রবিবার 2 জুমাদাল আউওয়াল 1446 - 3 নভেম্বর 2024
বাংলা

নারীর জন্য মাহরাম ছাড়া জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশে সফর করা

প্রশ্ন

ইসলামে জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশে কোন নারীর মাহরাম ছাড়া সফর করার বিধান কী?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

সহিহ ও সুস্পষ্ট দলীলের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে নারীর জন্য মাহরাম (যার সাথে বিবাহ নিষিদ্ধ) ছাড়া সফর করা বৈধ নয়। এটি শরীয়তের পূর্ণতা, মাহাত্ম্য, শরিয়ত কর্তৃক ইজ্জতের সুরক্ষা দেয়া, নারীকে সম্মান দেয়া, নারীর প্রতি গুরুত্বারোপ করা, নারীকে সুরক্ষিত রাখা এবং ফিতনা ও স্খলনের পথগুলো থেকে আগলে রাখার জন্য শরীয়তের সচেতনতার অন্তর্ভুক্ত; হোক সেই ফিতনা নারীর পক্ষ থেকে কিংবা অন্যদের পক্ষ থেকে।

এই দলীলসমূহের একটি হল বুখারী (১৭২৯) ও মুসলিমে (২৩৯১) ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর সূত্রে বর্ণিত হাদিস তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “কোন নারী মাহরাম ব্যক্তির সঙ্গে ছাড়া সফর করবে না। মাহরাম সাথে নেই এমন অবস্থায় কোনো পুরুষ তার কাছে প্রবেশ করতে পারবে না।” এ সময় এক ব্যক্তি বলল: “হে আল্লাহর রাসূল! আমি অমুক সেনাদলের সাথে জিহাদ করার জন্য যেতে চাচ্ছি। কিন্তু আমার স্ত্রী হজ্জ করতে যেতে চাচ্ছে।” তিনি বললেন: “তুমি তার সাথেই যাত্রা করো।”

এই হাদীসের উপর ভিত্তি করে বলা যায়, একজন নারীর জন্য মাহরাম ছাড়া জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশে সফর করার বৈধতা নেই। নারীর জন্য যে ইলম অর্জন করা ওয়াজিব সেটা অর্জনেও তার কর্তব্য সুলভ অনেক পন্থা অবলম্বন করা। যেমন: ক্যাসেট শোনা, আলেমদেরকে ফোনে প্রশ্ন করা প্রভৃতি আরো যে সকল পন্থা আল্লাহ তায়ালা বর্তমান সময়ে সহজ করে দিয়েছেন।

স্থায়ী কমিটিকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: নারীর ডাক্তারি বিদ্যা শেখা ওয়াজিব হোক কিংবা বৈধ হোক, সেটা শেখার জন্য তার ঘর থেকে বের হওয়া যাবে কিনা, যদি এ বিদ্যা অর্জন করতে গিয়ে সে যতই চেষ্টা করুক না কেন নিম্নোক্ত বিষয়গুলো এড়াতে পারবে না:

ক- পুরুষদের সাথে মেলামেশা: রোগী ও চিকিৎসা বিদ্যার শিক্ষক সাথে কথাবার্তা বলা এবং গণরিবহনে পুরুষদের সাথে মেশা।

খ- এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভ্রমণ করা। উদাহরণস্বরূপ সুদান থেকে মিশরের উদ্দেশে ভ্রমণ করা, যদিও তা বিমানের মাধ্যমে কয়েক ঘণ্টার জন্য হয়; তিন দিনের জন্য না হয়।

গ- চিকিৎসা বিদ্যা শেখার জন্য মাহরাম ছাড়া একাকী অবস্থান করা; যদিও সে অনেক নারীর সাথে অবস্থান করে; তবে পূর্বোক্ত পরিস্থিতিগুলোর সাথে থাকে।

স্থায়ী কমিটি উত্তর দেয়:

“এক: যদি সে নারী ডাক্তারি বিদ্যা পড়ার জন্য বের হলে শিক্ষাক্ষেত্রে কিংবা গণ পরিবহনে চড়ার সময় পুরুষদের সাথে এমন মেলামেশা হয় যার ফলে ফিতনা হয়; তাহলে তার জন্য ডাক্তারি পড়া বৈধ নয়। কারণ তার জন্য নিজের ইজ্জত রক্ষা করা ফরযে আইন; আর ডাক্তারি বিদ্যা শেখা ফরযে কিফায়া। ফরযে আইন ফরযে কেফায়ার উপর প্রাধান্য পাবে। অসুস্থ ব্যক্তি কিংবা ডাক্তারি বিদ্যার শিক্ষকের সাথে নিছক কথা বলা হারাম নয়। বরং হারাম হল যার সাথেই কথা বলা হোক, কোমল ও নরমভাবে কথা বলা। যার কারণে যার অন্তরে পাপাচার বা নেফাকীর রোগ আছে, সে তার প্রতি আকৃষ্ট হবে। এটা ডাক্তারি বিদ্যা শেখার সাথে বিশিষ্ট নয়।

দুই:

যদি তার ডাক্তারি বিদ্যা শেখা, শেখানো এবং অসুস্থ ব্যক্তির চিকিৎসা প্রদানের নিমিত্ত সফরে তার সাথে মাহরাম থাকে তাহলে সেটা বৈধ হবে। আর যদি তার সাথে উক্ত সফরে স্বামী বা মাহরাম কেউ না থাকে, তাহলে সেটা হারাম; এমনকি যদি বিমানে সফর করা হয়। তবুও কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “নারী মাহরাম ব্যক্তির সঙ্গে ছাড়া সফর করবে না।” হাদীসটির বিশুদ্ধতার ব্যাপারে সবাই একমত। এছাড়া ইতঃপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ডাক্তারি শেখা বা শেখানোর উপর ইজ্জত রক্ষার কল্যাণ প্রাধান্য পাবে। ... শেষ পর্যন্ত।

তিন:

যদি ডাক্তারি বিদ্যা শেখা বা শেখানো কিংবা নারীদের চিকিৎসা করার জন্য সে একদল বিশ্বস্ত মহিলার সাথে অবস্থান করে, তাহলে সেটা বৈধ হবে। আর যদি প্রবাসে তার সাথে স্বামী বা মাহরাম ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে ফিতনার আশঙ্কা থাকে, তাহলে বৈধ হবে না। যদি তাকে পুরুষদের চিকিৎসা দিতে হয়, তাহলে জায়েয হবে না; শুধু জরুরী অবস্থাতে বৈধ হবে, তবে শর্ত হলো একাকী হওয়া যাবে না।” [‘ফাতাওয়া আল-লাজনাহ আদ-দায়েমাহ’ (১২/১৭৮)

আল্লাহ সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব