আমরা আশা করছি, আপনাদের ওয়েবসাইট Islam Q&A (ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব) কে সাপোর্ট দেয়ার জন্য মুক্তহস্তে দান করবেন; যাতে করে ইনশা আল্লাহ্ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবায় আপনাদের ওয়েবসাইট তার পথ চলা অব্যাহত রাখতে পারে।
অযুর সময় দাড়ি খিলাল করার হুকুম কী? এ ব্যাপারে আলেমদের অগ্রগণ্য মত কোনটি?। আবিষয়ে বিস্তারিত জানা নিয়ে সঙশ
আলহামদু লিল্লাহ।.
এক:
দাড়ি যদি এমন পাতলা হয় যে চেহারার চামড়া এর নিচ থেকে দেখা যায়, তাহলে দাড়ি খিলাল করে এর ভেতরের অংশ ধৌত করা ওয়াজিব। কারণ সেটি চেহারার সীমানার অন্তর্ভুক্ত।
আর যদি দাড়ি এতটা ঘন হয় যাতে চেহারার চামড়া নিচ থেকে দেখা না যায়, তাহলে দাড়ির ভেতরের অংশ ধৌত করা ওয়াজিব নয়। বরং দাড়ি খিলাল করা মুস্তাহাব। এটা অধিকাংশ আলেমের মত। আর এটিই অগ্রগণ্য অভিমত।
ইবনে কুদামা রাহিমাহুল্লাহ বলেন: ‘দাড়ি যদি পাতলা হয় যার ফলে ত্বক প্রকাশ পায়, তাহলে ভেতরের অংশ ধোয়া ওয়াজিব হবে। আর যদি ঘন হয় তাহলে ভেতরের অংশ ধৌত করা ওয়াজিব নয়। বরং খিলাল করা মুস্তাহাব।
ইসহাক বলেন: যদি সে ইচ্ছাকৃত দাড়ি খিলাল করা ছেড়ে দেয়, তাহলে পুনরায় অযু করতে হবে। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দাড়ি খিলাল করতেন, যেমনটি উসমান ইবনে আফ্ফান তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন। তিরমিযী বলেন: এটি ‘হাসান সহীহ’ হাদীস। বুখারী বলেন: এটি উক্ত পরিচ্ছেদের সবচেয়ে বিশুদ্ধ হাদীস। আবু দাউদ আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অযু করার পর অঞ্জলি ভরে পানি নিয়ে চিবুকের নিচে ঢুকিয়ে দিতেন। তিনি বলতেন: “আমার মহান রব আমাকে এভাবে নির্দেশ দিয়েছেন।” ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অযু করার সময় তার চেহারার দুই পাশে ঘষতেন। তারপর তিনি তার আঙুল দিয়ে নিচের দিক থেকে তার দাড়ি খিলাল করতেন।[হাদীসটি ইবনে মাজাহ বর্ণনা করেন]
আত্বা ও ইবনে সাওর বলেন: চেহারায় থাকা চুল ঘন হলেও এর ভেতর পর্যন্ত ধৌত করা ওয়াজিব যেমনটি জানাবতের গোসলের ক্ষেত্রে ওয়াজিব। কারণ জানাবতের গোসলে যেমন তিনি চেহারা ধোয়ার ব্যাপারে আদিষ্ট, তেমনিভাবে অযুতেও তিনি চেহারা ধোয়ার ব্যাপারে আদিষ্ট। একটির ক্ষেত্রে যা আবশ্যক হয়, অনুরূপ অন্যটির ক্ষেত্রেও তা আবশ্যক।
অধিকাংশ আলেমের মতে এটি (জানাবতের সময়) আবশ্যক নয়। তাই খিলাল করাও আবশ্যক নয়। খিলাল পরিত্যাগের ক্ষেত্রে যারা ছাড় দিয়েছেন তাদের মাঝে রয়েছেন: ইবনে উমর, হাসান ইবনে আলী, ত্বাউস, নখয়ী, শা’বী, আবুল আলিয়া, মুজাহিদ, আবুল কাসেম, মুহাম্মাদ ইবনে আলী, সাঈদ ইবনে আব্দুল আযীয ও ইবনুল মুনযির। কারণ আল্লাহ তায়ালা ধৌত করার নির্দেশ দিয়েছেন; তিনি খিলাল করার কথা উল্লেখ করেননি। যে সাহাবীরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অযুর বিবরণ দিয়েছেন তাদের অধিকাংশই খিলাল করার কথা বর্ণনা করেননি। যদি এটি ওয়াজিব হত তাহলো কোনো অযুতে তিনি এটি ছাড়তেন না। প্রত্যেক অযুতেই যদি তিনি দাড়ি খিলাল করতেন তাহলে যারা তার অযুর বিবরণ দিয়েছেন তারা সবাই বা তাদের অধিকাংশই এটি বর্ণনা করত। তিনি কখনও খিলাল না করা প্রমাণ করে যে ঘন চুলের নিচে যা আছে সেটি ধৌত করা ওয়াজিব নয়। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাড়ি ঘন ছিল। খিলাল করা ও প্রকৃষ্টভাবে খিলাল করা ছাড়া এই দাড়ির নিচে পানি পৌঁছায় না। তিনি কখনো কখনো খিলাল করা থেকে এটি মুস্তাহাব হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।’[সমাপ্ত][আল-মুগনী(১/৭৪)]
নববী রাহিমাহুল্লাহ বলেন: ‘ঘন দাড়ির উপরিভাগ ধোয়া ওয়াজিব; এতে কোনো মতানৈক্য নেই। এর ভেতরের দিক ও নিচের ত্বক ধৌত করা ওয়াজিব নয়। এটাই বিশুদ্ধ ও প্রসিদ্ধও প্রসিদ্ নেই। এর ভেতরের অংশ তথ মাযহাব, যা ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহ দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছেন এবং মাযহাবের অধিকাংশ আলেম এটি অকাট্যভাবে সমর্থন করেছেন। এটি মালেক, আবু হানীফা, আহমদসহ সাহাবী-তাবেয়ীদের অধিকাংশ আলেমের মত।
রাফেয়ী একটি মত বর্ণনা করেছেন যে, (দাড়ির নিচে থাকা) ত্বক ধৌত করা আবশ্যক। এটি মুযানী ও আবু সাওরের মত।’[সমাপ্ত][আল-মাজমূ (১/৪০৮)]
ঘন দাড়ি খিলাল করা ওয়াজিব নয় এবং ঘন দাড়ির ভেতরের অংশ ধোয়া আবশ্যক নয়; এর পক্ষে জমহুর আলেমদের অন্যতম দলীল হলো বুখারীর (১৪০) বর্ণিত একটি হাদীস, ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অযু করা শুরু করলেন। এজন্য চেহারা ধৌত করলেন। তিনি এক কোষ পানি নিয়ে তা দিয়ে কুলি করলেনও নাকে পানি দিলেন। তারপর এক কোষ পানি নিয়ে তা দিয়ে এমনটি করলেন। তিনি তার অন্য হাতের সাথে একত্রিত করে উভয়টি দিয়ে চেহারা ধৌত করলেন। … তারপর বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসা্লামকে এভাবেই অযু করতে দেখেছি।”
হাদীসটি থেকে দলীল প্রদানের দিকটি হলো: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘন দাড়ি ছিল। এক অঞ্জলি পানি চেহারা ধৌত করা এবং দাড়ির নিচের ত্বক ধোয়ার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ না। সুতরাং বোঝা গেল যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু এর উপরিভাগ ধৌত করার মাঝেই সীমাবদ্ধ থেকেছেন।[আরো দেখুন: আল-মাজমূ (১/৪০৮), নাইলুল আওত্বার (১/১৯০)]
দুই:
