছাগল দিয়ে আদায় করতে হবে। যদি উটের সংখ্যা পঁচিশে পৌঁছে তখন পঁয়ত্রিশটি পর্যন্ত উটের যাকাত একটি মাদী ‘বিনতে মাখায’ (যে উট দ্বিতীয় বছরে পদার্পণ করেছে)। উটের সংখ্যা ছত্রিশে পৌঁছলে পঁয়তাল্লিশ পর্যন্ত একটি মাদী ‘বিন্তে লাবূন’ (যে উট তৃতীয় বছরে পদার্পণ করেছে)। উটের সংখ্যা ছেচল্লিশে পৌঁছলে ষাট পর্যন্ত সঙ্গমযোগ্য একটি ‘হিক্কা’ (যে মাদী উট চতুর্থ বছরে পদার্পণ করেছে)। উটের সংখ্যা একষট্টিতে পৌঁছলে পঁচাত্তর পর্যন্ত একটি ‘জাযা‘আ’ (যে উটনী পঞ্চম বছরে পদার্পণ করেছে)। উটের সংখ্যা ছিয়াত্তরে পৌঁছলে নব্বই পর্যন্ত দুইটি ‘বিনতে লাবূন’। উটের সংখ্যা একানব্বইতে পৌঁছলে একশ বিশ পর্যন্ত সঙ্গমযোগ্য দুটি ‘হিক্কা’। উটের সংখ্যা একশ বিশের অধিক হলে (অতিরিক্ত) প্রতি চল্লিশটির জন্য একটি করে ‘বিনতে লাবূন’ এবং (অতিরিক্ত) প্রতি পঞ্চাশটির জন্য একটি করে ‘হিক্কা’। আর যার কাছে চারটির বেশি উট নেই সেগুলোর উপর কোন যাকাত ফরয হবে না। তবে মালিক স্বেচ্ছায় কিছু দিতে চাইলে দিতে পারবে। কিন্তু উটের সংখ্যা যখন পাঁচটিতে পৌঁছবে তখন একটি ভেড়া বা ছাগল ওয়াজিব হবে।...”
বিনতে মাখায এমন উষ্ট্রী যার বয়স এক বছর পূর্ণ হয়েছে।
বিনতে লাবূন এমন উষ্ট্রী যার বয়স দুই বছর পূর্ণ হয়েছে।
হিক্কা এমন উষ্ট্রী যার বয়স তিন বছর পূর্ণ হয়েছে।
জাযা‘আ এমন উষ্ট্রী যার বয়স চার বছর পূর্ণ হয়েছে।
২- গরুর যাকাতের নেসাব: অধিকাংশ আলেমের মতে ত্রিশটি। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “প্রতি ত্রিশটি গরুতে একটি তাবী‘ অথবা তাবী‘য়া এবং প্রতি চল্লিশটি গরুতে একটি মুসিন্নাহ।”[তিরমিযী: ৬২২, ইবনে মাজাহ: ১৮০৪; আলবানী সহীহ তিরমিযীতে হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
তাবী‘ হলো: এমন গরুর বাছুর যে এক বছর পূর্ণ করে দ্বিতীয় বছরে প্রবেশ করেছে। এমন গরুর বাছুরকে তাবী‘ (পশ্চাৎগামী) বলা হয় যেহেতু সে তার মাকে অনুসরণ করে চলে। (আর স্ত্রী-লিঙ্গের ক্ষেত্রে তাবীয়া’ বলা হয়)।
মুসিন্নাহ হলো: এমন গাভী যার দুই বছর পূর্ণ হয়েছে। এমন গরুর অন্য নাম সানিয়্যাহ।
৩- ছাগল-ভেড়ার যাকাত: আলেমদের ইজমার ভিত্তিতে চল্লিশটি। প্রতি চল্লিশটিতে একটি। কারণ আনাস রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত যে হাদীসটা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, তাতে আছে: “ছাগলের যাকাত সম্পর্কে: চারণভূমিতে চরে এমন ছাগল-ভেড়ার ক্ষেত্রে চল্লিশটি হতে একশ বিশটি পর্যন্ত একটি ছাগল বা ভেড়া। এর বেশি হলে দুইশটি পর্যন্ত দুটি ছাগল বা ভেড়া। দুইশর অধিক হলে তিনশ পর্যন্ত তিনটি ছাগল বা ভেড়া। তিনশর বেশি হলে প্রতি একশ-তে একটি করে ছাগল বা ভেড়া। কারো মালিকানায় চারণভূমিতে চরে এমন ছাগলের সংখ্যা চল্লিশ হতে একটিও কম হলে তার উপর যাকাত নেই। তবে স্বেচ্ছায় দান করলে তা করতে পারে।”
