শুক্রবার 1 রবীউছ ছানী 1446 - 4 অক্টোবর 2024
বাংলা

বিভিন্ন বার্ষিকীতে অংশগ্রহণ করার শরয়ি বিধান

প্রশ্ন

বিভিন্ন বার্ষিক অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করার শরয়ি বিধান কী? যেমন- বিশ্ব পরিবার দিবস, বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস, আন্তর্জাতিক প্রবীণ বছর। এ ছাড়াও বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান যেমন- মেরাজ দিবস পালন, মিলাদুন্নবী বা নবীর জন্মবার্ষিকী কিংবা হিজরত বার্ষিকী পালন করার হুকুম কি। অর্থাৎ এ উপলক্ষে মানুষকে ওয়াজ-নসিহত করার উদ্দেশ্যে কিছু প্রচারপত্র প্রস্তুত করা, আলোচনাসভা বা ইসলামী সম্মেলনের আয়োজন করা ইত্যাদি।

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

আলহামদুলিল্লাহ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য)। আমার কাছে যা অগ্রগণ্য তা হচ্ছে- যে দিবসগুলো বা সমাবেশগুলো প্রতিবছর ঘুরে ঘুরে আসে সেগুলো বিদআতী ঈদ বা নবপ্রচলিত উৎসব। এগুলো ইসলামি শরিয়তে নব-সংযোজন; যেগুলোর পক্ষে আল্লাহ তাআলা কোন দলিল-প্রমাণ নাযিল করেননি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমরা নব-প্রচলিত বিষয়গুলো থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ প্রতিটি অভিনব বিষয়— বিদআত। আর প্রতিটি বিদআত হচ্ছে— ভ্রান্তি।” [মুসনাদে আহমাদ, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে তিরমিযি] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন: “প্রতিটি কওমের ঈদ (উৎসব) আছে। এটি আমাদের ঈদ।”[সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম]

ইবনে তাইমিয়া প্রণীত “ইকতিদাউস সিরাতিল মুস্তাকিম লি মুখালিফাতি আসহাবিল জাহিম” নামক গ্রন্থে ইসলামী শরিয়তে ভিত্তি নেই এমন নবপ্রচলিত ঈদ-উৎসব পালনের নিন্দাসূচক দীর্ঘ আলোচনা রয়েছে। এ ধরনের বিদআতের প্রচলনে দ্বীনের কি ক্ষতি হয় তা সকল মানুষ জানে না; বরং অধিকাংশ মানুষ-ই জানে না। বিশেষতঃ এ ধরনের বিদআত যদি শরিয়ত অনুমোদিত কোন ইবাদত শ্রেণীয় হয়। শুধু প্রজ্ঞাবান আলেমগণ এ ধরণের বিদআতের ক্ষতিকর দিক উপলব্ধি করতে পারেন।

যদিও মানুষ ভাল দিক বা ক্ষতিকর দিক বুঝতে না পারে তদুপরি তাদের কর্তব্য হচ্ছে— কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণ করা।

