Islam QA ওয়েবসাইটের জন্য দান করুন

আমরা আশা করছি, আপনাদের ওয়েবসাইট Islam Q&A (ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব) কে সাপোর্ট দেয়ার জন্য মুক্তহস্তে দান করবেন; যাতে করে ইনশা আল্লাহ্‌ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবায় আপনাদের ওয়েবসাইট তার পথ চলা অব্যাহত রাখতে পারে।

ইহুদি ও খ্রিষ্টানের জবাইকৃত পশু খাওয়ার শর্তাবলি

23-12-2024

প্রশ্ন 88206

আমি জানি, যে প্রাণী খাওয়া যায় সেটি জবাই করার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ পড়া আবশ্যক এবং যে প্রাণী জবাই করার সময় আল্লাহর নাম বলা হয়নি, সেটি থেকে খাওয়া জায়েয নয়। কিন্তু কখনো কখনো একজন মুসলিম অমুসলিম দেশে সফর করতে ও সেখানে কয়েক বছর থাকতে বাধ্য হয়; চাকুরীর কারণে অথবা পড়ালেখার কারণে। সে কি এই লম্বা সময়টুকু গোশত খাওয়া থেকে পুরোপুরি বিরত থাকবে? নাকি এ অবস্থায় সে গোশত খাওয়ার ক্ষেত্রে নিরুপায় ব্যক্তির অন্তর্ভুক্ত হবে? নাকি তার জন্য শুধু খাওয়ার সময় বিসমিল্লাহ পড়াই যথেষ্ট হবে?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

জবাইকৃত পশু হালাল হওয়ার শর্ত ‘বিসমিল্লাহ’ বলা। ভুলে গেলে কিংবা না জেনে থাকলে এই আবশ্যকতা বাতিল হয়ে যায় না। এটিই আলেমদের অভিমতগুলোর মধ্যে প্রাধান্যপ্রাপ্ত। (85669) নং প্রশ্নের উত্তর দেখুন।

দুই:

কিতাবী (ইহুদি ও খ্রিষ্টান) ব্যক্তির জবাইকৃত পশু দুই শর্তে হালাল:

১। সে মুসলিমের মত করেই জবাই করবে। সে খাদ্যনালী ও শ্বাসনালী উভয়টাই কেটে ফেলবে এবং রক্ত প্রবাহিত করবে। যদি সে শ্বাসরুদ্ধ করে কিংবা বৈদ্যুতিক শক দিয়ে অথবা পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করে, তাহলে তার জবাই হালাল হবে না। অনুরূপভাবে একজন মুসলিমও যদি এমন করে, তাহলে তার জবাইও হালাল হবে না।

২। সে জবাইকালে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নাম না বলা; যেমন: মাসীহ বা অন্য কারো নাম। যেহেতু আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:

وَلَا تَأْكُلُوا مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللَّهِ عَلَيْهِ

(জবাইকালে) আল্লাহর নাম নেওয়া হয়নি এমন প্রাণীর মাংস খেয়ো না।[সূরা আন’আম: ১২১] এছাড়া তিনি হারাম প্রাণীসমূহের ব্যাপারে বলেন:

 إِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةَ وَالدَّمَ وَلَحْمَ الْخِنْزِيرِ وَمَا أُهِلَّ بِهِ لِغَيْرِ اللَّهِ 

আল্লাহ তোমাদের জন্য মৃতদেহ, শূকরের মাংস এবং আল্লাহ ছাড়া অন্যের জন্য উৎসর্গীকৃত (অথবা জবাইকালে আল্লাহর নাম না নিয়ে দেব-দেবীর নামে জবাইকৃত প্রাণীর মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ করেছেন)।[সূরা বাকারা: ১৭৩]

শাইখ ইবনে উছাইমীন রাহিমাহুল্লাহ বলেন: ‘এখানে উদ্দেশ্য হলো যে প্রাণী জবাই করার সময় আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর নাম নেওয়া হয়েছে। যেমন, যদি সে বলে: ‘যীশুর নামে’ অথবা ‘মুহাম্মাদের নামে’ অথবা ‘জিবরীলের নামে’ অথবা ‘লাতের নামে’ প্রভৃতি।’[তাফসীরু সূরাতিল বাকারা থেকে সমাপ্ত]

এই নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত হবে সে সমস্ত প্রাণী যেগুলো মাসীহ অথবা যাহরার নৈকট্য অর্জনের জন্য জবাই করা হয়, যদিও সেগুলোতে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নাম উল্লেখ না করা হয়। এটিও হারাম।

শাইখুল ইসলাম রাহিমাহুল্লাহ বলেন: ‘আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে মুসলিমগণ কর্তৃক হাদী ও কুরবানী জবাই করার অনুরূপ আহলে-কিতাব সম্প্রদায় তাদের বিভিন্ন উৎসবে যা জবাই করে এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে যা জবাই করে; যেমন- মাসীহ ও যাহরার জন্য জবাই করা; এ এ ব্যাপারে ইমাম আহমদ থেকে দুটি বর্ণনা রয়েছে। তন্মধ্যে যেটি তার বক্তব্য হিসেবে প্রসিদ্ধ সেটি হলো: এমন প্রাণী খাওয়া বৈধ নয়, যদিও তাতে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নাম নেওয়া না হয়। এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত হয়েছে আয়েশা ও আব্দুল্লাহ ইবন উমর থেকে …’[ইকতিদাউস সীরাতিল মুস্তাকীম (১/২৫১) থেকে সমাপ্ত]

তিন:

মুসলিম অথবা কিতাবী যদি কোনো প্রাণী জবাই করে এবং জানা না যায় যে তাতে আল্লাহর নাম উল্লেখ করা হয়েছে, নাকি হয়নি এমতাবস্থায় এর থেকে খাওয়া জায়েয। যে ব্যক্তি এই জবাই্কৃত প্রাণী খাবে সে বিসমিল্লাহ বলে খাবে। কারণ বুখারী (২০৫৭) বর্ণনা করেন: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন: একদল লোক বলল: হে আল্লাহর রাসূল! একদল লোক আমাদের কাছে গোশত নিয়ে আসে। আমরা জানি না তারা কি এতে আল্লাহর নাম নিয়েছে, নাকি নেয়নি। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “তোমরা এতে ‘বিসমিল্লাহ’ (আল্লাহর নাম) বলবে এবং খাবে।”

শাইখ ইবনে উছাইমীন রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “মুসলিম অথবা কিতাবী ব্যক্তি যা জবাই করেছে সেটি কীভাবে জবাই করেছে এবং সেখানে কি সে আল্লাহর নাম বলেছে, নাকি বলেনি তা জিজ্ঞাসা করার আবশ্যকতা নেই। এমনকি সেটি উচিতও নয়। কারণ এটি দ্বীনের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি। ইহুদিরা যা জবাই করেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেটি খেয়েছেন এবং কোনো ধরনের প্রশ্ন করেননি। সহীহ বুখারী ও অন্যান্য গ্রন্থে রয়েছে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন: একদল লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেন: একদল লোক আমাদের কাছে গোশত নিয়ে আসে। আমরা জানি না তারা এতে আল্লাহর নাম বলেছে, নাকি বলেনি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “তোমরা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে এটি খাবে।” আয়েশা বলেন: তারা সম্প্রতি কুফর ছেড়ে মুসলিম হয়েছিলেন। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে কোনো প্রশ্ন করা ছাড়াই এটি খাওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। যদিও তাদের কাছে ইসলামের কিছু বিধি-বিধান অজানা থাকতে পারে; যেহেতু তারা সম্প্রতি কুফর ত্যাগ করেছে।”[শাইখ ইবন উছাইমীনের ‘রিসালাতুন ফী আহকামিল উদহিয়া ওয়ায-যাকাত]

চার:

উপর্যুক্ত আলোচনার উপর ভিত্তি করে বলা যায়, যে ব্যক্তি কোনো অমুসলিম ভূমিতে সফর করল যেখানে থাকা অধিকাংশ জবাইকারী খ্রিষ্টান অথবা ইহুদি, তার জন্য তাদের জবাই করা প্রাণী থেকে খাওয়া হালাল হবে। কিন্তু যদি জানতে পারে যে তারা ঐ প্রাণীকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হত্যা করে অথবা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নাম নেয়, তাহলে জায়েয হবে না যেমনটি ইতঃপূর্বে বলা হয়েছে।

আর যদি জবাইকারী মূর্তিপূজারী অথবা সমাজতন্ত্রের অনুসারী হয়ে থাকে, তাহলে তার জবাইকৃত প্রাণী খাওয়া হালাল হবে না।

আর যেহেতু জবাইকৃত প্রাণী হারাম, সেহেতু নিরুপায় হওয়ার যুক্তি দিয়ে এর থেকে খাওয়া জায়েয হবে না; যতক্ষণ মানুষের কাছে এমন কিছু খাদ্য থাকে যা খেয়ে সে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। যেমন: মাছ, সবজি প্রভৃতি খাবার।

শাই্খ আব্দুর রহমান আল-বাররাক হাফিযাহুল্লাহ বলেন: কাফেরদের দেশে যে মাংস পাওয়া যায় সেটি কয়েক প্রকার:

মাছ সর্বাবস্থায় হালাল, এটি জবাই করা অথবা বিসমিল্লাহ বলার উপর নির্ভর করে না। আর বাকি প্রকারগুলোর মাঝে যদি গোশত প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরা আহলে-কিতাব ইহুদি অথবা খ্রিষ্টান হয়ে থাকে এবং তাদের ব্যাপারে জানা যায় যে তারা বৈদ্যুতিক শক দেওয়া, শ্বাসরুদ্ধ করা অথবা পশুকে মাথায় আঘাত করে হত্যা করে না যেমনটা পশ্চিমা দেশগুলোতে প্রচলিত, তাহলে এই গোশতগুলো হালাল হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন: “আজ তোমাদের জন্য বৈধ করা হল সব ভাল বস্তু এবং যাদেরকে কিতাব প্রদান করা হয়েছে, তাদের খাবার তোমাদের জন্য বৈধ এবং তোমাদের খাবার তাদের জন্য বৈধ।” পক্ষান্তরে যদি তারা এই সমস্ত পন্থার কোনো একটি দিয়ে প্রাণীগুলো হত্যা করে থাকে, তাহলে গোশত হারাম। কারণ তখন এগুলো শ্বাসরুদ্ধ করা এবং পিটিয়ে হত্যা করা প্রাণীর অন্তর্ভুক্ত হবে। আর যদি গোশত প্রক্রিয়ার প্রতিষ্ঠান ইহুদি-খ্রিষ্টান ছাড়া অন্য ধর্মাবলম্বীদের হয়ে থাকে, তাহলে তাদের বিক্রি করা গোশত হারাম। আল্লাহ তায়ালা বলেন: “(জবাইকালে) আল্লাহর নাম নেওয়া হয়নি এমন প্রাণীর মাংস খেয়ো না।” সুতরাং একজন মুসলিমের উচিত হলো সুস্পষ্ট হারাম থেকে বেঁচে থাকা এবং সংশয়পূর্ণ বিষয়গুলো এড়িয়ে চলা; যাতে তার দ্বীন সংরক্ষিত থাকে এবং শরীর হারাম খাদ্যের মাধ্যমে বেড়ে ওঠা থেকে বেঁচে থাকে।”[সমাপ্ত]

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

আহলে কিতাবদের যবেহের বিধান
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব ওয়েবসাইটে দেখান