আলহামদু লিল্লাহ।.
গণকদেরকে বিশ্বাস না করলেও তাদেরকে জিজ্ঞেস করা নাজায়েয
গণকদের কাছে কিছু জানতে চাওয়া নাজায়েয। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি কোন গণকের কাছে এসে তাকে কোন কিছু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল তার চল্লিশ দিনের নামায কবুল হবে না।”[সহিহ মুসলিম (২২৩০)]
এটি ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে বলা হয়েছে যে ব্যক্তি গণককে বিশ্বাস না করে তাকে জিজ্ঞেস করেছে। আর বিশ্বাস করলে বিষয়টি আরও বেশি গুরুতর। যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি ঋতুবতী নারীর সাথে সঙ্গম করল কিংবা নারীর গুহ্যদ্বারে সঙ্গম করল, কিংবা কোন জ্যোতিষীর কাছে গমন করে তার কথায় বিশ্বাস করল: সে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি আল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন সেটাকে অবিশ্বাস করল।”[মুসনাদে আহমাদ (৯৮৮৯), সুনানে আবু দাউদ (৩৯০৪), সুনানে তিরমিযি (১৩৫), সুনানে ইবনে মাজাহ (৯৩৬), আলবানী ‘সহিহ ইবনে মাজাহ’ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
জ্যোতিষী ও গণকদের কথা পড়া হারাম
জ্যোতিষী ও গণকদের কথা পড়া হারাম। এটি তাদের কাছে কিছু জানতে চাওয়ার কাছাকাছি।
‘কাশ্শাফুল ক্বিনা’ গ্রন্থে (১/৪৩৪) বলেন: “দ্ব্যার্থহীন ভাষায় উল্লেখ আছে যে, আহলে কিতাবদের গ্রন্থ পড়া নাজায়েয (অর্থাৎ ইমাম আহমাদ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় উল্লেখ করেছেন)। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন উমর (রাঃ) এর সাথে তাওরাতের একটি কপি দেখতে পেলেন তিনি রেগে গিয়ে বললেন: ওহে খাত্তাবের ছেলে! আপনি কি কোন সন্দেহে আছেন?[আল-হাদিস] বিদাতীদের গ্রন্থগুলো পড়াও নাজায়েয এবং যে সব গ্রন্থগুলোতে হক্ব ও বাতিল মিশ্রিত রয়েছে সেগুলো পড়াও নাজায়েয এবং এ সব গ্রন্থগুলো থেকে বর্ণনা করাও নাজায়েয। যেহেতু এতে আকিদা নষ্টের ক্ষতি বিদ্যমান।”[সমাপ্ত]
একই গ্রন্থে (৩/৩৪) নিষিদ্ধ জ্ঞান সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে আরও বলেন: “নিষিদ্ধ জ্ঞান; যেমন- কালাম শাস্ত্র..., দর্শনশাস্ত্র, জ্যোতিষীবিদ্যা, জ্যোর্তিবিদ্যা, বালিতে রেখাঙ্কন বিদ্যা এবং যবপড়া ও কড়িপড়া বিদ্যা... এবং হারাম জ্ঞানের মধ্যে রয়েছে: যাদু ও অনারবী ভাষায় অবোধগম্য মন্ত্র; অচিরেই রিদ্দা অধ্যায়ে এ সম্পর্কিত আলোচনা আসবে।
অনুরূপভাবে হারাম বিদ্যার মধ্যে রয়েছে- জুম্মাল হিসাব পদ্ধতি ব্যবহার করে ব্যক্তির নিজের নাম ও তার মায়ের নামের সংখ্যাগত মান বের করা এবং রাশি ও গ্রহ নির্ধারণ করা। এর উপর ভিত্তি করে দারিদ্র, ধনাঢ্য কিংবা অন্যান্য জ্যোর্তিবিদিক নির্দেশনা অধঃ জগতের উপর প্রদান করা।”[সমাপ্ত]
স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্রে (১/২০৩) এসেছে:
“পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে প্রকাশিত ভাগ্য রাশিতে বিশ্বাস করার ব্যাপারে শরিয়তের হুকুম কী? জবাব: সুভাগ্য ও দুর্ভাগ্যকে গ্রহ ও রাশির সাথে সম্পৃক্ত করা এটি প্রাচীন পৌত্তলিক, সাবিয়া দার্শনিক প্রমুখ শির্ক ও কুফরবাদী গোষ্ঠীগুলোর শির্ক। এই জ্ঞানের দাবী করা বাহ্যতঃ অদৃশ্যের জ্ঞান দাবী করা। যা আল্লাহ্র সাথে তাঁর নির্দেশ নিয়ে টানাটানি। এটি জঘন্য শির্ক। তাছাড়া প্রকৃতপক্ষে এটি মিথ্যা, প্রতারণা, মানুষের বিবেকবুদ্ধির সাথে ধোঁকাবাজি, অন্যায়ভাবে মানুষের অর্থ ভক্ষণ এবং মানুষের আকিদা-বিশ্বাসে নষ্টামি ও সন্দেহ ঢুকানো।
তাই রাশিফল প্রকাশ করা, পড়া ও মানুষের মাঝে প্রচার করা হারাম। এসব কথায় বিশ্বাস করা নাজায়েয। বরং এটি কুফরের একটি শাখা এবং তাওহীদকে প্রশ্নবিদ্ধকরণ। ওয়াজিব হচ্ছে— এর থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকা, এটি বর্জন করার ব্যাপারে একে অপরকে উপদেশ দেয়া এবং আল্লাহ্র উপর নির্ভর করা ও প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর উপর ভরসা রাখা।
বাকর বিন আবু যায়েদ, আব্দুল আযিয আলুশ শাইখ, সালেহ আল-ফাওযান, আব্দুল্লাহ্ বিন গুদইয়ান, আব্দুল আযিয বিন বায।”[সমাপ্ত]
আপনি যদি ইচ্ছা করে পড়ে থাকেন তাহলে আল্লাহ্র কাছে তওবা করুন ও ইস্তিগফার (ক্ষমাপ্রার্থনা) করুন। এ ধরণের কাজ পুনরায় কখনও করবেন না।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।