আলহামদু লিল্লাহ।.
যে সংস্থাগুলো কাগজপত্র ও পার্সেল ডেলিভারি করে সেগুলোতে কাজ করা মৌলিকভাবে বৈধ। যদি এমন কোন সংস্থা কেবলমাত্র হারাম কিছু ডেলিভারি করে, যেমন: সুদী ব্যাংকের কাগজপত্র, মদ, সিনেমা ও গান ডেলিভারি দেওয়া তাহলে এ কোম্পানিতে চাকুরী করা সত্তাগতভাবে হারাম বলে গণ্য হবে। আর যদি হালালের সাথে হারামের মিশ্রণ ঘটে, তাহলে আধিক্যের উপর ভিত্তি করে হুকুম প্রদান করা হবে। তবে অবশ্যই সরাসরি হারাম কাজ করা থেকে বেঁচে থাকতে হবে।
সুতরাং আপনি ঐ কোম্পানিতে চাকুরীর আবেদন চালিয়ে যাবেন কিনা তা পুরোপুরি নির্ভর করবে আপনি যে কাজগুলোর তত্ত্বাবধান করবেন এবং যে সমস্যাগুলোর সমাধান করবেন সেগুলোর উপর। এগুলোর মধ্যে যেটি হারাম থাকবে আপনি সেটি করবেন না। আর যে সমস্ত কাগজপত্র ও পার্সেল বৈধ আপনি সেগুলোর কাজ করবেন। যদি বিষয়টি এমন শর্তে হয়ে থাকে, তাহলে আপনার জন্য এই চাকুরি করা বৈধ। নাহলে আপনি যতটুকু হারাম কাজ করবেন ততটুকুর জন্য পাপী হবেন। যেমন: মদ প্রেরণ ও গ্রহণ, সিনেমা ও গান প্রেরণ ও গ্রহণ, সুদ-বীমার কাগজপত্র প্রেরণ ও গ্রহণ। এভাবে ঐ কোম্পানিতে যত হারাম বস্তু প্রেরিত ও গৃহীত হবে এবং যেগুলোর প্রেরণ ও গ্রহণে আপনার ভূমিকা থাকবে সব অন্তর্ভুক্ত হবে।
নিঃসন্দেহে মদ স্থানান্তর করা হারাম কাজ; যা বাড়াবাড়িতে ও পাপের কাজে অপরকে সহযোগিতার করার মধ্যে পড়ে। এমন ব্যক্তি সহিহ সুন্নাহতে সাব্যস্ত বর্ণনা অনুসারে আল্লাহর অভিশাপের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর এই নিষেধাজ্ঞা এমন সকল বস্তুর উপর প্রযোজ্য হবে যেগুলো আল্লাহ হারাম করেছেন।
ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটিকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল:
‘এক ব্যক্তির কোনো চাকুরী পাচ্ছেন না। অবশেষে একটি মদের কারখানা অথবা মদের গুদাম অথবা মদ কেনা-বেচার দোকানে চাকুরি পেয়েছেন। সে যে অর্থ উপার্জন করে এবং যে অর্থ তার বড় সংখ্যক সদস্যের পরিবারের জন্য ব্যয় করে, সেটির কী হবে?’