গবাদিপশুর যাকাত আবশ্যক হওয়ার জন্য অধিকাংশ ফকীহ শর্ত দিয়েছেন যে পশু অবশ্যই ‘সায়েমা’ হওয়া। সায়েমা হলো যে পশু বছরের অধিকাংশ সময় বৈধ (সাধারণ) চারণভূমি থেকে খাদ্য আহরণ করে। আর যে পশুকে মালিক নিজ খরচে খাওয়ায় সেটার উপর যাকাত নেই। তবে সেই পশু ব্যবসার জন্য হলে তখন যাকাত আবশ্যক হবে। চারণভূমি থেকে খাদ্য আহরণ করা শর্ত হওয়ার দলীল হলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, “ছাগলের যাকাতের ক্ষেত্রে চারণভূমিতে চরে এমন ছাগলের উপর ...”[দেখুন, আল-মুগনী (২/২৩০-২৪৩)]
‘ফাতাওয়া আল-লাজনাহ আদ-দাইমাহ’ (৯/২০২)-তে আছে:
“আলেমগণ এই মর্মে ইজমা করেছেন যে, সায়েমা (চারণভূমিতে চরে খায় এমন) উট, গরু ও ছাগল-ভেড়ার ওপর যাকাত ফরয হবে; যদি সেগুলোর সংখ্যা নেসাব পরিমাণে পৌঁছে। আর নেসাবের সূচনা উটের ক্ষেত্রে পাঁচটি থেকে। গরুর ক্ষেত্রে ত্রিশটি থেকে। আর ছাগল-ভেড়ার ক্ষেত্রে চল্লিশটি থেকে। সায়েমা হলো ঘাস বা এ জাতীয় কিছু চরে খায় এমন পশু। এর বিপরীতে রয়েছে যে সব পশুকে মালিক খাদ্য দেয় বা যেগুলোকে মালিক বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে।
যে সব পশুকে মালিক খাদ্য দেয় এবং যেগুলোকে কাজে খাটায় সেগুলোর উপর যাকাত ফরয কিনা এ ব্যাপারে আলেমদের মতভেদ রয়েছে। অধিকাংশ আলেমের মতে যাকাত ফরয নয়। দলিল হলো আহমাদ, নাসাঈ ও আবু দাউদ কর্তৃক বাহয ইবনে হাকীমের হাদিস। যে হাদিসটি তিনি তার বাবা থেকে এবং তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: “সায়েমা উটের ক্ষেত্রে প্রতি চল্লিশটি উটে একটি বিনতে লাবুন দিতে হবে ... ” আল-হাদীস। উটের উপর যাকাত ফরয হওয়ার ক্ষেত্রে তিনি চারণভূমিতে চরে খাওয়াকে শর্ত করেছেন। সুতরাং যে উটকে মালিক নিজে খাদ্য দেয় সেটার উপর যাকাত ফরয হবে না। আর কাজে ব্যবহৃত পশুতে যাকাত ফরয না হওয়ার দলীল আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীস: “কাজে ব্যবহৃত পশুতে কোনো সদাকা (যাকাত) নেই।”
তবে ইমাম মালেক ও একদল আলেমের মতে যে পশুকে মালিক নিজে খাদ্য দেয় এবং যে পশুকে কাজে খাটানো হয় সেগুলোর উপরও ফরয হয়। ... ”[সমাপ্ত]
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।