বৃহস্পতিবার 20 জুমাদাল আউওয়াল 1446 - 21 নভেম্বর 2024
বাংলা

যে ব্যক্তি তার অধীনস্ত কর্মচারীদেরকে বেতন বৃদ্ধি ও পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করত সে কিভাবে তওবা করবে?

প্রশ্ন

তওবার চতুর্থ শর্ত ‘কারো উপর যুলুম করে থাকলে হক্বদারের পাওনা তাকে ফিরিয়ে দেয়া’ সম্পর্কে আমার প্রশ্ন। কোন ব্যক্তি যদি হক্বদারের পাওনা তাকে ফিরিয়ে দিতে না পারেন; যেমন তিনি যদি কোন কর্মচারীদের পরিচালক হয়ে থাকেন এবং তাদের কোন একজনের বেতন বৃদ্ধি কমিয়ে দিয়ে কিংবা তাকে প্রাপ্য পদবী না দিয়ে তার উপর অবিচার করে থাকেন; এরপর এই পরিচালক অবসর গ্রহণ করেন তার জন্য কি তাওবা করার সুযোগ আছে। তিনি যদি তাওবা করেন তাহলে এই কর্মকর্তাকে তার অধিকার কিভাবে ফিরিয়ে দিবেন?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

বান্দার অধিকার সংশ্লিষ্ট গুনাহ থেকে তাওবা কবুলের শর্ত হলো হক্বদারকে তাদের পাওনা ফিরিয়ে দেয়া। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তির কাছে তার কোন ভাইয়ের অবিচার সংশ্লিষ্ট পাওনা আছে সে যেন তার ভাইয়ের জন্য তার নেকী থেকে কর্তন করে নেয়ার আগেই সেটা থেকে মুক্ত হয়। কারণ আখিরাতে দিনার ও দিরহাম নাই। আর যদি তার নেকী না থাকে তাহলে তার ভাইয়ের পাপ থেকে নিয়ে তার উপরে সেগুলো চাপিয়ে দেয়া হবে।[সহিহ বুখারী (৬৫৩৪)]

তাই যদি কেউ কারো থেকে অন্যায়ভাবে কিংবা সুকৌশলে কোন সম্পদ গ্রহণ করে থাকে তাহলে সে যেন তার থেকে মাফ চেয়ে নেয় কিংবা যে কোন মাধ্যমে সেটি তাকে ফিরিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে তাকে জানানো শর্ত নয়। আর যদি সেই ব্যক্তি মারা গিয়ে থাকে তাহলে যেন তার ওয়ারিশদেরকে প্রদান করে।

আর যদি মজলুমের কাছে পৌঁছতে সক্ষম না হয় তাহলে সে যেন তার পক্ষ থেকে দান করে দেয়।

যদি উক্ত সম্পদ ফিরিয়ে দিতে না পারে এবং মজলুম থেকে ক্ষমা চাইতেও না পারে তাহলে সে যেন তার মাঝে ও তার প্রভুর মাঝে তাওবা করে। হতে পারে আল্লাহ্‌ কিয়ামতের দিন তার পক্ষ থেকে পরিশোধ করে দিবেন।

নববী (রহঃ) ‘রাওযাতুত ত্বালেবীন’ গ্রন্থে (১১/২৪৬) বলেন: আর যদি এর সাথে (গুনাহর সাথে) কোন আর্থিক অধিকার যুক্ত হয়; যেমন- যাকাত না দেয়া, অন্যায়ভাবে সম্পদ আত্মসাৎ করা, মানুষের সম্পদে কোন অপরাধ করা তাহলে এর সাথে (তাওবার সাথে) দায় মুক্ত হওয়া আবশ্যক। যেমন যাকাত প্রদান করার মাধ্যমে, মানুষের সম্পদ তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে যদি সেটা অটুট থাকে, আর যদি না থাকে তাহলে ক্ষতিপূরণ দেয়ার মাধ্যমে। কিংবা হক্বদার থেকে মাফ চেয়ে নেয়ার মাধ্যমে; যাতে করে হক্বদার তাকে দায়মুক্ত করে দেয়।

যদি হক্বদার সেটা না জেনে থাকে তাহলে তাকে জানানো আবশ্যক। যদি হক্বদার অনুপস্থিত থাকে তাহলে তার কাছে পৌঁছিয়ে দেয়া আবশ্যক; যদি সেখান থেকে আত্মসাৎ করে থাকে। যদি হক্বদার মারা যান তাহলে তার ওয়ারিশদেরকে সমর্পণ করা। যদি তার কোন ওয়ারিশ না থাকে এবং তার কোন খোঁজ না পাওয়া যায় তাহলে এমন কোন বিচারককে সেটা হস্তান্তর করবে যার চরিত্র ও দ্বীনদারি সন্তোষজনক। যদি তা সম্ভবপর না হয় তাহলে তা দরিদ্রদের মধ্যে বণ্টন করে দিবে এ নিয়তে যে তাকে পাওয়া গেলে তাকেই ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করবে...।

