বৃহস্পতিবার 27 জুমাদাল আউওয়াল 1446 - 28 নভেম্বর 2024
বাংলা

তওবা কবুল হওয়া

প্রশ্ন

আমি একটি জঘন্য পাপ করেছি। আমি আল্লাহ্‌র কাছে ইস্তিগফার (ক্ষমাপ্রার্থনা) করেছি এবং দোয়া করেছি তিনি যেন আমাকে ক্ষমা করে দেন। সেই গুনাহ থেকে আমার তওবা কি কবুল হবে? বিশেষতঃ আমি অনুভব করছি যে, আমার তওবা কবুল হয়নি এবং তিনি আমার ওপর রাগান্বিত! তওবা কবুল হওয়ার কি বিশেষ কিছু ইঙ্গিত আছে?

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

নিঃসন্দেহে ভুল ও কসুর মানুষের প্রকৃতিজাত। কোন মুকাল্লাফ (শরয়ি দায়িত্বপ্রাপ্ত) ব্যক্তিই আনুগত্যের ক্ষেত্রে কসুর কিংবা ভুল ও গাফলতি, নতুবা ত্রুটি ও বিস্মৃতি, নচেৎ গুনাহ ও পাপ মুক্ত নয়। আমরা প্রত্যেকেই কসুরকারী ও গুনাহগার, ভুলকারী। কখনও কখনও আমরা আল্লাহ্‌র অভিমুখী হই; আবার কখনও কখনও পিছিয়ে আসি। কখনও কখনও আল্লাহ্‌র নজরদারিকে স্মরণে রাখি; আবার কখনও কখনও গাফলতি আমাদের উপর ভর করে বসে। আমরা গুনাহমুক্ত নই। আমাদের থেকে গুনাহ ঘটেই থাকে। যেহেতু আমরা মাসুম বা নিষ্পাপ নই। এ জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আমি ঐ সত্তার শপথ করে বলছি যার হাতে রয়েছে আমার প্রাণ— যদি তোমরা গুনাহ না করতে তবে আল্লাহ অবশ্যই তোমাদেরকে ধ্বংস করে এমন এক সম্প্রদায়কে সৃষ্টি করতেন, যারা গুনাহ করে আবার ক্ষমা প্রার্থনা করে।”[সহিহ মুসলিম (২৭৪৯)] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন: “প্রত্যেক বনী আদম গুনাহগার। আর গুনাহকারীদের মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে- তওবাকারীগণ।”[সুনানে তিরমিযি (২৪৯৯), আলবানী হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন]

দুর্বল মানবের প্রতি আল্লাহ্‌র দয়া হচ্ছে— তিনি তার জন্য তওবার দ্বার উন্মুক্ত রেখেছেন এবং তাকে নির্দেশ দিয়েছেন তাঁর দিকে ফিরে আসার ও তাঁর অভিমুখী হওয়ার; যখনই পাপ তাকে পরাভুত করে কিংবা গুনাহ তাকে দুষিত করে। যদি এমনটি না হত তাহলে মানুষ কঠিন সংকটে পড়ে যেত, স্বীয় প্রতিপালকের নৈকট্য হাছিলে তার হিম্মত হ্রাস পেত এবং আপন প্রভুর ক্ষমা পাওয়ার আশা ছিন্ন হত। তাই তওবা হচ্ছে—মানুষের ঘাটতি ও কসুরের অনিবার্য দাবী।

আল্লাহ্‌ তাআলা এ উম্মতের সব শ্রেণীর মানুষের ওপর তওবা করা ওয়াজিব করে দিয়েছেন; যারা নেক কাজে অগ্রণী, যারা পরিমিত নেক আমলকারী এবং যারা পাপকাজের মাধ্যমে নিজেদের ওপর জুলুমকারী সবার ওপর।

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা সবাই আল্লাহ্‌র কাছে তওবা কর, যাতে তোমরা সফল হও।”[সূরা নূর, ২৪:৩১]

আল্লাহ্‌ তাআলা আরও বলেন: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্‌র কাছে খাঁটি তওবা কর।”[সূরা আত্‌তাহরীম, ৬৬:৮]

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “ওহে লোকসকল! তোমরা আল্লাহ্‌র কাছে তওবা ও ইস্তিগফার কর। নিশ্চয় আমি দিনে একশবার তওবা করি।”[সহিহ মুসলিম-এ (২৭০২) আল-আগার্‌র আল-মুযানি (রাঃ)-এর সূত্রে বর্ণিত]

আল্লাহ্‌ তাআলার রহমত অবারিত, বান্দার প্রতি তাঁর দয়া সর্বব্যাপী। তিনি সহিষ্ণু; তাৎক্ষণিকভাবে আমাদেরকে পাকড়াও করেন না, শাস্তি দেন না, কিংবা ধ্বংস করে দেন না। বরং আমাদেরকে সময় দেন। তিনি তাঁর নবীকে নির্দেশ দিয়েছেন যাতে করে তিনি তাঁর মহানুভবতার ঘোষণা দেন: “বলে দিন, ‘হে আমার বান্দারা, যারা নিজেদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ! আল্লাহ্‌র রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ্‌ তো সব গুনাহ মাফ করে দেন। নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল, অসীম দয়ালু”।[সূরা যুমার, ৩৯:৫৩]

বান্দার প্রতি কোমল হয়ে তিনি বলেন: “তবে কি তারা আল্লাহ্‌র কাছে তওবা করবে না (ফিরে আসবে না), তাঁর কাছে ইস্তিগফার করবে না (ক্ষমাপ্রার্থনা করবে না)?! আল্লাহ্‌ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”[সূরা মায়িদা, ৫:৭৪]

তিনি আরও বলেন: “আর যে তওবা করে, ঈমান রাখে, সৎকাজ করে এবং সঠিক পথে অবিচল থাকে তার প্রতি আমি অবশ্যই ক্ষমাশীল।”[সূরা ত্বহা, ২০:৮২]

তিনি আরও বলেন: “এবং আর যারা কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে কিংবা নিজেদের প্রতি জুলুম করে ফেললে আল্লাহ্‌কে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ইস্তিগফার করে (ক্ষমা চায়)। আল্লাহ্‌ ছাড়া পাপ ক্ষমা করবে কে? আর তারা জেনেশুনে নিজেদের কৃতকর্মের ওপর জিদ ধরে থাকে না।”[সূরা আলে ইমরান, ৩:১৩৫]

তিনি আরও বলেন: “যে লোক কোন খারাপ কাজ করে কিংবা নিজের প্রতি জুলুম করে, তারপর আল্লাহ্‌র কাছে ক্ষমা চায় সে আল্লাহ্‌কে ক্ষমাশীল ও দয়ালু পাবে।”[সূরা নিসা, ৪:১১০]

আল্লাহ্‌ তাআলা তাঁর সাথে জঘন্য অংশীদার স্থাপনকারী ও গুনাহকারীদেরকেও তওবা করার আহ্বান জানিয়েছেন। যারা বলেছিল: ঈসা আলাইহিস সালাম আল্লাহ্‌র পুত্র। (অন্যায়কারীরা যা বলে আল্লাহ্‌ তাআলা তা থেকে বহু উর্ধ্বে।) আল্লাহ্‌ তাআলা তাদের প্রসঙ্গে বলেছেন: “তবে কি তারা আল্লাহ্‌র কাছে তওবা করবে না (ফিরে আসবে না), তাঁর কাছে ইস্তিগফার (ক্ষমাপ্রার্থনা) করবে না?! আল্লাহ্‌ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”[সূরা মায়িদা, ৫:৭৪]

তিনি মুনাফিকদের জন্যেও তওবার দরজা উন্মুক্ত রেখেছেন; যারা প্রকাশ্য কাফেরদের চেয়েও নিকৃষ্ট কাফের। তাদের ব্যাপারে আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “মুনাফিকদের জায়গা হবে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে। আর আপনি তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী পাবেন না; সেই সব লোক ব্যতীত যারা তওবা করে, নিজেদের অবস্থা সংশোধন করে, আল্লাহ্‌কে (আল্লাহ্‌র বিধানকে) আঁকড়ে ধরে এবং নিজেদের ধার্মিকতাকে কেবল আল্লাহ্‌র জন্য একনিষ্ঠ করে; এমন লোকেরা মুমিনদের সাথে থাকবে। অচিরেই আল্লাহ্‌ মুমিনদেরকে এক মহান প্রতিদান দেবেন।”[সূরা নিসা, ৪:১৪৫-১৪৬]

প্রতিপালকের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তিনি তওবা কবুল করেন এবং তাঁর মহানুভবতা ও অনুগ্রহের কারণে তিনি এতে খুশি হন। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “তিনিই তাঁর বান্দাদের তওবা কবুল করেন এবং তাদের পাপসমূহ ক্ষমা করেন। আর তোমরা যা কিছু কর তিনি তা জানেন।”[সূরা শুরা, ৪২:২৫]

তিনি আরও বলেন: “তারা কি জানে না যে, আল্লাহ্‌ তাঁর বান্দাদের তওবা কবুল করেন ও (তাদের) দান-সদকা গ্রহণ করেন এবং কেবল আল্লাহ্‌ই ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।”[সূরা তওবা, ৯:১০৪]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খাদেম হামযার পিতা আনাস বিন মালেক আল-আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের কেউ মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়া উট খুঁজে পেয়ে যতটা খুশি হয়, নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দার তওবাতে এর চেয়েও বেশি খুশি হন।”[সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম]

সহিহ মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় এসেছে: “নিশ্চয় বান্দার তওবাতে আল্লাহ তোমাদের ঐ ব্যক্তির চেয়ে অধিক আনন্দিত হন, যে ব্যক্তি বিজন মরুর প্রান্তরে উট হারিয়ে ফেলেছে। যে উটের পিঠে তার খাদ্যপানীয় ছিল। উট হারানোর কারণে হতাশ হয়ে গাছের ছায়ায় এসে শুয়ে পড়ল। এমন পরিস্থিতিতে সে হঠাৎ দেখতে পেল তার উট তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। তখন সে উটের লাগাম ধরে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে বলতে লাগল ‘হে আল্লাহ, তুমি আমার বান্দা আমি তোমার প্রভু!’ অতি আনন্দের কারনে সে এভাবে ভুল কথা বলে ফেলল।”[সহিহ মুসলিম (২৭৪৭)]

মুসার পিতা আব্দুল্লাহ্‌ বিন কায়েস আল-আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তাআলা রাতের বেলায় তাঁর হাত প্রসারিত করেন দিনের বেলায় পাপকারীর তওবা কবুল করার জন্য এবং তিনি দিনের বেলায় তাঁর হাত প্রসারিত করেন রাতের বেলায় পাপকারীর তওবা কবুল করার জন্য।”[সহিহ মুসলিম (২৭৫৯)]

আব্দুর রহমানের পিতা আব্দুল্লাহ্‌ বিন উমর বিন আল-খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তাআলা ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দার তওবা কবুল করেন যতক্ষণ পর্যন্ত না গড়গড় শব্দ (মৃত্যুর যন্ত্রণা) শুরু হয়।”[সুনানে তিরমিযি (৩৫৩৭)]

দুই:

তওবার বরকত নগদ ও আসন্ন এবং দৃশ্যমান ও গোপন। তওবার সওয়াব হচ্ছে—অন্তরগুলোর পবিত্রতা, পাপসমূহের মোচন ও নেকীর বৃদ্ধি। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্‌র কাছে খাঁটি তওবা কর। (তাহলে) হয়তো তোমাদের প্রভু তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে জান্নাতে স্থান দেবেন, যার তলদেশ দিয়ে নদী প্রবাহিত। আল্লাহ্‌ সেদিন নবী ও তার সঙ্গী মুমিনদেরকে লাঞ্ছিত করবেন না। তাদের আলো তাদের সামনে ও ডানে ধাবিত হবে। তারা বলবে: ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের আলো পূর্ণ করুন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি সবকিছু করতে সক্ষম।”[সূরা তাহরীম, ৬৬:৮]

তওবার সওয়াব হচ্ছে— ভাল জীবন; যে জীবন হবে ঈমান, অল্পেতুষ্টি, সন্তুষ্টি, আত্মপ্রশান্তি, নিশ্চিন্ততা ও নিষ্কলুষ হৃদয়ের ছায়ায় ধন্য। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “আর তোমরা তোমাদের প্রভুর কাছে ইস্তিগফার কর (ক্ষমা চাও) ও তওবা কর (তাঁর দিকে ফিরে এসো)। তাহলে তিনি তোমাদেরকে এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সুন্দরভাবে (জীবনের সুখ) ভোগ করতে দেবেন এবং প্রত্যেক মর্যাদাবানকে তার (যথার্থ) মর্যাদা দেবেন।”[সূরা হুদ, ১১:৩]