যে ব্যক্তি বিশেষ কোনদিবসে বিশেষ রোজা, নামায, ভোজ, সাজ-সজ্জা, বিশেষ খরচ ইত্যাদি আমলের প্রচলন করে তার এ আমলের সাথে অবশ্যই অন্তরের বিশ্বাস জড়িত। অর্থাৎ এ দিন অন্য কোন দিনের চেয়ে উত্তম— এ বিশ্বাস। যদি সে ব্যক্তির অন্তরে অথবা তার অনুসারীর অন্তরে এ বিশ্বাস না থাকত তাহলে এ বিশেষ দিনে বা রাতে বিশেষ ইবাদত করার জন্য অন্তর উদ্যোগী হত না। অথচ যথাযোগ্য দলিল ছাড়া কোন বিধানকে প্রাধান্য দেয়া জায়েয নেই। স্থান, কাল ও গণজমায়েত এ তিনটিকেই ঈদ বলা হয়। এ তিনটি থেকে আরো অনেক বিদআত উৎসারিত হয়। যেমন- তিন প্রকার সময়ের মধ্যে স্থানকেন্দ্রিক ও কর্মকেন্দ্রিক কিছু বিদআতী উৎসব অন্তর্ভুক্ত। প্রথম প্রকার: যেদিনকে মূলতই ইসলামী শরিয়ত শ্রেষ্ঠত্ব দেয়নি। এ দিনের ব্যাপারে সলফে সালেহীনগণের নিকট কোন আলোচনা নেই। এ দিনকে বিশেষত্ব দেয়ার মত অনিবার্য কিছু নেই। দ্বিতীয় প্রকার: যে দিনে বিশেষ কোন ঘটনা ঘটেছে; যেরূপ ঘটনা অন্য দিনেও ঘটতে পারে। তবে তা এ দিনকে বিশেষ মৌসুম হিসেবে সাব্যস্ত করে না এবং সলফে সালেহীন এ দিনকে বিশেষত্ব দিতেন না। সুতরাং যে ব্যক্তি বিশেষত্ব দিবে সে যেন খ্রিস্টানদের অনুকরণ করল; যারা ঈসা (আঃ) এর স্মৃতিবিজড়িত যে কোন দিনকে ঈদ হিসেবে পালন করত অথবা ইহুদীদের অনুকরণ করল। ঈদ পালন- ইসলামি শরিয়তের একটি বিধান। সুতরাং আল্লাহ যে বিধান দিয়েছেন সেটাই পালন করতে হবে; ইসলামের বাইরে কিছু প্রচলন করা যাবে না। অনুরূপভাবে খ্রিস্টানগণ কর্তৃক ঈসা (আঃ) এর জন্মদিবস পালনের অনুকরণে অথবা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ভালবাসা ও সম্মান দেখাতে গিয়ে কিছু কিছু লোক যা কিছুর প্রচলন করেছে সলফে সালেহিনগণ এসব করেননি। অথচ যদি এটা নেক আমল হতো তাহলে তাঁরা সেটা না করার কোন কারণ নেই। তৃতীয় প্রকার: ইসলামি শরিয়তে যে দিনগুলো সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ হিসেবে স্বীকৃত যেমন- আশুরার দিন, আরাফার দিন, দুই ঈদের দিন ইত্যাদি আত্মপ্রবৃত্তির অনুসারীগণ কর্তৃক এ দিনগুলোতে অভিনব কিছু আমল চালু করা হয় এবং এ বিশ্বাস করা হয় যে, এ আমলগুলো পালন করা মর্যাদাপূর্ণ; অথচ এগুলো মন্দ ও অননুমোদিত। যেমন- রাফেজি সম্প্রদায়ের আশুরার দিন পানি পান না করা ও শোক প্রকাশ করা ইত্যাদি। এগুলো নব-উদ্ভাবিত— আল্লাহ এসবের বিধান জারী করেননি, আল্লাহর রাসূল জারী করেননি, সলফে সালেহিনগণ এসব করেননি, এমনকি রাসূলের পরিবারের কেউও করেননি। অপরদিকে শরিয়তের অনুমোদনের বাইরে গিয়ে প্রতি সপ্তাহে, প্রতি মাসে, প্রতি বছরে ধারাবাহিকভাবে সমবেত হওয়া— পাঁচ ওয়াক্ত নামায, জুমার নামাজ, ঈদের নামায ও হজ্জের জন্য সমবেত হওয়ার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। তাই এটি নবপ্রচলিত বিদআত। এ বিষয়ে মৌলিক কথা হলো—সময় ঘুরলে শরিয়তের যে ইবাদতগুলো পুনঃপুনঃ আদায় করতে হয় আল্লাহ তাআলা নিজেই বান্দার জন্য সেগুলোর বিধান দিয়ে দিয়েছেন; সেগুলোই বান্দার জন্য যথেষ্ট। এরপর যদি নতুন কোন সমাবেশ চালু করা হয় এটা বিধান আরোপের ক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে পাল্লা দেয়ার তুল্য। এর ক্ষতিকর দিকগুলোর কিছু অংশ ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। পক্ষান্তরে কোন ব্যক্তি বিশেষ বা গোষ্ঠী বিশেষ যদি অনিয়মিতভাবে কোন আমল করে সেটা এ পর্যায়ে পড়বে না।[সংক্ষেপে সমাপ্ত] এ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়: কোন মুসলমানের জন্য এ দিবসগুলো উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগদান করা জায়েয নয়, যে দিবসগুলো প্রতিবছর পালন করা হয়, প্রতিবছর ঘুরে আসে। যেহেতু এগুলো মুসলমানদের ঈদ-উৎসবের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ; যেমনটি ইতিপূর্বেই আমরা তুলে ধরেছি। আর যদি পুনঃপুনঃ পালিত না হয় এবং মুসলমানগণ এ অনুষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে মানুষের কাছে সত্য পৌঁছে দিতে পারে তাহলে ইনশাল্লাহ এতে কোন অসুবিধা নেই। আল্লাহই ভাল জানেন।

সূত্র: মাসায়েল ওয়া রাসায়েল— মুহাম্মদ আল-হুমুদ আল-নজদি, পৃষ্ঠা-৩১