বৃহস্পতিবার 27 জুমাদাল আউওয়াল 1446 - 28 নভেম্বর 2024
বাংলা

ফিকাহবিদ আলেমগণ আশুরার দিন রোযা রাখার সাথে ১১ তারিখেও রোযা রাখাকে মুস্তাহাব বলেন কেন?

প্রশ্ন

আমি আশুরা সংক্রান্ত সবগুলো হাদিস পড়েছি। আমি কোন হাদিসে পাইনি যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইহুদীদের সাথে পার্থক্য করার জন্য ১১ তারিখ রোযা রাখার কথা বলেছেন। তিনি শুধু বলেছেন: "আমি যদি আগামী বছর বাঁচি তাহলে অবশ্যই ৯ তারিখ ও ১০ তারিখ রোযা রাখব" ইহুদীদের সাথে পার্থক্য করণার্থে। অনুরূপভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবীবর্গকেও ১১ তারিখ রোযা রাখার দিক-নির্দেশনা দেননি। অতএব, যে কাজ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেননি কিংবা তাঁর সাহাবীবর্গ করেননি সেটা কি বিদাত হবে না? যে ব্যক্তি ৯ তারিখে রোযা রাখতে পারেনি সে কি শুধু ১০ তারিখে রোযা রাখবে?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

মুহর্‌রম মাসের ১১ তারিখে রোযা রাখাকে আলেমগণ মুস্তাহাব বলেন। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এ দিনে রোযা রাখার নির্দেশ এসেছে। ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "তোমরা আশুরার দিন (১০ তারিখে) রোযা রাখ। এক্ষেত্রে তোমরা ইহুদীদের সাথে পার্থক্য কর এবং আশুরার আগে একদিন বা পরে একদিন রোযা রাখ।"[মুসনাদে আহমাদ (২১৫৫)]

আলেমগণ এ হাদিসের শুদ্ধতা নিয়ে মতভেদ করেছেন। শাইখ আহমাদ শাকের হাদিসটিকে 'হাসান' বলেছেন। আর মুসনাদ গ্রন্থের মুহাক্কিকগণ হাদিসটিকে 'যয়ীফ' (দুর্বল) বলেছেন।

এ হাদিসটি ইবনে খুযাইমাও এই ভাষায় বর্ণনা করেছেন। আলবানী বলেন: "ইবনে আবি লাইলা নামক বর্ণনাকারীর মুখস্তশক্তির দুর্বলতার কারণে হাদিসটির সনদ 'যয়ীফ'। বর্ণনাকারী 'আতা' তার সাথে মতভেদ করেছেন এবং তিনি হাদিসটিকে ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর উক্তি (মাওকুফ) হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাহাবী ও বাইহাকী কর্তৃক সংকলিত সে সনদটি সহিহ।[সমাপ্ত]

যদি এ হাদিসটির সনদ 'হাসান' পর্যায়ের হয় তাহলে তো ভাল। আর যদি হাদিসটি 'যয়ীফ' হয় তাহলে এমন ক্ষেত্রে আলেমগণ সহনশীলতা অবলম্বন করেন। কেননা হাদিসটির দুর্বলতা যৎসামান্য। যেহেতু হাদিসটি মিথ্যা বা বানোয়াট নয়। এবং যেহেতু হাদিসটি ফাযায়েলে আমল এর ক্ষেত্রে। বিশেষতঃ যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে মুহর্‌রম মাসে রোযা রাখার ব্যাপারে উৎসাহমূলক বর্ণনা এসেছে। এমনকি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: "রমযানের পর সর্বোত্তম রোযা হচ্ছে মুহর্‌রম মাসের রোযা।"[সহিহ মুসলিম (১১৬৩)]

ইমাম বাইহাকী এ হাদিসটি পূর্বোক্ত ভাষায় তাঁর 'সুনানে কুবরা' গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। অন্য এক বর্ণনার ভাষা হচ্ছে- "আগে একদিন ও পরে একদিন রোযা রাখ"। অর্থাৎ সে বর্ণনাতে "বা" এর পরিবর্তে "ও" রয়েছে।

হাফেয ইবনে হাজার তাঁর 'ইতহাফুল মাহারা' গ্রন্থে  (২২২৫) হাদিসটি বর্ণনা করেন এ ভাষায়: "তোমরা এর আগে একদিন ও পরে একদিন রোযা রাখ"। এবং তিনি বলেন: "হাদিসটি আহমাদ ও বাইহাকী 'যয়ীফ সনদ'-এ বর্ণনা করেছেন; মুহাম্মদ বিন আবি লাইলা এর দুর্বলতার কারণে। কিন্তু, তিনি এককভাবে হাদিসটি বর্ণনা করেননি। বরং তাকে অনুকরণ করেছেন: সালেহ বিন আবু সালেহ বিন হাই্য়্য।[সমাপ্ত]

এ বর্ণনা থেকে ৯ তারিখ ও ১১ তারিখে রোযা রাখা মুস্তাহাব হওয়া জানা যায়।

কোন কোন আলেম ১১ তারিখে রোযা রাখা মুস্তাহাব হওয়ার আরেকটি কারণ উল্লেখ করেছেন। তা হচ্ছে- ১০ তারিখের রোযাটির ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করা। কারণ হতে পারে লোকেরা মুহর্‌রম মাসের চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে ভুল করে থাকবে। যার কারণে সুনির্দিষ্টভাবে কোন দিনটি ১০ তারিখ সেটা হয়তো জানা যাবে না। তাই মুসলিম ব্যক্তি যদি ৯ তারিখ ও ১১ তারিখ রোযা রাখে তাহলে নিশ্চিতভাবে তার আশুরা (১০ তারিখ) এর রোযা রাখা হল।

ইবনে আবু শাইবা তাঁর 'মুসান্নাফ' গ্রন্থে (২/৩‌১৩) তাউস (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি আশুরার আগে এক দিন ও পরে একদিন রোযা রাখতেন; ছুটে যাওয়ার ভয় থেকে।

ইমাম আহমাদ বলেন: "যে ব্যক্তি আশুরার রোযা রাখতে চায় সে যেন ৯ তারিখ ও ১০ তারিখ রোযা রাখে। তবে মাসগুলো নিয়ে কোন অনিশ্চয়তা থাকলে তাহলে তিনদিন রোযা রাখবে। ইবনে সিরিন এই অভিমত ব্যক্ত করতেন।"[সমাপ্ত][আল-মুগনি (৪/৪৪১)]

পূর্বোক্ত আলোচনা থেকে ফুটে উঠল যে, তিন দিন রোযা রাখাকে বিদাত বলা ঠিক হবে না।

আর যে ব্যক্তি ৯ তারিখে রোযা রাখতে পারেনি সে ব্যক্তি শুধু ১০ তারিখে রোযা রাখতে কোন অসুবিধা নেই, এটা মাকরুহ হবে না। যদি এর সাথে ১১ তারিখও রোযা রাখে তাহলে সেটা উত্তম।

আল-মিরদাওয়ি তার 'ইনসাফ' গ্রন্থে (৩/৩৪৬) বলেন:

"মাযহাবের সঠিক মতানুযায়ী, এককভাবে ১০ তারিখ রোযা রাখা মাকরুহ নয়। শাইখ তাকী উদ্দিন (ইবনে তাইমিয়া)ও একমত পোষণ করেছেন যে, মাকরুহ হবে না।[সংক্ষেপিত ও সমাপ্ত]

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।  

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব