Islam QA ওয়েবসাইটের জন্য দান করুন

আমরা আশা করছি, আপনাদের ওয়েবসাইট Islam Q&A (ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব) কে সাপোর্ট দেয়ার জন্য মুক্তহস্তে দান করবেন; যাতে করে ইনশা আল্লাহ্‌ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবায় আপনাদের ওয়েবসাইট তার পথ চলা অব্যাহত রাখতে পারে।

বাবা-মা সন্তানদের আনুগত্য, সদাচরণ ও দোয়া পাওয়ার অধিকার রাখে, যদিও তারা প্রতিপালন ও ভরণপোষণে কসুর করে

21-01-2024

প্রশ্ন 224758

আল্লাহ তায়ালা বলেন: “আর মমতায় তাদের প্রতি বশ্যতার ডানা নত করে দিবে (তাদের সাথে বিনীত আচরণ করবে) আর বলবে: ‘হে আমার রব! আমার পিতামাতার প্রতি দয়া করুন, যেমন তারা আমাকে ছোট থাকতে (দয়া দিয়ে) লালনপালন করেছেন’।” আমি এক ব্যক্তির কাছ থেকে শুনেছি যাকে আমি জ্ঞানের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য মনে করি না; যে পিতা বা মাতা তার সন্তান প্রতিপালনে ভূমিকা রাখেনি, তার জন্য তাদের প্রতি আনুগত্য, সদাচরণ ও দোয়া করা আবশ্যক নয়। কারণ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন: “যেমন তারা আমাকে ছোট থাকতে লালনপালন করেছেন।” আমি এ বক্তব্যের সঠিকতা জানতে পারিনি। শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে কথাটা কি সঠিক? সালাফের মাঝে কেউ কি এমন কথা বলেছেন?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

আলেমরা ছাড়া অন্য কারো থেকে জ্ঞান গ্রহণ করা উচিত নয়। আলেমরা যতদিন আছে ততদিন জ্ঞানও থাকবে। আল্লাহ যদি জ্ঞান ছিনিয়ে নিতে চান তিনি আলেমদের নিয়ে যাবেন। ইমাম মুসলিম তার ‘সহীহ’ বইয়ের ভূমিকায় (১/১৪) মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “নিশ্চয় এই জ্ঞান দ্বীন। সুতরাং তোমরা লক্ষ্য রাখো কার কাছ থেকে তোমাদের দ্বীন গ্রহণ করছ।”

দুই:

বাবা-মা সন্তানের সদ্ব্যবহার পাওয়ার হকদার; যদিও বাবা-মা সন্তান প্রতিপালন ও ভরণপোষণে কসুর করে।

সন্তানের অধিকার নষ্ট করা ও এতে অবহেলা করা একটা গুনাহর কাজ; যার জন্য ব্যক্তিকে পাকড়াও করা হবে, শাস্তি দেওয়া হবে। কিন্তু এটার কারণে বাবা-মায়ের অবাধ্য হওয়া বৈধ নয়; যেটা অন্যতম বড় কবীরা গুনাহ।

সন্তানের অধিকার আদায়ে বাবা অবহেলা করলেই যদি ছেলের জন্য বাবার অধিকার আদায়ে কসুর করা বৈধ হয়ে যেত; তাহলে মুসলিমদের ঘরগুলো নষ্ট হয়ে যেত। ন্যূনতম সংশয়ের জের ধরে সন্তান তার বাবা-মায়ের অবাধ্য হত। নিজের বিচারবিবেচনাকে বাবা-মায়ের অবাধ্য হওয়ার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করত। সে বলত: আমার বাবা আমার ব্যাপারে অবহেলা করেছে আমাকে আমার অধিকার দেয়নি, আমার মা আমার ব্যাপারে অবহেলা করেছেন আমার ও আমার ভাইদের মাঝে ইনসাফ করেনি। এভাবে সে বাবা-মায়ের অবাধ্য হত এবং মনে করত যে, তার উপর তাদের কোনো অধিকার নেই। এতে রয়েছে পরিবার ও সমাজের বিশৃঙ্খলা।

