সোমবার 24 জুমাদাল আউওয়াল 1446 - 25 নভেম্বর 2024
বাংলা

জনৈক নারী মেদ এর সমস্যায় ভুগছেন; এর কোন শরয়ি সমাধান আছে কি?

প্রশ্ন

আমি খুব বেশি মোটা মানুষ। আমার শরীরে গোশত সাংঘাতিকভাবে বেশি। আলহামদু লিল্লাহ্‌, আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ি, নফল নামাযও পড়ি। ক্ষুধা না লাগলে আমি খাই না। অনুগ্রহ করে আপনারা আমাকে কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক কোন চিকিৎসার কথা জানাতে পারবনে; যা আমার ওজন কমাতে সাহায্য করবে?  

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

মেদ-এর সমস্যা বিশেষ কোন রোগ কিংবা শরীরে হরমোনের উঠানামার কারণে হতে পারে। এর চিকিৎসার জন্য হচ্ছে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

মেদ-এর সমস্যা অতিরিক্ত খাওয়া এবং ইসলামী শিষ্টাচারগুলো মেনে না চলার কারণেও হতে পারে। এর সমাধান হচ্ছে- খাওয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ্‌ বলা, খাওয়া শেষে আলহামদু লিল্লাহ বলা, কম খাওয়া। মিকদাদ বিন মাদি কারিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন: "কোন মানুষ পেটের চেয়ে মন্দভাবে কোন পাত্রকে ভরপুর করে না। বনী আদমের জন্য কয়েক লোকমা খাওয়াই যথেষ্ট; যতটুকু তার মেরুদণ্ডকে সোজা রাখবে। যদি এর চেয়ে বেশি খেতে হয় তাহলে (পেটের) এক তৃতীয়াংশ খাবারের জন্য, এক তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং এক তৃতীয়াংশ নিঃশ্বাসের জন্য।"[সুনানে তিরমিযি (২৩৮০) ও সুনানে ইবনে মাজাহ (৩৩৪৯), আলবানি 'সহিহুত তিরিমিযি গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: "আর পানাহার করো; তবে অপচয় করবে না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না।"[সূরা আরাফ, আয়াত: ৩১]

কুরআন-সুন্নাহতে মেদ-এর সমস্যার সমাধানে বিশেষ কোন চিকিৎসার উল্লেখ নেই; যদিও সত্যিকারার্থে কুরআন রোগ নিয়াময়ক। যেমনটি আল্লাহ্‌ তাআলা বলেছেন: "আমি কুরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা মুমিনদের জন্য আরোগ্য ও অনুগ্রহ। আর তা জালেমদের শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি করে।"[সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত: ৮২]

তিনি আরও বলেন: "হে মানুষ! তোমাদের কাছে তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে উপদেশবাণী ও অন্তরের ব্যধির চিকিৎসা এবং মুমিনদের জন্য পথনির্দেশ ও অনুগ্রহ (কোরআন) এসেছে।"[সূরা ইউনুস, আয়াত: ৫৭]

ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেন: "কুরআন হচ্ছে- অন্তরের ও শরীরের যাবতীয় রোগের পরিপূর্ণ চিকিৎসা। কিন্তু সকল মানুষ এ কুরআন দিয়ে চিকিৎসা নেয়ার যোগ্যতা ও তাওফিক রাখে না। যদি কোন রোগী যথাযথভাবে কুরআন দিয়ে চিকিৎসা নিতে পারে এবং আন্তরিকতা, ঈমান, পূর্ণ গ্রহণ ও দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে রোগের চিকিৎসা করতে পারে এবং অন্যান্য শর্তগুলো পরিপূর্ণ থাকে তাহলে কোন রোগ কুরআনের সাথে মোকাবিলা করতে পারে না।"[যাদুল মাআদ (৪/৩২২)]

অসুস্থ ব্যক্তির জন্য 'মুআওয়িযাত' (আশ্রয় প্রার্থনার সূরাগুলো) পড়ে নিজেকে ঝাড়ফুঁক করা শরিয়তসম্মত। আল্লাহ্‌র ইচ্ছায় এর কার্যকর প্রভাব রয়েছে।

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যখন অসুখ হত তখন তিনি 'মুআওয়িযাত' পড়ে নিজেকে নিজে ঝাড়ফুঁক করতেন এবং হাত দিয়ে নিজেকে মোছন করতেন। যে রোগে তিনি মারা যান সে রোগে যখন আক্রান্ত হলেন তখন আমি 'মুআওয়িযাত' পড়ে তাকে ফুঁক দিতাম এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাত দিয়ে মোছন করতাম।"[সহিহ বুখারী (৪৪৩৯)] সহিহ মুসলিম (২১৯২) এর বর্ণনায় রয়েছে: "পরিবারের কেউ যখন অসুস্থ হতেন তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে 'মুআওয়িযাত' পড়ে ফুঁক দিতেন। যখন তিনি যে রোগে মারা যান সে রোগে আক্রান্ত হলেন তখন আমি তাকে ফুঁক দিতাম এবং তাঁর হাত দিয়ে মোছন করতাম। কেননা আমার হাতের চেয়ে তাঁর হাত ছিল বরকতপূর্ণ।"

আয়িশা (রাঃ) থেকে আরও বর্ণিত আছে যে, "নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন প্রতিরাতে বিছানায় যেতেন তখন তিনি দুই হাতকে একত্রিত করে হাতদ্বয়ে ফুঁক দিতেন; তথা হাতদ্বয়ে

قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ , قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ ও قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ

পড়তেন। এরপর হস্তদ্বয় দিয়ে শরীরের যতটুকু অংশ সম্ভব মোছন করতেন। হাতদ্বয় দিয়ে মাথা, চেহারা ও শরীরের সামনের অংশ থেকে শুরু করতেন। এভাবে তিনবার করতেন।"

অনুরূপভাবে একজন মুসলিমের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের যা খুশি কল্যাণ চেয়ে ও অনিষ্ট দূর করার জন্য দোয়া করা শরিয়তসম্মত। সুতরাং আপনি আল্লাহ্‌র কাছে রোগ নিরাময়, সুস্থতা ও সৌন্দর্যের জন্য দোয়া করুন।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।  

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব