আলহামদু লিল্লাহ।.
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে একাধিক হাদিসে উদ্ধৃত হয়েছে যে, মৃতব্যক্তির পরিবারের কান্নার কারণে তাকে শাস্তি দেয়া হয়। এ হাদিসগুলোর মধ্যে রয়েছে সহিহ মুসলিম সংকলিত (৯২৭) ইবনে উমর (রাঃ) এর হাদিস; তিনি বর্ণনা করেন যে, হাফসা (রাঃ) উমর (রাঃ) এর জন্য কাঁদছিলেন। তখন উমর (রাঃ) বলেন:ওরে বেটি থাম! তুমি কি জান না যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “নিশ্চয় পরিবারের কান্নাকাটির কারণে মৃতব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া হয়”।
তবে একাধিক ঘটনায় সাব্যস্ত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃতব্যক্তির জন্য কেঁদেছেন। যেমন: তাঁর ছেলে ইব্রাহিমের মৃত্যুর সময়; যা সহিহ বুখারী (২/১০৫) ও সহিহ মুসলিম (৭/৭৬)-এ আনাস (রাঃ) এর হাদিসে উদ্ধৃত হয়েছে। অনুরূপভাবে তাঁর এক মেয়েকে দাফন করার সময় তিনি কেঁদেছেন; যেমনটি সহিহ বুখারীতে আনাস (রাঃ)-এর হাদিসে এসেছে।
অনুরূপভাবে তাঁর কোন এক নাতীর মৃত্যুতেও তিনি কেঁদেছেন; যেমন সহিহ বুখারী (১২৮৪) ও সহিহ মুসলিম (৯২৩)-এ সংকলিত উসামা বিন যায়েদ (রাঃ)-এর হাদিসে উদ্ধৃত হয়েছে।
যদি জিজ্ঞেস করা হয়: আমরা কিভাবে এ হাদিসগুলোর মাঝে সমন্বয় করব? যে হাদিসগুলো মৃতব্যক্তির জন্য কাঁদতে বারণ করে; আবার অন্য হাদিসগুলো সেটার অনুমতি দেয়?
জবাব:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই সেটা ব্যাখ্যা করেছেন; যা সহিহ বুখারী (৭৩৭৭) ও সহিহ মুসলিম (৯২৩)-এর হাদিসে এসেছে যে, উসামা বিন যায়েদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর জনৈক মেয়ের ঘরের নাতির মৃত্যুতে কাঁদছিলেন। তখন সাদ বিন উবাদা (রাঃ) বললেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ্! এটি কী? তখন তিনি বললেন: এটি রহমত; যা আল্লাহ্ তাআলা প্রত্যেক বান্দার অন্তরে স্থাপন করেছেন। আল্লাহ্র বান্দাদের মধ্যে কেবল দয়াশীলদের প্রতি আল্লাহ্ দয়া করেন।“
নববী বলেন:
এ হাদিসের মর্ম হলো: সাদ (রাঃ) ধারণা করেছিলেন যে, সব ধরণের কান্নাই হারাম এবং চোখে পানি আসা হারাম এবং ধারণা করেছিলেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা ভুলে গেছেন; তাই তিনি তার কাছে সেটা উল্লেখ করেছেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু্ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে জানিয়েছেন যে, নিছক কান্না ও চোখে পানি আসা হারাম নয়; মাকরুহও নয়। বরঞ্চ সেটি রহমত ও মর্যাদা। হারাম হলো: খেদোক্তি ও বিলাপ; এবং এ দুটো মিশ্রিত কান্না কিংবা এর কোন একটি মিশ্রিত কান্না। যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “নিশ্চয় আল্লাহ্ চোখের পানি ও মন ভারাক্রান্ত হওয়ার কারণে শাস্তি দেন না। কিন্তু তিনি এইটির কারণে শাস্তি দেন কিংবা দয়া করেন। তিনি হাত দিয়ে জিহ্বার দিকে ইশারা করেন।”[সমাপ্ত]
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া ‘আল-ফাতাওয়া’ গ্রন্থে (২৪/৩৮০) মৃতব্যক্তির জন্য মা ও ভাইদের কান্নাতে কি কোন আপত্তি আছে কি না এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হলে তিনি বলেন: “চোখের পানি ও মন ভারাক্রান্ত হওয়াতে কোন গুনাহ নেই। কিন্তু খেদোক্তি ও বিলাপ হলো নিষিদ্ধ।”[সমাপ্ত]
মৃতব্যক্তির জন্য কাঁদা; এমনকি সেটা দীর্ঘদিন পরে হলেও এতে কোন গুনাহ নেই। তবে শর্ত হলো এর সাথে যেন খেদোক্তি, বিলাপ ও আল্লাহ্র তাকদীরের প্রতি অসন্তুষ্টি না থাকে।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর মায়ের কবর যিয়ারত করে কেঁদেছেন এবং তাঁর চারপাশে যারা ছিল তাদের সবাইকে কাঁদিয়েছেন। এরপর তিনি বলেন: আমি আমার প্রভুর কাছে মায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার করার অনুমতি চেয়েছি। কিন্তু তিনি আমাকে অনুমতি দেননি। তখন আমি তাঁর কাছে মায়ের কবর যিয়ারত করার অনুমতি চেয়েছি। তিনি আমাকে এটার অনুমতি দিয়েছেন। আপনারা কবরগুলো যিয়ারত করুন। কারণ কবর যিয়ারত মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।[সহিহ মুসলিম (৯৭৬)]
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।