বৃহস্পতিবার 20 জুমাদাল আউওয়াল 1446 - 21 নভেম্বর 2024
বাংলা

মসজিদে নববি যিয়ারত

প্রশ্ন

প্রশ্ন: যে হাজী অথবা উমরাকারী মসজিদে নববি যিয়ারত করতে চান তিনি কি মসজিদ যিয়ারতের নিয়ত করবেন? নাকি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কবর যিয়ারতের নিয়ত করবেন? মসজিদে নববি যিয়ারত করার আদবগুলো কি কি?

আলহামদু লিল্লাহ।.

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন: যদি হাজীসাহেব হজ্জের আগে অথবা পরে মসজিদে নববি যিয়ারত করতে চান তাহলে তিনি মসজিদে নববি যিয়ারত করার নিয়ত করবেন; কবর নয়। কারণ নেকি হাছিল করার জন্য কোন কবরকেউদ্দেশ্য করে সফর করা জায়েয নয়; বরং সফর করা যায় তিনটি মসজিদের উদ্দেশ্যে। সেগুলো হচ্ছে- মসজিদে হারাম, মসজিদে নববি ও মসজিদে আকসা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে তিনি বলেন: “তিনটি মসজিদ ছাড়া অন্য কোন কিছুকে উদ্দেশ্য করে সফর করা যাবে না: মসজিদে হারাম, আমার মসজিদ ও মসজিদে আকসা।”[সহিহ বুখারি (১১৮৯) ও সহিহ মুসলিম (১৩৯৭)] যিয়ারতকারী যখন মসজিদে নববিতে পৌঁছবে তখন মসজিদে প্রবেশ করার জন্য ডান পা এগিয়ে দিবে এবং এ দোয়াটি পড়বে:

বিসমিল্লাহ, ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসূলিল্লাহ। আল্লাহুম্মাগফিরলি যুনুবি, ওয়াফ তাহলি আবওয়াবা রহমাতিক। আউজুবিল্লাহিল আযিম, ওয়া বি ওয়াজহিহিল কারিম, ওয়া বি সুলতানিহিল কাদিম মিনাশ শায়তানির রাজিম।

(অর্থ- “আমি আল্লাহর নামে শুরু করছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। হে আল্লাহ! আমার গুনাহগুলো মার্জনা করে দিন। আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাগুলো খুলে দিন। আমি মহান আল্লাহ্‌র কাছে তাঁর সম্মানিত চেহারা ওঅনাদি ক্ষমতার উসিলায় বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”)

এরপর যা খুশি নামায পড়বে।উত্তম হচ্ছে- রিয়াদুল জান্নাতে (জান্নাতের বাগান) নামায আদায় করা। এটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মিম্বর ও হুজরা (যেখানে কবরটি রয়েছে) এর মাঝখানের স্থান। এ স্থানটুকু জান্নাতের বাগান। নামায শেষে যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কবর যিয়ারত করতে আসবে তখন আদবের সাথে কবরের সামনে দাঁড়াবে এবং বলবে: আসসালামু আলাইকা আইয়্যুহান নাবী ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মদ ওয়া আলা আলি মুহাম্মদ কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহিম ওয়া আলা আলি ইব্রাহিম ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মদ ওয় আলা আলি মুহাম্মদ কামা বারাকতা আলা ইব্রাহিম ওয়া আলা আলি ইব্রাহিম ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আশহাদু আন্নাকা রাসূলুল্লাহি হাক্কান। ওয়া আন্নাকা কাদ বাল্লাগতার রিসালা, ওয়া আদ্দাইতাল আমানা, ওয়া নাসাহতাল উম্মাহ, ওয়া জাহাদতা ফিল্লাহি হাক্কা জিহাদিহ। ফা জাযাকাল্লাহু আন উম্মাতিকা আফযালা মা জাযা নাবিয়্যান আন উম্মাতিহি।

(অর্থ- হে নবী! আপনি নিরাপদে থাকুন।আপনার উপর আল্লাহর রহমত ও বরকতনাযিল হোক। হে আল্লাহ! আপনি উর্ধ্ব জগতে মুহাম্মদের ও তাঁর পরিবার-পরিজনের প্রশংসা করুন।যেভাবে আপনি উর্ধ্ব জগতে ইব্রাহিমের ও তাঁর পরিবার-পরিজনের প্রশংসা করেছেন। নিশ্চয় আপনি অত্যন্ত প্রশংসিত ও মহামহিমান্বিত। হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবার পরিজনের উপর বরকত নাযিল করুন যেমন আপনি বরকত নাযিল করেছিলেন ইবরাহীম ও তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর। নিশ্চয় আপনি অত্যন্ত প্রশংসিত ও মহামহিমান্বিত। আমি স্পষ্টভাবে সাক্ষ্য দিচ্ছি, আপনি আল্লাহর রাসূল। আপনি আপনার উপর অর্পিত রিসালাতের দায়িত্ব পালন করেছেন। আমানত আদায় করেছেন। উম্মতের কল্যাণ করার চেষ্টা করেছেন। আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম করেছেন। আল্লাহ আপনাকে উম্মতের পক্ষ থেকে উত্তম প্রতিদান দিন”।)

এরপর সামান্য ডানে অগ্রসর হয়ে আবু বকর (রাঃ) এর কবরে সালাম দিবে ও তাঁর জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি প্রার্থনা করবে।

এরপর আরেকটু ডানে অগ্রসর হয়ে উমর (রাঃ) এর কবরে সালাম দিবে ও তাঁর জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি প্রার্থনা করবে। যদি তাঁদের দুজনের মর্যাদার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ অন্য কোন দোয়া করে সেটাও ভাল।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কবরের হুজরা মাসেহ করা অথবা হুজরার চর্তুদিকে তাওয়াফ করা কিংবা দোয়ার সময় কবরকে সামনে রাখা জায়েয নয়। কারণ আল্লাহর নৈকট্য হাছিল করতে হবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যে বিধান দিয়েছেন তার আলোকে। ইবাদতগুলোর ভিত্তি হতে হবে অনুকরণ; অভিনব কোন কিছু নয়। আর নারীর জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কবর বা অন্য কারো কবর যিয়ারত করা জায়েয নয়। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “কবর যিয়ারতকারী নারীদের উপর লানত হোক”[সুনানে তিরমিজী, আলবানী সহিহ তিরমিজী গ্রন্থে হাদিসটিকে হাসান বলেছেন] তবে নারীগণ তাদের স্ব স্ব স্থানে থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি সালাত ও সালাম(রহমত ও শান্তি) প্রার্থনা করবেন। যে কোন স্থান থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি সালাত ও সালাম পেশ করা হোক না কেন সেটা তাঁর কাছে পৌঁছানো হয়। হাদিসে এসেছে- তোমরা যেখানে থাক না কেন আমার প্রতি দরুদ পড়। তিনি আরও বলেন: আল্লাহর পক্ষ থেকে কিছু ফেরেশতা জমিনে ঘুরে বেড়ান। তারা আমার উম্মতের সালাম আমার নিকটে পৌঁছে দেন”[সুনানে নাসাঈ (১২৮২), আলবানী সহিহ নাসাঈ (১২১৫) গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন] (জ্ঞাতব্য: হাদিসে زُوَّارات শব্দটি زائرات শব্দের অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। কেননা زُوَّارات শব্দটি زُوّار অর্থ- زائر (যিয়ারতকারী) শব্দের বহুবচন। দেখুন: শাইখ বকর আবু যায়েদ এর যিয়ারাতুল কুবুর লিন নিসা, পৃষ্ঠা- ১৭) পুরুষদের জন্য মদিনার বাকী কবরস্থান যিয়ারত করা বাঞ্ছনীয়। যিয়ারতকালে বলবেন:

السَّلَامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنْ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَاحِقُونَ يَرْحَمُ اللَّهُ الْمُسْتَقْدِمِينَ مِنَّا وَمِنْكُمْ وَالْمُسْتَأْخِرِينَ نَسْأَلُ اللَّهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ اللهُمَّلَا تَحْرِمْنَا أَجْرَهُمْ، وَلَا تَفْتِنَّا بَعْدَهُمْ وَاغْفِرْ لَنَا وَلَهُمْ.

(অর্থ- ও মুমিন, মুসলমান কবরবাসী! আপনাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমরাও অচিরেই আপনাদের সাথে মিলিত হব। আল্লাহ তাআলা আমাদের ও আপনাদের মধ্যকার অগ্রবর্তী বাপশ্চাৎবর্তী সকলকে ক্ষমা করে দিন। আমরা আমাদের ও আপনাদের জন্য আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমাদেরকে তাদের সওয়াব থেকে বঞ্চিত করবেন না। তাদের মৃত্যুর পরআমাদেরকে ফেতনাগ্রস্ত করবেন না। আমাদেরকে ও তাদেরকে ক্ষমা করে দিন।)

যদি ওহুদ পাহাড়ে যেতে চায় এবং সেখানে গিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাহাবীবর্গ সেই যুদ্ধে যে ত্যাগ, পরীক্ষা ও শাহাদাতের নজরানা পেশ করেছেন সেগুলো স্মরণ করতে চায় এরপর সেখানে শায়িত শহীদদের কবরে সালাম দিতে চায় ঊদাহরণ রাসূলের চাচা হামযা বিন আব্দুল মোত্তালেবের কবরে এতে কোন অসুবিধা নেই। বরং এটি জমিনে ভ্রমণ করার যে নির্দেশ তার অন্তর্ভুক্ত হবে। আল্লাহই ভাল জানেন।

সূত্র: কিতাব: আল-মানহাজ লি মুরিদিল উমরা ওয়াল হাজ্জ