যদি অস্বচ্ছল হয় তাহলে স্বচ্ছল হলে ক্ষতিপূরণ দেয়ার নিয়ত করবে। যদি স্বচ্ছল হওয়ার আগেই মারা যায় তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ্‌ তাকে ক্ষমা করে দিবেন।

নববী বলেন: আমি বলব: সহিহ সুন্নাহ্‌গুলোর বাহ্যিক মর্ম অবিচারকৃত হক্ব দাবী করাকে সাব্যস্ত করে; এমনকি যদি ব্যক্তি অস্বচ্ছল ও অক্ষম অবস্থায় মারা যায় তবুও; যদি সে গুনাহকারী হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে, যদি এমন কোন অবস্থায় ঋণ নিয়ে থাকে যে অবস্থায় ঋণ নেয়া বৈধ এবং মৃত্যু অবধি উক্ত ঋণ পরিশোধে তার অক্ষমতা চলমান থাকে কিংবা ভুলবশতঃ কোন কিছু নষ্ট করে থাকে এবং মৃত্যু পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দিতে সক্ষম না হয় তাহলে অগ্রগণ্য মতানুযায়ী আখিরাতে তার কাছে সেটি আর চাওয়া হবে না। যেহেতু তার থেকে কোন গুনাহ হয়নি। এবং আল্লাহ্‌র কাছে প্রত্যাশা হচ্ছে তিনি হক্বাদারকে এর বিনিময় দিয়ে দিবেন...।

পক্ষান্তরে, গীবতের খবর যদি যার গীবত করা হলো তার কাছে না পৌঁছে: আমি আল-হানাত্বী ফতোয়াসমগ্রে দেখেছি যে, তার ক্ষেত্রে অনুতপ্ত ও ক্ষমাপ্রার্থনা করাই যথেষ্ট। আর যদি যার গীবত করা হলো তার কাছে সংবাদ পৌঁছে থাকে তাহলে তার কাছে এসে তার থেকে মাফ চেয়ে নেয়ায় হলো পদ্ধতি। যদি তার মৃত্যুর কারণে সেটি সম্ভবপর না হয় কিংবা দূরবর্তী স্থানে অনুপস্থিত হওয়ার কারণে সেটি সম্ভবপর না হয়: সেক্ষেত্রে আল্লাহ্‌র কাছে ইস্তিগফার করবে। ওয়ারিশগণ মাফ করে দিলেও সেটা ধর্তব্য নয়। আল-হানাত্বী এভাবেই উল্লেখ করেছেন।[সমাপ্ত]

অতএব আর্থিক অধিকারগুলোর ক্ষেত্রে সেগুলো মজলুমকে ফিরিয়ে দেয়া আবশ্যক। আর ভাবগত অধিকারগুলোর ক্ষেত্রে অনুশোচনা ও ক্ষমাপ্রার্থনা করাই যথেষ্ট; যদি সেটা মজলুম পর্যন্ত না পৌঁছে।

আপনি যা উল্লেখ করেছেন “কর্মচারীর বেতন বৃদ্ধি কমিয়ে দেয়া” কিংবা “তাকে তার প্রাপ্য পদবী না দেয়া” এতে আর্থিক সীমালঙ্ঘন ঘটেছে। তা হলো সে যে সম্পদ পেত সেটা থেকে তাকে বঞ্ছিত করা। এবং এতে ভাবগত সীমালঙ্ঘনও ঘটেছে। আর তা হলো তাকে তার উপযুক্ত পদবী থেকে পিছিয়ে দেয়া।

সুতরাং আর্থিক অধিকারের ব্যাপারে আপনার উপর আবশ্যক হলো: এর হক্বাদার থেকে মাফ চেয়ে নেয়া কিংবা তাকে এ পরিমাণ সম্পদ পরিশোধ করা যতটুকু সম্পদ থেকে সে আপনার যুলুমের কারণে বঞ্চিত হয়েছে।

আপনি যদি কাউকে দিয়ে মজলুমের কাছে সুপারিশ করাতে চান তাহলে আপনি সেটা করতে পারেন এবং সুপারিশকারী তার থেকে ক্ষমা চাইতে পারে।

যদি এ দুটোর কোনটি করতে না পারেন তাহলে বেশি বেশি অনুতপ্ততা প্রকাশ করুন এবং ইস্তিগফার করুন এবং আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করুন যাতে করে আল্লাহ্‌ তাআলা কিয়ামতের দিন আপনার পক্ষ থেকে পরিশোধ করে দেন।

পক্ষান্তরে ভাবগত অধিকারের ক্ষেত্রে মজলুম যদি সেটা না জানে তাহলে কেবল অনুতপ্ত হওয়া ও ইস্তিগফার করাই যথেষ্ট। আর যদি সে জেনে থাকে তাহলে তার থেকে মাফ চাওয়া আবশ্যক; যদি না এর ফলে বড় ধরণের কোন অঘটনের আশংকা না করে থাকেন।

আমরা আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করছি তিনি যেন আপনার তাওবা কবুল করে নেন, আপনাকে দায় মুক্ত করে দেন এবং আপনাকে তাঁর আনুগত্যের পথে সাহায্য করেন।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব