বুধবার 12 জুমাদাল আউওয়াল 1446 - 13 নভেম্বর 2024
বাংলা

ইলেকট্রনিক গেইমস

প্রশ্ন

ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ইলেকট্রনিক গেইম নিজে খেলা কিংবা শিশুদেরকে খেলতে দেয়ার বিধান কি? যে গেইমগুলো Sony কোম্পানী কিংবা Nintendo কোম্পানী প্রস্তুত করে থাকে।

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

যে কেউ এ গেইমগুলোর প্রতি নজর দিলে দেখতে পাবেন যে, এ গেইমগুলো মানসিক দক্ষতা ও ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে।

এ গেইমগুলো নানা ধরণ ও প্রকৃতির হয়ে থাকে: কোন কোন গেইম আছে কল্পনিক যুদ্ধের; যে গেইমের মাধ্যমে একই ধরণের (বাস্তব) পরিস্থিতিতে কী করণীয় সে প্রশিক্ষণ রয়েছে। কোন কোন গেইমে থাকে– বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সতর্ক প্রস্তুতি, শত্রুর সাথে লড়াই, টার্গেটকে ধ্বংস করা, পরিকল্পনা তৈরী করা, দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনা, গোলকধাঁধা থেকে বের হওয়া, হিংস্র জানোয়ার থেকে পলায়ন, বিমান চালানো প্রতিযোগিতা, গাড়ী বা অন্য যানবাহন চালানো প্রতিযোগিতা, নানা প্রতিবন্ধকতা থেকে উত্তরণ, গুপ্তধন অনুসন্ধান। কিছু কিছু গেইম আছে যেগুলো সাধারণ জ্ঞান বৃদ্ধি করে ও মনোযোগ বাড়ায়; যেমন- কিছু জিনিস খুলে সেগুলো অন্য কোথাও স্থাপন করা, বিচ্ছিন্ন ছবিগুলো একত্রিত করা, কোন কিছু নির্মাণ করা, রঙ করা, ভরাট করা ও লাইটিং করা।

শরয়ি বিধান:

ইসলাম বৈধ উপায়-উপকরণের মাধ্যমে চিত্ত বিনোদন ও বৈধ আনন্দ করতে বাধা দেয় না। এসব গেইমের মূলবিধান হচ্ছে- বৈধতা; যদি না এগুলো কোন ফরয আমল থেকে ব্যক্তিকে বিরত না রাখে; যেমন- নামায আদায়, পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার এবং যদি না এগুলোতে হারাম কোন বিষয় না থাকে। অবশ্য এ ধরণের গেইমগুলোতে হারাম বিষয় কতই বেশি; যেমন-

- যে গেইমগুলোতে ভাল পক্ষ হিসেবে পৃথিবীবাসী ও দুষ্ট প্রতিপক্ষ হিসেবে আকাশবাসীর মাঝে যুদ্ধ চিত্রায়িত করা হয়। এর মধ্যে আল্লাহ্‌র প্রতি অপবাদ কিংবা সম্মানিত ফেরেশতাগণের প্রতি দোষারোপ এর দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।

- যে গেইমগুলো ক্রুশকে পবিত্র বিবেচনা করার ভিত্তিতে নির্মিত। ক্রুশের উপর দিয়ে পথ অতিক্রম করলে স্বাস্থ্য ও শক্তি অর্জিত হয়, কিংবা আত্মা ফিরিয়ে দেয়া হয় কিংবা খেলোয়াড়ের আত্মার সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়া হয় ইত্যাদি। অনুরূপভাবে যে গেইমগুলোতে খ্রিস্টমাসের উৎসবের কার্ড ডিজাইন করা হয়।

- যে গেইমগুলোতে যাদুটোনার স্বীকৃতি প্রতি রয়েছে কিংবা যাদুকরকে সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।

- যে গেইমগুলো ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানোর উদ্দেশ্য নিয়ে নির্মিত। যেমন- এক গেইমে আছে মক্কার ওপর বোমা নিক্ষেপ করলে ১০০ পয়েন্ট, বাগদাদের উপর বোমা নিক্ষেপ করলে ৫০ পয়েন্ট।

- যে গেইমগুলোতে কাফেরদেরকে সম্মানিত হিসেবে উপস্থাপন করা হয় এবং তাদেরকে নিয়ে গর্ববোধ করার তালিম দেয়া হয়। যেমন এক গেইমে আছে খেলোয়াড় যদি কাফের রাষ্ট্রের সেনাবাহিনী নির্বাচন করে তাহলে সে শক্তিশালী হয়। আর যদি কোন আরব রাষ্ট্রের সেনাবাহিনী নির্বাচন করে তাহলে সে দুর্বল হয়। অনুরূপভাবে যেসব গেইমে শিশুদেরকে কাফেরদের স্পোর্টিং ক্লাব ও কাফের খেলোয়াড়দের দ্বারা অভিভুত হওয়ার তালিম দেয়া হয়।

- যেসব গেইমে নগ্ন চিত্রায়ন রয়েছে। কিছু কিছু গেইমে জয়ী হওয়ার পুরস্কার হচ্ছে- একটি নগ্ন ছবি। অনুরূপভাবে যেসব গেইমে চারিত্রিক ব্যুহকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়। উদাহরণত যেসব গেইমের থিম হচ্ছে প্রেমিকা, প্রণয়িনী কিংবা বান্ধবীকে দুষ্ট লোকের হাত থেকে কিংবা ড্রাগনের হাত থেকে রক্ষা করা।

- যেসব গেইমের থিম হচ্ছে- লটারী ও জুয়া খেলা।

- যেসব গেইমে রয়েছে মিউজিক। ইসলামি শরিয়তে মিউজিক হারাম হওয়া সুবিদিত।

- এসব গেইম খেলায় রয়েছে শারীরিক ক্ষতি। যেমন, চোখের ক্ষতি কিংবা স্নায়ুর ক্ষতি। অনুরূপভাবে ক্ষতিকর সাউন্ড ইফেক্টের মাধ্যমে কানের ক্ষতি। আধুনিক গবেষণায় সাব্যস্ত হয়েছে যে, এ গেইমগুলো নেশাগ্রস্ত করে, স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করে, শিশুদের মাঝে উত্তেজনা ও স্নায়ুবিক চাপ সৃষ্টি করে।

- এসব গেইম সহিংসতা ও অপরাধ শিক্ষা দেয়। হত্যা ও প্রাণ বদ করাকে সহজ করে ফেলে। যেমনটি রয়েছে- প্রসিদ্ধ Doom নামক গেইমে।

- শিশুকে কল্পনার রাজ্য ও অসম্ভব কিছু করার তালিম দেয়ার মাধ্যমে শিশুর বাস্তবতার জ্ঞানকে নষ্ট করে ফেলা। যেমন- মৃত্যুর পর আবার ফিরে আসা, অতিপ্রাকৃতিক ক্ষমতা বাস্তবে যার অস্তিত্ব নেই, মহাকাশের বিভিন্ন জীব বা এলিয়েনের চিত্রায়ন ইত্যাদি।

আকিদা-বিশ্বাসের উপর এসব গেইমের ঝুঁকি ও শরয়ি বিধান লঙ্ঘনের উদাহরণ নিয়ে আমরা একটু দীর্ঘ আলোচনা করলাম। কারণ অনেক পিতামাতা এসব বিষয়ে সচেতন নয়। ফলে তারা তাদের সন্তানদের জন্য এগুলোর ব্যবস্থা করে দেন এবং এগুলোর মাধ্যমে তাদেরকে বিনোদন দিতে চান।

আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা দরকার সেটা হচ্ছে- এ গেইমগুলো খেলার ক্ষেত্রে বিনিময় নিয়ে প্রতিযোগিতা করা নাজায়েয; এমনকি সে গেইমটি খেলা জায়েয হলেও। কেননা এসব গেইম জিহাদের উপকরণ নয়। এগুলো খেলার মাধ্যমে কেউ জিহাদ করার শক্তিও অর্জন করবে না।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ড. সাদ আল-শাছরি লিখিত ‘আল-মুসাবাকাত ওয়া আহকামুহা ফিস শারিয়াতিল ইসলামিয়্যা’