তারা উত্তর দেন: “মুসলিমের জন্য মদের কারখানা অথবা গুদাম অথবা মদের সাথে সম্পৃক্ত অন্য যে কোনো কিছুতে চাকুরী করা জায়েয নেই। সে যা উপার্জন করে সেটি হারাম। তাকে এমন কাজ খুঁজতে হবে যার মাধ্যমে তার কাজ হালাল হবে। পূর্বে সে যা কিছু করেছে সেগুলো থেকে তাকে মহান আল্লাহর কাছে তাওবা করতে হবে। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
“তোমরা সৎকাজ ও দ্বীনদারির ক্ষেত্রে পরস্পরকে সহযোগিতা করো, পাপ ও বাড়াবাড়িতে সহযোগিতা করো না; আর আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।”[সূরা মায়েদা: ২] আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “মদের পানকারী, পরিবেশনকারী, উৎপাদক ও শোধনকারী, সরবরাহকারী ও যার জন্য সরবরাহ করা হয়, এর ক্রেতা ও বিক্রেতা এবং এর মূল্য ভক্ষণকারী—এদের সবাইকে আল্লাহ অভিশাপ দিয়েছেন।”[বুখারী ও মুসলিম][সমাপ্ত]
শাইখ আব্দুল আযীয ইবনে বায, শাইখ আব্দুর রায্যাক আফীফী, শাইখ আব্দুল্লাহ ইবনে গুদাইয়্যান, শাইখ আব্দুল্লাহ ইবনে ক্বুউদ।”[ফাতাওয়াল-লাজনাহ আদ-দায়িমাহ (১৪/৪১১)]
যার কাছে মদ প্রেরণ করা হলো, সে কাফের হোক কিংবা মুসলিম হোক তাতে হুকুমের কোনো পার্থক্য নেই।
ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটিকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল:
‘কিছু শিক্ষক আছেন যারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হারাম পানীয় চায়। শিক্ষক যদি কাফের হয় তাহলে তার জন্য এটি বহন করে নেওয়া কি হারাম, নাকি নয়?’
তারা উত্তর দেন:
‘মদ পান করবে এমন কারো জন্য মুসলিমের মদ উপস্থাপন করা জায়েয নয়। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদ সরবরাহকারী এবং সরবরাহকৃত ব্যক্তিকে অভিশাপ দিয়েছেন। আর যেহেতু এটি পাপ ও বাড়াবাড়িমূলক কাজে সহযোগিতার অন্তর্ভুক্ত যেটি নিষেধ করে আল্লাহ বলেছেন:
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ
“তোমরা সৎকাজ ও দ্বীনদারিতে পরস্পরকে সহযোগিতা করো, পাপ ও বাড়াবাড়িতে সহযোগিতা করো না; আর আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।”[সমাপ্ত]
শাইখ আব্দুল আযীয ইবনে বায, শাইখ আব্দুল্লাহ ইবনে গুদাইয়্যান, শাইখ সালিহ আল-ফাউযান, শাইখ আব্দুল আযীয আলুশ শাইখ, বকর আবু যাইদ।’[ফাতাওয়াল-লাজনাহ আদ-দাইমাহ: (২২/৯৭)]
আমরা আপনাকে হালাল কাজে ধাবিত হতে এবং হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকতে পরামর্শ দিব। আমরা মনে করি আপনার জন্য ঐ কোম্পানিতে হারাম থেকে বেঁচে থাকা কঠিন হবে। আমরা আশা করি আল্লাহ তার অশেষ অনুগ্রহ দিয়ে আপনাকে এর চেয়ে ভালো কাজ প্রদান করবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُ مَخْرَجاً وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ * وَمَن يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ إِنَّ اللَّهَ بَالِغُ أَمْرِهِ قَدْ جَعَلَ اللَّهُ لِكُلِّ شَيْءٍ قَدْراً
“যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য (সংকট থেকে) বের হওয়ার পথ করে দিবেন। আর তাকে এমন জায়গা থেকে জীবিকার ব্যবস্থা করবেন যা সে ধারণাও করে না। যে আল্লাহর উপর ভরসা করে, তার জন্য তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ নিশ্চয়ই তার উদ্দেশ্য পূরণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্য একটি মাত্রা ঠিক করেছেন।”[সূরা ত্বালাক: ২,৩]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ বর্ণনায় আছে: “যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য কিছু ত্যাগ করে, আল্লাহ তাকে এর চেয়ে উত্তম কিছু দান করেন।”[শাইখ আলবানী বর্ণনাটিকে হিজাবুল মারআতিল মুসলিমাহ বইয়ে (পৃ. ৪৯) সহিহ বলে গণ্য করেছেন]
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।