আলহামদু লিল্লাহ।.
এক:
ইসলামী শরিয়তে “ঈদে মিলাদুন্নবী” বলতে কিছু নেই। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, চার ইমাম ও অন্য আলেমগণ এমন কোন দিন জানতেন না। বরং এ ঈদ বা উৎসবটি উদ্ভাবন করেছে কিছু বিদআতী বাতেনী গোষ্ঠী। এরপর থেকে মানুষ এ বিদআত পালন করে আসছে; অথচ আলেমগণ সর্বকালে ও সর্বস্থানে এ বিদআত সম্পর্কে মানুষকে হুশিয়ার করে আসছেন।
এ বিদআতের ব্যাপারে এ ওয়েব সাইটের 10070 নং, 13810 নং ও 70317 নং প্রশ্নোত্তরে সাবধান করা হয়েছে।
দুই:
এ দিনকে উপলক্ষ করে মানুষ যা কিছু পালন করে থাকে যেমন- মাহফিল করা, খাবার বিতরণ করা ইত্যাদি সব হারাম কাজ হিসেবে গণ্য হবে। কারণ এর মাধ্যমে তারা আমাদের শরিয়তে একটি বিদআতী উৎসবকে চালু রাখতে চায়।
শাইখ সালেহ আল-ফাওযান ‘আল-বায়ান লি আখতায়ি বাযিল কুত্তাব’ (পৃষ্ঠা ২৬৮-২৭০) গ্রন্থে বলেন: কুরআন ও হাদিসে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কর্তৃক প্রদত্ত বিধানের অনুসরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং ধর্মীয় বিষয়ে নতুন কিছু প্রবর্তন করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে- এটি কারো অজানা নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন: “বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর, ফলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপরাশি মার্জনা করে দিবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীলও দয়ালু।[সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩১] তিনি আরও বলেন: “তোমরা অনুসরণ কর, যা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে কর্তাদের অনুসরণ করো না।”।[সূরা আরাফ, আয়াত: ৩] তিনি আরও বলেন: “তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। নিশ্চিত এটি আমার সরল পথ। অতএব, এ পথে চল এবং অন্যান্য পথে চলো না। তা হলে সেসব পথ তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে।”[সূরা আনআম, আয়াত: ১৫৩] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “নিশ্চয় শ্রেষ্ঠ সত্যবাণী হচ্ছে আল্লাহর কিতাব। সর্বোত্তম আদর্শ হচ্ছে- নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ। সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হচ্ছে- নব প্রবর্তিত বিষয়গুলো।” তিনি আরও বলেন: “যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনে এমন কোন বিষয় চালু করে যা এতে নেই সেটা প্রত্যাখ্যাত” । সহিহ মুসলিমের এ বর্ণনায় এসেছে- “যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করে যা আমাদের দ্বীনে নেই সেটা প্রত্যাখ্যাত”।
মানুষ যে সব বিদআতের প্রবর্তন করেছে তার মধ্যে রবিউল আউয়াল মাসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মবার্ষিকী পালন করা অন্যতম। এ জন্মবার্ষিকী পালন করার ক্ষেত্রে তারা কয়েক শ্রেণীর:
এক শ্রেণী যারা শুধু জমায়েত হয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম কাহিনী পড়ে; কিংবা এ উপলক্ষে আলোচনা পেশ করে ও কাসিদা পাঠ করে।
আর কেউ আছে খাবার-দাবার ও মিষ্টান্ন তৈরী করে উপস্থিত লোকদের মাঝে বিতরণ করে।
কেউ আছে মসজিদে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে; কেউ আছে বাড়ীতে আয়োজন করে।
