আলহামদু লিল্লাহ।.
হাদীসটি মুসলিম (৪৩৮) সংকল করেছেন আবু সাঈদ খুদরী থেকে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কিছু সাহাবীর মাঝে পেছনে নামায পড়ার প্রবণতা লক্ষ্য করলেন। তিনি তাদেরকে বললেন: “তোমরা সামনে এগিয়ে আস; যাতে আমাকে অনুসরণ করতে পারো এবং যাতে করে তোমাদের পরবর্তীরা তোমাদেরকে অনুসরণ করতে পারে। একদল লোক সবসময় পিছিয়ে থাকবে এক পর্যায়ে আল্লাহ তাদেরকে পিছিয়েই রাখবেন।”
হাদীসটির অর্থ হলো:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কিছু সাহাবীকে প্রথম কাতার থেকে পিছিয়ে থাকতে দেখলেন। তিনি তাদেরকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণে সামনে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন; যাতে করে পরে আসা পিছনের কাতারের লোকজন তাদেরকে অনুসরণ করতে পারে যারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখতে পায় না।
অর্থটাও এমনও হতে পারে: (মুসলিম) উম্মাহর পরবর্তী ব্যক্তিরা তাদের অনুসরণ করবে। কারণ তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামাযের যে পদ্ধতি দেখতে পেয়েছে, সেটা তারা পরবর্তীদের কাছে পৌঁছে দিবে। সিন্দী রাহিমাহুল্লাহ এই মত পোষণ করেছেন।
এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “একদল লোক সবসময় পিছিয়ে থাকবে এক পর্যায়ে আল্লাহ তাদেরকে পিছিয়েই রাখবেন”।
অর্থাৎ এক দল লোক প্রথম কাতার কিংবা প্রথম কাতারগুলো থেকে পিছনে দাঁড়ানোয় অভ্যস্ত হয়ে পড়বে যে এক পর্যায়ে আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি হিসেবে পিছিয়ে দিবেন।
কারো কারো মতে এর অর্থ হচ্ছে: (আল্লাহ) তাদেরকে নিজের রহমত হতে বা তাঁর জান্নাত হতে বা বিপুল অনুগ্রহ হতে বা মর্যাদা বৃদ্ধি হতে বা ইলম হতে পিছিয়ে দিবেন।
এই সকল অর্থে হাদীসকে গ্রহণ করতে কোন বাধা নেই।
শাইখ ইবনে উছাইমীন উক্ত হাদীসের অর্থে বলেন:
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল লোককে মসজিদের পিছনে থাকতে দেখলেন। অর্থাৎ তারা প্রথম কাতারগুলোর দিকে যাচ্ছিল না। তখন তিনি বললেন: “একদল লোক সবসময় পিছিয়ে থাকবে এক পর্যায়ে আল্লাহ তাদেরকে পিছিয়েই রাখবেন।” এ হাদিসের ভিত্তিতে যে ব্যক্তি ইবাদতে দেরী করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে তার ব্যাপারে আশঙ্কা করা হয় যে আল্লাহ তাকে সকল কল্যাণের ক্ষেত্রে পিছিয়ে রাখার পরীক্ষায় ফেলবেন।”[ফাতাওয়া ইবনে উছাইমীন (১৩/৫৪) সংক্ষেপে সমাপ্ত]
কিছু আলেম মত প্রদান করেন যে এর দ্বারা উদ্দেশ্য মুনাফিকদের দল। কিন্তু বিশুদ্ধ মত হলো হাদীসের ভাব সার্বিক; মুনাফিকদের সাথে বিশিষ্ট নয়।
শাওকানী ‘নাইলুল আওত্বার’ বইয়ে বলেন:
“কেউ কেউ বলেন: এ হাদিসটি মুনাফিকদের ব্যাপারে। অগ্রগণ্য মনে হয়: এটা সার্বিক; মুনাফিক ও অন্যরা সবাই এর অন্তর্ভুক্ত। এখানে প্রথম কাতারে থাকতে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। প্রথম কাতার থেকে পিছিয়ে থাকার ব্যাপারে অনুৎসাহী করা হয়েছে।”[সমাপ্ত]
সারকথা হল হাদীসে একজন পুরুষকে প্রথম কাতার বা প্রথম কাতারগুলোতে নামায আদায়ে আগ্রহী করে তোলা হয়েছে। পরবর্তী কাতারগুলোতে নামায আদায়ে অভ্যস্ত হওয়ার নিন্দা করা হয়েছে।
আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তিনি যেন আমাদেরকে উত্তম কাজের দিকে দ্রুত অগ্রসর হওয়া এবং সেটার জন্য প্রতিযোগিতা করার তৌফিক দান করেন।
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।