আমরা আশা করছি, আপনাদের ওয়েবসাইট Islam Q&A (ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব) কে সাপোর্ট দেয়ার জন্য মুক্তহস্তে দান করবেন; যাতে করে ইনশা আল্লাহ্ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবায় আপনাদের ওয়েবসাইট তার পথ চলা অব্যাহত রাখতে পারে।
আমি একটি সরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করি। আমি এমন একটি কাজ করেছি যার মাধ্যমে সরকারের অনেক অর্থ বাঁচিয়ে দিয়েছি। কিন্তু, তারা এর জন্য আমাকে ভালমানের কোন ভাতা দেয়নি। অথচ তারা যদি তৃতীয় কোন পক্ষের মাধ্যমে কাজটি করাত তাহলে এর জন্য অনেক বড় অংকের অর্থ পরিশোধ করতে হত। তখন একজন কর্মকর্তা আমাকে পরামর্শ দিল যে, তুমি এ কাজের খরচ দেখিয়ে একটি ভাউচার নিয়ে আস যাতে করে মনে হবে যে, তৃতীয় কোন পক্ষের মাধ্যমে কাজটি সম্পাদিত হয়েছে। এভাবে আমি আমার অধিকার নিতে পারি। এ অর্থ কি হালাল হবে; নাকি হারাম? কেন?
আলহামদু লিল্লাহ।.
এই অর্থ আপনার জন্য হারাম। আপনার জন্য এই অর্থ গ্রহণ করা নাজায়েয। কেননা আপনি যে দায়িত্বটি পালন করেছেন সেটা নিম্নোক্ত অবস্থাগুলোর কোন একটি থেকে খালি নয়:
এক: আপনি যে দায়িত্ব পালন করেছেন সেটা আপনার চাকুরীরই অংশ। এর বদলে আপনি মাসিক বেতন গ্রহণ করছেন। সুতরাং আপনার কর্তব্য হচ্ছে- প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করা এবং আপনি যে বেতন নিচ্ছেন সেটার বদলে কাজ করা। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: "হে মুমিনগণ, তোমরা অঙ্গীকারসমূহ পূর্ণ কর।"[সূরা মায়িদা, আয়াত: ১] এ ক্ষেত্রে আপনি আপনার বেতনের অতিরিক্ত আর কোন কিছু পাবেন না। কেননা আপনি এ বেতনের ভিত্তিতে কাজ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। যদিও আপনার এ কাজের মাধ্যমে রাষ্ট্রের বড় ধরণের অর্থ বেঁচে যাক না কেন; যেমনটি আপনি উল্লেখ করেছেন।
দুই: আপনার কাজটি আপনার চাকুরীর বাইরের দায়িত্ব হওয়া। কিন্তু, যে ব্যক্তি এ কাজটি করবে তার জন্য রাষ্ট্র একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাতা নির্ধারণ করে রেখেছে। যদি আপনি কাজটি সম্পাদন করেন তাহলে আপনার জন্য এ ভাতাটি গ্রহণ করা জায়েয হবে। তবে, নির্দিষ্ট এ ভাতার চেয়ে বেশি গ্রহণ করার জন্য কলাকৌশলের আশ্রয় নেয়া জায়েয হবে না। কেননা রাষ্ট্র অতিরিক্ত অর্থ দিতে রাজি নয়। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: "হে মুমিনগণ, তোমরা পরস্পরের মধ্যে তোমাদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না, তবে পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসার মাধ্যমে হলে ভিন্ন কথা। আর তোমরা নিজেরা নিজদেরকে হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে পরম দয়ালু।"[সূরা নিসা, আয়াত: ২৯] সুতরাং হয় আপনি নির্দিষ্ট ঐ ভাতার বিনিময়ে কাজটি করবেন; কিংবা আপনি কাজটি করার দরকার নেই।
এছাড়াও আরও দুইটি অবস্থা হতে পারে। যদিও বাস্তবতার নিরিখে সে অবস্থাদ্বয় একটু দূরবর্তী তবুও জবাবটা পরিপূর্ণ হওয়ার জন্য আমরা সে দুইটি অবস্থা সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনাকে ধরে নিচ্ছি।
তিন: এ কাজটি আপনার দায়িত্বের বাহিরে হওয়া এবং রাষ্ট্র এ দায়িত্ব পালনকারীর জন্য কোন ভাতা নির্ধারণ না করা এবং আপনার কাছ থেকেও এ কাজটি পালন করার দাবী না করা। এ অবস্থায় আপনি যদি এ কাজটি করেন তাহলে আপনি কিছুই পাবেন না; এমনকি এতে যদি রাষ্ট্রের অনেক অর্থ বেঁচে যায় তবুও। কেননা রাষ্ট্র আপনাকে কিছু পরিশোধ করার দায়িত্ব নেয়নি। ইবনে কুদামা (রহঃ) 'আল-মুগনি' গ্রন্থে বলেন: "যে ব্যক্তি কোন পারিশ্রমিক নির্ধারণ করা ছাড়া কারো জন্য কোন কাজ করে সে ব্যক্তি কোন বিনিময় পাবে না। এ বিষয়ে আমরা কোন মতভেদ জানি না।"[সামান্য পরিমার্জিত (৬/২২)]
চার: পূর্বের অবস্থার মত। তবে, রাষ্ট্র আপনাকে এ কাজ করার অনুমতি দিয়েছে। এবং আপনি পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কাজটি করবেন এটা সুবিদিত। এ অবস্থায় আপনি যদি কাজটি করেন তাহলে আপনি সমধরণের কাজের অনুরূপ পারিশ্রমিক পাবেন। তাই আপনি রাষ্ট্রের কাছে সমধরণের কাজ করে অন্যেরা যে পারিশ্রমিক দাবী করে আপনিও সেটা দাবী করতে পারেন। হাম্বলি মাযহাবের আলেম আল্লামা রুহাইবানী তার 'মাতালিবু উলিন নুহা ফি শারহি গায়াতিল মুনতাহা' গ্রন্থে বলেন: যদি কোন ব্যক্তি তার কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক নেয়ার শর্তে কাজ করে; যেমন- লবণ উৎপাদনকারী, দর্জি, পরিমাপকারী, ওজনকারী ও এদের মত অন্য যে মানুষ কাজের মাধ্যমে উপার্জন করে এবং কাজের মালিক তাকে কাজ করার অনুমতি দেয় তাহলে সে প্রথা অনুযায়ী প্রচলিত মজুরীর হকদার হবে।[সমাপ্ত (৪/২১২)]
যদি ধরে নেয়া হয় যে, শেষোক্ত অবস্থাটি ঘটেছে সে ক্ষেত্রেও আপনার মিথ্যার আশ্রয় নেয়ার অধিকার নেই। যেহেতু মিথ্যার আশ্রয় নেয়া ছাড়া আপনি আপনার অধিকার পেতে পারেন।
সর্বশেষ আমরা আপনাকে সাবধান করছি যে, একজন কর্মকর্তা রাষ্ট্রীয় অর্থ কলাকৌশল করে গ্রহণ করার জন্য আপনার সাথে একমত হওয়া হারাম। এ কলাকৌশল দ্বারা গৃহীত এ অর্থ আপনার জন্য হালাল হবে না। আপনার জন্য উপদেশ হল: আপনি আল্লাহ্কে ভয় করুন, হালাল উপার্জনের ব্যাপারে সচেষ্ট হোন। হালাল উপার্জনের মধ্যেই আল্লাহ্ আপনার জন্য বরকত দিবেন। যদি ইতিপূর্বে অন্যায়ভাবে কোন সম্পদ গ্রহণ করা হয়ে থাকে তাহলে সেটা ফেরত দেওয়া আবশ্যকীয়। যদি ফেরত দেয়া সম্ভবপর না হয় তাহলে মুসলমানদের কল্যাণে বা কোন ভাল কাজে সেটা ব্যয় করে দিতে হবে।
শাইখ বিন বায (রহঃ) কে ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে ব্যক্তি যা পাওয়ার অধিকার নেই সেটা গ্রহণ করেছে জবাবে তিনি বলেন: আপনার উপর আবশ্যকীয় হচ্ছে- এ সম্পদ ফেরত দেওয়া। কেননা আপনি এ দায়িত্ব পালন না করার কারণে আপনি সেটার হকদার নন। যদি সেটা ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভবপর না হয় তাহলে কোন কল্যাণের পথে সেটা ব্যয় করুন; যেমন- গরীবদের মাঝে সদকা করে দেওয়া কিংবা কোন কল্যাণমুখী প্রজেক্টে দান করে দেওয়া। আর সাথে সাথে তওবা ও ইস্তিগফার করা এবং ভবিষ্যতে এমন কাজ পুনরায় করা থেকে সতর্ক থাকা।
[ফাতাওয়া উলামায়িল বালাদিল হারাম, পৃষ্ঠা-৮৩১]
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।