আমরা আশা করছি, আপনাদের ওয়েবসাইট Islam Q&A (ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব) কে সাপোর্ট দেয়ার জন্য মুক্তহস্তে দান করবেন; যাতে করে ইনশা আল্লাহ্ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবায় আপনাদের ওয়েবসাইট তার পথ চলা অব্যাহত রাখতে পারে।
কোন্ কোন্ দিনগুলো তাশরিকের দিন? কোন সাধারণ দিনের উপর তাশরিকের দিনগুলোর বিশেষ বৈশিষ্ট্য কি কি?
আলহামদু লিল্লাহ।.
তাশরিকের দিনগুলো হচ্ছে- ১১ ই যিলহজ্জ, ১২ ই যিলহজ্জ ও ১৩ ই যিলহজ্জ। এ দিনগুলোর ফযিলত সম্পর্কে অনেক আয়াত ও হাদিস উদ্ধৃত হয়েছে, যেমন:
১। আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনে আল্লাহকে স্মরণ কর...”[সূরা বাকারা, আয়াত: ২০৩] নির্দিষ্ট দিনগুলো হচ্ছে- তাশরিকের দিনগুলো। ইবনে উমর (রাঃ) এ তাফসীর করেছেন এবং অধিকাংশ আলেম এ তাফসীরটি গ্রহণ করেছেন।
২। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “নিশ্চয় এ দিনগুলো হচ্ছে- পানাহার ও আল্লাহকে স্মরণ করার দিন।” তাশরিকের দিনগুলোতে আল্লাহর যিকির করার, আল্লাহকে স্মরণ করার কিছু ধরণ রয়েছে; যেমন:
-ফরয নামাযের শেষে তাকবীর দেয়ার মাধ্যমে আল্লাহকে স্মরণ করা। জমহুর আলেমের মতানুযায়ী, তাশরিকের সর্বশেষ দিন পর্যন্ত তাকবীর দেয়া শরিয়তের বিধান।
-কোরবানীর পশু যবেহ করার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ ও ‘আল্লাহু আকবার’ বলে আল্লাহকে স্মরণ করা। হাদীর পশু ও কোরবানীর পশু যবেহ করার সময় তাশরিকের সর্বশেষ দিন পর্যন্ত সম্প্রসারিত।
-পানাহারের সময় আল্লাহকে স্মরণ করা। খাবার ও পানীয় গ্রহণের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা ও শেষে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা শরিয়তের বিধান। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে হাদিসে এসেছে- “নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হন যখন সে খাবার খেয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলে এবং পান করে আলহামদুলিল্লাহ বলে”[সহিহ মুসলিম (২৭৩৪)]
-তাশরিকের দিনগুলোতে জমরাতে কংকর নিক্ষেপ করার সময় তাকবীর উচ্চারণ করে আল্লাহকে স্মরণ করা। এটি হাজীদের জন্য খাস।
-এ ছাড়াও রয়েছে সাধারণভাবে আল্লাহকে স্মরণ করা। তাশরিকের দিনগুলোতে বেশি বেশি সাধারণ যিকির করা মুস্তাহাব। উমর (রাঃ) মীনাতে তাঁর তাবুতে ‘তাকবীর’ দিতেন। লোকেরা তাঁর তাকবীর শুনে নিজেরাও তাকবীর দিত। এভাবে গোটা মীনা তাকবীরে তাকবীরে প্রকম্পিত হয়ে উঠত। আল্লাহ তাআলা বলেন: “অতঃপর যখন তোমরা হজ্জের অনুষ্ঠানাদি সমাপ্ত করবে তখন আল্লাহ্কে এভাবে স্মরণ করবে যেভাবে তোমরা তোমাদের পিতৃ পুরুষদের স্মরণ করে থাক, অথবা তার চেয়েও অধিক। মানুষের মধ্যে যারা বলে, ‘হে আমাদের রব! আমাদেরকে দুনিয়াতেই দিন’। আখেরাতে তার জন্য কোনও অংশ নেই। আর তাদের মধ্যে যারা বলে, ‘হে আমাদের রব! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দিন এবং আখেরাতেও কল্যাণ দিন এবং আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন”[সূরা বাকারা, আয়াত: ২০০-২০১]
সলফে সালেহীনদের মতে, তাশরিকের দিনগুলোতে অধিক দোয়া করা মুস্তাহাব।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী- “নিশ্চয় এ দিনগুলো হচ্ছে- পানাহার করা ও আল্লাহকে স্মরণ করার দিন।” এ বাণীতে ইঙ্গিত রয়েছে যে, ঈদের দিনসমূহে পানাহার অব্যাহত থাকলে যিকির-আযকার ও নেক আমল করার ক্ষেত্রে এটি সহায়ক হবে। নেয়ামতের সর্বোত্তম কৃতজ্ঞতা হচ্ছে- প্রাপ্ত নেয়ামতকে নেকীর কাজে লাগানো।
আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে উত্তম খাবার ভক্ষণের ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর নেয়ামতকে আল্লাহর অবাধ্যতার কাজে লাগায় সে আল্লাহর নেয়ামতকে অস্বীকার করে; নেয়ামতের বদলায় কুফরী করে। এ নেয়ামত তার থেকে ছিনিয়ে নেয়ায় উপযুক্ত। কবি বলেন:
“তুমি যে নেয়ামতের মধ্যে আছ সে নেয়ামতের কদর কর; কারণ পাপকাজ নেয়ামতকে উঠিয়ে দেয়
অব্যাহতভাবে ইলাহের শুকরিয়া আদায় কর; কারণ ইলাহের শুকরিয়া বিপদাপদ দূর করে দেয়।”
৩। এই দিনগুলোতে রোযা রাখার ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। “তোমরা এ দিনগুলোতে রোযা রেখ না। কারণ এ দিনগুলো পানাহার ও আল্লাহর যিকিরের দিন”[মুসনাদে আহমাদ (১০২৮৬), আলবানী ‘সিলসিলা সহিহা’ গ্রন্থে (৩৫৭৩) হাদিসটিকে ‘সহিহ’ বলেছেন] দেখুন: ইবনে রজব এর ‘লাতায়েফুল মাআরিফ’ পৃষ্ঠা- ৫০০
হে আল্লাহ! আমাদেরকে নেককাজ করার তাওফিক দিন, মৃত্যুর সময় আমাদেরকে অবিচল রাখুন। হে মহান দাতা! আপনার রহমত দিয়ে আমাদের প্রতি রহম করুন। সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য।