তওবার সওয়াব হচ্ছে— আসমান থেকে অবতীর্ণ বরকত, জমিনে দৃশ্যমান বরকত, সন্তান-সন্ততির বৃদ্ধি, উৎপাদনে বরকত, শরীরের রোগমুক্তি, বিপদাপদ থেকে সুরক্ষা ইত্যাদি। আল্লাহ্‌ তাআলা হুদ আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বলেন: “আর হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের প্রভুর কাছে ইস্তিগফার কর (ক্ষমা চাও), তারপর তওবা কর (তাঁর দিকে ফিরে আস); তাহলে তিনি আসমান থেকে তোমাদের ওপর বারিধারা বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের শক্তির সাথে আরো শক্তি বাড়িয়ে দেবেন। অতএব তোমরা অপরাধী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিও না।”[সূরা হুদ, ১১:৫২]

তিন:

যে কেউ তওবা করলে আল্লাহ্‌ তার তওবা কবুল করেন। তওবাকারীদের কাফেলা চলমান থাকবে। পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় ঘটার পূর্ব পর্যন্ত এ কাফেলা থামবে না ।

কেউ তওবা করে ডাকাতি থেকে, কেউ তওবা করে যৌনাঙ্গের পাপ থেকে, কেউ তওবা করে মদ্যপান থেকে, কেউ তওবা করে মাদকদ্রব্য থেকে, কেউ তওবা করে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা থেকে, কেউ তওবা করে নামায না-পড়া থেকে কিংবা জামাতে হাজিরে অলসতা করা থেকে, কেউ তওবা করে পিতামাতার অবাধ্যতা থেকে, কেউ তওবা করে সুদ-ঘুষ থেকে, কেউ তওবা করে চুরি থেকে, কেউ তওবা করে মানুষ হত্যা করা থেকে, কেউ তওবা করে অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ আত্মসাৎ করা থেকে, কেউ তওবা করে সিগারেট খাওয়া থেকে। প্রত্যেক পাপ থেকে আল্লাহ্‌র কাছে তওবাকারীকে স্বাগতম। খাঁটি তওবার মাধ্যমে সে যেন নবজাতক শিশুর মত হয়ে গেল।

সাঈদের পিতা সাদ বিন মালিক বিন সিনান আল-খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের মাঝে এমন এক লোক ছিল যে নিরানব্বইজন মানুষকে হত্যা করেছে। সে ঐ সময়কার সবচেয়ে জ্ঞানবান ব্যক্তির অনুসন্ধান করল। তাকে একজন ধর্মযাজককে দেখিয়ে দেয়া হল। সে ধর্মযাজকের কাছে এসে বলল: আমি নিরানব্বই জন মানুষকে হত্যা করেছি; আমার জন্য কি তওবার সুযোগ আছে? ধর্মযাজক বলল: না। তখন সে উক্ত ধর্মযাজককে হত্যা করে একশজন পূর্ণ করল। এরপর সে সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি কে আছে তার সন্ধান করল? তখন তাকে একজন ধর্মীয় পণ্ডিতকে দেখিয়ে দেয়া হল। সে (পণ্ডিতকে) বলল যে, সে একশজন মানুষকে হত্যা করেছে; তার জন্যে কি তওবা করার সুযোগ আছে? তিনি বললেন: হ্যাঁ। তার তওবা কবুলের পথে কে প্রতিবন্ধক হতে পারে? তুমি অমুক স্থানে চলে যাও। সেখানে কিছু লোক আল্লাহর ইবাদতে লিপ্ত আছে। তুমিও তাদের সঙ্গে আল্লাহর ইবাদতে লিপ্ত হও এবং কখনও তোমার নিজ দেশে ফিরে যাবে না। কেননা, সেটা খুব খারাপ জায়গা। লোকটি নির্দেশিত স্থানের দিকে রওয়ানা হয়ে গেল। অর্ধেক পথ অতিক্রম করার পর তার মৃত্যুর সময় হয়ে গেল। তখন তাকে নিয়ে রহমতের ফেরেশতা ও আযাবের ফেরেশতাদের মধ্যে বিতর্ক দেখা দিল। রহমতের ফেরেশতারা বলল: লোকটি তওবা করে অন্তর থেকে আল্লাহর দিকে ফিরে এসেছে। আর আযাবের ফেরেশতারা বলল: লোকটি কখনো কোন পুণ্যের কাজ করেনি। এ সময় একজন ফেরেশতা মানুষের বেশে হাজির হল। তারা এ ব্যক্তিকে তাদের মাঝে বিচারক হিসেবে মেনে নিল। তিনি বললেন: তোমরা উভয় দিকের জায়গা মেপে দেখ। যে দিকের ভূমি কম হবে এ লোক তার ভাগের হিসেবে গণ্য হবে। তখন তারা জায়গা মেপে দেখল যে, ঐ ব্যক্তি যে স্থানের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিল সে স্থানের কাছাকাছি। ফলে রহমতের ফেরেশতারা লোকটির প্রাণ কেড়ে নিল।”[সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম]

সহিহ মুসলিমের এক বর্ণনায় (২৭১৬) এসেছে যে, “ঐ ব্যক্তি নেককারদের গ্রামের দিকে এক বিগত এগিয়ে ছিল। ফলে তাকে নেককার গ্রামের অধিবাসী হিসেবে গণ্য করা হয়”।

সহিহ বুখারীর অপর এক বর্ণনায় (৩৪৭০) এসেছে যে: “আল্লাহ্‌ তাআলা এ ভাগের ভূমির কাছে প্রত্যাদেশ করলেন যে, তুমি নিকটবর্তী হয়ে যাও এবং ঐ ভাগের ভূমির কাছে প্রত্যাদেশ করলেন যে, তুমি দূরে যাও। লোকটি বলল: তোমরা এ দুই ভূমির মধ্যবর্তী জায়গা মেপে দেখ। মেপে পাওয়া গেল যে, নেককারদের গ্রামের দিকে এক বিগত কাছে। তখন তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হল।

সহিহ মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় (২৭৬৬) এসেছে যে, “ঐ ব্যক্তি তার বুক দিয়ে ঐ স্থানের দিকে আগাচ্ছিল”।

তওবা শব্দের অর্থ হচ্ছে—আল্লাহ্‌র দিকে ফিরে আসা, গুনাহ ত্যাগ করা, গুনাহকে অপছন্দ করা, নেক কাজে কসুর হওয়ার জন্য অনুতপ্ত হওয়া। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন: “আলেমগণ বলেন, প্রত্যেক গুনাহ থেকে তওবা করা ওয়াজিব। যদি গুনাহটি বান্দার মাঝে ও আল্লাহ্‌র মাঝে হয়ে থাকে; কোন মানুষের হক্বের সাথে সম্পৃক্ত না হয় তাহলে সে তওবার জন্য শর্ত তিনটি: ১। গুনাহ ত্যাগ করা। ২। কৃত কর্মের জন্য অনুতপ্ত হওয়া। ৩। সে গুনাতে পুনরায় লিপ্ত না হওয়ার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেওয়া। যদি এ তিনটি শর্তের কোন একটি না পাওয়া যায় তাহলে সে তওবা শুদ্ধ হবে না।

আর যদি গুনাহটি মানুষের সাথে সম্পৃক্ত হয় তাহলে সে তওবার জন্য শর্ত চারটি: উল্লেখিত তিনটি এবং হক্বদারের হক্ব থেকে নিজেকে মুক্ত করা; যদি সম্পদ বা এ জাতীয় কিছু হয় তাহলে সেটা মালিককে ফিরিয়ে দেওয়া। আর যদি অপবাদ এবং এ ধরণের কিছু হয় তাহলে প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য নিজেকে তার কাছে পেশ করা কিংবা ক্ষমা চেয়ে নেয়া। আর যদি গীবত হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে মাফ চেয়ে নেওয়া। সকল গুনাহ থেকে তওবা করা ওয়াজিব। যদি কেউ কিছু গুনাহ থেকে তওবা করে তাহলে মুহাক্কিক আলেমদের মতে সে যে গুনাহ থেকে তওবা করেছে সে গুনাহ থেকে তার তওবা শুদ্ধ হবে এবং অন্যান্য গুনাহ থেকে তওবা করা বাকী থাকবে।”[সমাপ্ত]

পূর্বোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায় যদি কোন তওবাকারীর ক্ষেত্রে এ শর্তগুলো পূর্ণ হয় তাহলে আল্লাহ্‌র ইচ্ছায় তার তওবা কবুল হওয়ার উপযোগী। এরপরে তওবা কবুল হয়নি এমন ওয়াসওয়াসা বা খুতখুত রাখা উচিত হবে না। কেননা এটি শয়তানের পক্ষ থেকে এবং আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূল যেভাবে উল্লেখ করেছেন যে, একনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত তওবাকারীর তওবা কবুল হয়— এ ধরণের খুতখুত এর বিপরীত।

গুরুত্বপূর্ণ বিধায় এ প্রশ্নোত্তরগুলোও পড়া যেতে পারে: 624 নং।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

সংশ্লিষ্ট প্রশ্নোত্তরসমূহ