ইবনে বায রাহিমাহুল্লাহুকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: এমন ব্যক্তির ব্যাপারে শরীয়তের বিধান কী যাকে তার বাবা (তার ভাষ্যমতে) লালন-পালন করেনি এবং কোনো ধরনের যত্ন নেয়নি; এমনকি শৈশবকালেও নয়। অথচ তার বাবার সন্তানের জন্য ব্যয় করার সক্ষমতা ছিল। এমন অবস্থায় বাবার সাথে সন্তানের সম্পর্ক বা বন্ধন টিকিয়ে রাখা কি আবশ্যক?

তিনি উত্তর দেন: “হ্যাঁ। সন্তানের জন্য পিতার সাথে সদাচরণ করা, তার অধিকার জানা, তার প্রতি সদয় হওয়া আবশ্যক; যদিও তার বাবা তার সাথে দুর্ব্যবহার করে ও তার ব্যাপারে অবহেলা করে। সেই বাবার উচিত নিজের অবহেলার জন্য আল্লাহর কাছে তাওবা করা। সন্তান প্রতিপালনে কসুর করার জন্য তাকে আল্লাহর কাছে তাওবা করতে হবে। কিন্তু সেটার কারণে সন্তানের জন্য পিতার অবাধ্য হওয়া বৈধ হয়ে যায় না। বরং সন্তানের ওপর ওয়াজিব পিতা-মাতার সদ্ব্যবহার করা; যদিও তারা তার ব্যাপারে কসুর করে। আল্লাহ তাআলা লোকমানের ঘটনা বর্ণনা করার সময় কাফেরদের ব্যাপারে বলেন: “দুনিয়ায় তাদেরকে সৌহার্দ্যের সাথে সঙ্গ দিবে।” (অর্থাৎ) যদিও তারা দুইজন (পিতা-মাতা) কাফের হয়।

সুতরাং সন্তানের উপর ওয়াজিব পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করা, তাদের প্রতি সদয় হওয়া, তাদের প্রতি কোমল হওয়া এবং তাদের সাথে উত্তম আচরণ করা; যদিও তারা তার অধিকার পালনে অবহেলা করে।” শাইখের ওয়েবসাইট থেকে সমাপ্ত।

আর আল্লাহর বাণী: “আর মমতায় তাদের প্রতি বশ্যতার ডানা নত করে দিবে (তাদের সাথে বিনীত আচরণ করবে) আর বলবে: ‘হে আমার রব! আমার পিতামাতার প্রতি দয়া করুন যেমনিভাবে তারা আমাকে ছোট থাকতে (দয়া দিয়ে) লালনপালন করেছেন’[আল-ইসরা: ২৪]

এটা স্বাভাবিক লোকাচার; তথা বাবা-মা তাদের সন্তানদেরকে প্রতিপালন করেন। তাই সন্তানের দায়িত্ব হল তাদের জন্য রহমতের দোয়া করা। নিয়ামতের বিপরীতে কৃতজ্ঞতা মাধ্যমে। আর এই অবস্থার ব্যতিক্রম (পিতা-মাতা প্রতিপালন করে না এমন) খুব কমই ঘটে। ব্যতিক্রমের ভিত্তিতে বিধান প্রযোজ্য হয় না।

প্রশ্নে উল্লেখিত বক্তার বক্তব্যের উপরে কিয়াস করলে এটাও দাঁড়ায়: সন্তান জন্ম দিয়ে বাবা-মা বা তাদের কোনো একজন মারা গেলে তারা এই সন্তানের রহমতের দোয়া পাওয়ার অধিকার রাখে না। কারণ তারা ছোটবেলা থেকে তাকে প্রতিপালন করেনি। যারা ছোটবেলা থেকে তার প্রতিপালন করেছে এবং তার ভরণ-পোষণ দিয়েছে তারাই তার দোয়া পাওয়ার বেশি হকদার। এমন কথা কেউ বলে না।

আল্লাহ তায়ালা সর্বজ্ঞ।

কুরআনের তাফসির পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব ওয়েবসাইটে দেখান