আর কেউ আছে শুধু এ সবের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে আরও অনেক হারাম ও গর্হিত কাজে লিপ্ত হয়; যেমন নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, নাচগান, কিংবা বিভিন্ন শিরকমিশ্রিত কার্যাবলী যেমন- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট সাহায্য চাওয়া, তাঁকে ডাকা, শত্রুর বিরুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার জন্য তাঁর মদদ চাওয়া ইত্যাদি।
মিলাদ অনুষ্ঠানের এ নানাবিধ ধরন ও প্রকারসহ এটি একটি হারাম কাজ ও উত্তম ত্রি-প্রজন্মের উত্তরকালে প্রবর্তিত বিদআত।
ষষ্ঠ হিজরী কিংবা সপ্তম হিজরীতে প্রথমবারের মত এ বিদআতটি চালু করেন আর্বিলের বাদশা আবু সাঈদ (সাঈদের পিতা) আল-মুজাফফর কুকবুরি; যেমনটি উল্লেখ করেছেন ইতিহাসবিদ ইবনে কাছির ও ইবনে খাল্লিকান প্রমুখ।
আবু শামা বলেন: মোসুলে প্রথমবারের মত এ বিদআতটি পালন করেন একজন মশহুর দ্বীনদার মানুষ- শাইখ উমর বিন মুহাম্মদ আল-মোল্লা। এরপর আর্বিলের বাদশা ও অন্যরা তাকে অনুসরণ করেন।
হাফেয ইবনে কাছির ‘আল-বিদায়া’ গ্রন্থে (১৩/১৩৭) আবু সাঈদ কুকবুরি এর জীবনীতে লিখেন: “তিনি রবিউল আউয়াল মাসে মিলাদুন্নবী পালন করতেন এবং বিশাল অনুষ্ঠান করতেন...। এক পর্যায়ে তিনি বলেন: আল-সিবত বলেন: মুজাফফর কর্তৃক মিলাদুন্নবী উপলক্ষে আয়োজনকৃত ভোজানুষ্ঠানে যারা হাজির হয়েছেন এমন একজন বলেন যে, সে অনুষ্ঠানে পাঁচ হাজার ভুনা মাথা, দশ হাজার মুরগী, একলক্ষ দুধের পেয়ালা এবং ত্রিশ হাজার মিষ্টান্নের প্লেট উপস্থাপন করা হত...। এক পর্যায়ে তিনি বলেন: সুফি গান শুনার ব্যবস্থা থাকত জোহর থেকে ফজর পর্যন্ত। বাদশা নিজে তাদের সাথে নাচত।[সমাপ্ত]
ইবনে খাল্লিকান তাঁর ‘ওফাইয়াতুল আইয়ান’ নামক গ্রন্থে (৩/২৭৪) বলেন:
সফর মাস এলে তারা সে গম্বুজগুলোকে সৌন্দর্যমণ্ডিত বিলাসবহুল সাজে সাজাত। প্রত্যেক গম্বুজে একদল গায়ক বসত; একদল সাধক ও বাদক দল থাকত। ঐ গম্বুজগুলোর প্রত্যেকটি তলাতে এদের একদল থাকত।[সমাপ্ত]
অতএব, এ বিদআত উদযাপনের মধ্যে রয়েছে- এ দিনে নানা রকমের খাবার-দাবার প্রস্তুত করা, খাবার বিতরণ করা, মানুষকে সে ভোজের দাওয়াত দেয়া। সুতরাং, কোন মুসলমান যদি এসব কিছুতে তাদের সাথে অংশ গ্রহণ করে, তাদের প্রস্তুতকৃত খাবার খায়, তাদের দস্তরখানে বসে নিঃসন্দেহে সেটা এ বিদআত উদযাপনের মধ্যে পড়বে; এটি তাদেরকে এ বিদআত উদযাপনে সহযোগিতা করার নামান্তর। আল্লাহ তাআলা বলেন: “তোমরা পরস্পর পরস্পরকে নেকী ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা কর; পাপকাজ ও সীমালঙ্ঘনের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করো না।[সূরা মায়েদা, আয়াত: ২]
এ কারণে সে দিনকে উপলক্ষ করে প্রস্তুতকৃত খাবার খাওয়া হারাম মর্মে আলেমগণ ফতোয়া দিয়েছেন এবং অন্য কোন বিদআত উৎসব উপলক্ষে প্রস্তুতকৃত খাবার খাওয়াও হারাম ফতোয়া দিয়েছেন।
শাইখ বিন বাযকে নিম্নোক্ত প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করা হয় (৯/৭৪):
মিলাদুন্নবী উপলক্ষে জবাইকৃত পশুর গোশত খাওয়ার হুকুম কি?
জবাবে তিনি বলেন: যদি যার মিলাদ (জন্ম বার্ষিকী) তাঁর জন্য এ পশু জবাই করা হয় তাহলে এটি শিরকে আকবার (বড় শিরক)। আর যদি গোশত খাওয়ার জন্য জবাই করা হয় তাতে কিছু নেই। তবে কোন মুসলমানের সে গোশত খাওয়া উচিত নয়; সে অনুষ্ঠানে যাওয়া উচিত নয়; যাতে করে মুসলমান কথা ও কাজের মাধ্যমে বিদআতীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে পারেন। আর যদি তাদেরকে নসিহত করার উদ্দেশ্যে উপস্থিত হতে চান সেটা করতে পারেন; তবে তাদের খাবার বা অন্য কিছুতে অংশ গ্রহণ করবে না।[সমাপ্ত]
এ বিষয়ে এ ওয়েব সাইটে আরও কিছু ফতোয়া রয়েছে; যেমন দেখুন 7051 নং ও 9485 নং প্রশ্নোত্তর।
আল্লাহই ভাল জানেন।