যারা দাড়ি খিলাল করা ওয়াজিব মনে করেন, তাদে প্রদত্ত দলীল হলো আবু দাউদ (১৪৫) বর্ণিত হাদীস, আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অযু করার সময় এক অঞ্জলি পানি নিয়ে সেটি চোয়ালের নিম্নদেশে (থুতনির নিচে) লাগিয়ে দাড়ি খিলাল করতেন এবং বলতেন: “আমার মহান রব আমাকে এমনটি করার নির্দেশ দিয়েছেন।”
হাদীসটি মতভেদপূর্ণ। হাফেয ইবনে হাজার রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “আনাসের হাদীসটি আবু দাউদ বর্ণনা করেন। এর সনদে রয়েছেন আল-ওয়ালীদ ইবনে যারওয়ান। তার অবস্থা অজ্ঞাত।…
আনাস থেকে এর অন্য বেশ কিছু সনদ রয়েছে যেগুলো দুর্বল।”[আত-তালখীসুল হাবীর (১/৮৬) থেকে সংক্ষেপে সমাপ্ত]
হাদীসটিকে ইবনুল কাইয়িম তার ‘তাহযীবুস সুনান’ বইয়ে এবং আলবানী তার ‘সহীহ আবু দাউদ’ গ্রন্থে সহিহ বলেছেন।
হাদীসটি সহিহ হিসেবে ধরে নিলেও অন্যান্য দলীলের সাথে সমন্বয় করতে গিয়ে উক্ত হাদীসের নির্দেশকে মুস্তাহাব অর্থে গ্রহণ করতে হবে। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অযু বর্ণনাকারীদের অধিকাংশ দাড়ি খিলাল করার বিষয়টি উল্লেখ করেননি। যদি এটি ওয়াজিব হত, তাহলে তিনি কোনো অযুতেই তা বাদ দিতেন না। আর যদি প্রত্যেক অযুতে তিনি সেটা করতেন, তাহলে যারা তাঁর অযু বর্ণনা করেছেন তাদের সবাই বা অধিকাংশই এটি বর্ণনা করতেন।
তিন:
লক্ষ্য রাখতে হবে যে, ঘন দাড়ির উপরিভাগ লম্বা হলেও তা ধোয়া ওয়াজিব; কেননা এটি চেহারার সীমানাভুক্ত। তাই্ এর বাহ্যিক দিক ধোয়া আবশ্যক।
শাই্খ ইবনে উসাইমীন রাহিমাহুল্লাহ বলেন: ‘অযুর অন্যতম সুন্নত হলো: ঘন দাড়ি খিলাল করা। দাড়ি পাতলাও হতে পারে, আবার ঘনও হতে পারে।
পাতলা দাড়ি হলো এমন দাড়ি যা ত্বক ঢেকে রাখে না। এমন দাড়ি এবং এর অভ্যন্তরের ত্বক ধোয়া আবশ্যক। কারণ এর ভেতরের অংশ প্রকাশমান থাকা অবস্থায় চেহারার গণ্ডিভুক্ত যা দিয়ে ব্যক্তিরা একে অন্যের সম্মুখীন হয়। আর ঘন দাড়ি হলো এমন দাড়ি যা ত্বক ঢেকে রাখে। এর উপরিভাগই কেবল ধোয়া ওয়াজিব। মাযহাবের প্রসিদ্ধ মত অনুসারে এমন দাড়ি লম্বা হলেও তা ধোয়া ওয়াজিব।
অন্য মত অনুসারে, এমন দাড়ি লম্বা হলে সেটি ধোয়া ওয়াজিব নয় যেমনিভাবে চুল লম্বা হলে তা মাসেহ করা ওয়াজিব নয়। যদিও ওয়াজিব হওয়ার মতটিই সঠিক হওয়ার অধিক নিকটবর্তী।
দাড়ির সাথে চুলের পার্থক্য হলো: দাড়ি যত লম্বাই্ হোক তা দিয়ে মানুষের মুখোমুখি হওয়া যায়। সুতরাং দাড়ি চেহারার সীমানাভুক্ত। আর মাথার লম্বা চুল মাথার অন্তর্ভুক্ত না। কারণ رأس (মাথা) শব্দটি গৃহীত হয়েছে তারাউস থেকে যার অর্থ উর্ধ্বত্ব। আর মাথার সীমানা ছাড়িয়ে যা নিচে নেমে গিয়েছে, তা উর্ধ্বে নয়।”[সমাপ্ত][আশ-শারহুল মুমতি (১/১০৬)]
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।