বৃহস্পতিবার 20 জুমাদাল আউওয়াল 1446 - 21 নভেম্বর 2024
বাংলা

একগুঁয়েমি দূর করা কিংবা কোন কিছু ক্রয় করার জন্য নারীর বাহিরে বের হওয়া

প্রশ্ন

মেয়েদের বাহিরে যাওয়া সম্পর্কে লোকেরা বলে যে, মেয়েদের বাহিরে যাওয়ার জন্য আইনসঙ্গত কারণ থাকতে হবে; এটা শুনে আমি চিন্তিত। সাধারণ কিছু প্রয়োজনে (কিংবা বৈধ বিনোদনের জন্য) বাহিরে যাওয়া কি হারাম হবে; যদি আমি পরিপূর্ণ হিজাবসহ বের হই?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

ইসলাম নারীর সম্মান ও ইজ্জত রক্ষার জন্য এসেছে। ইসলাম এমন কিছু বিধান আরোপ করেছে যাতে করে নারীর এ অধিকারগুলো রক্ষা করা যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন: “তোমরা (নারীরা) তোমাদের ঘরে অবস্থান কর”[সূরা আহযাব, আয়াত: ৩৩] এ আয়াতের ভিত্তিতে বলা যায়, মূল বিধান হলো- নারীরা ঘরে অবস্থান করবে; আবশ্যকীয় বিষয় কিংবা প্রয়োজনীয় বিষয় ছাড়া ঘর থেকে বের হবে না। ইসলাম নারীর ঘরে নামায পড়াকে মসজিদে নামায পড়ার চেয়ে উত্তম ঘোষণা করেছে; এমন কি সেটা যদি মসজিদে হারামও হয় না কেন।

এর অর্থ এ নয় যে, নারী ঘরে মধ্যে বন্দীদশায় পড়ে থাকবে। বরং ইসলাম নারীর জন্য মসজিদে যাওয়া বৈধ রেখেছে। নারীর ওপর হজ্জ-উমরা, ঈদের নামায ইত্যাদি আদায় করা ফরয করেছে। এ ছাড়াও ইসলামী শরিয়ত নারীকে তার পরিবার-পরিজন, মোহরেম আত্মীয়-স্বজনকে দেখার জন্য, আলেমদেরকে ফতোয়া জিজ্ঞেস করার জন্য বের হওয়ার অনুমোদন দেয়। অনুরূপভাবে নারীদের প্রয়োজনে তাদেরকে বের হওয়ার অনুমতি দেয়। তবে, উল্লেখিত প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে শরিয়ত কর্তৃক নির্ধারিত নিয়মনীতি মেনে বের হতে হবে; যেমন- সফরের ক্ষেত্রে মোহরেম সাথে থাকা, নিজ এলাকার মধ্যে হলে রাস্তা নিরাপদ হওয়া, পরিপূর্ণ পর্দাসহ বের হওয়া, বেপর্দা না হওয়া, সাজসজ্জা না করা, সুগন্ধি ব্যবহার না করা।

এ বিষয়ে কিছু শরয়ি দলিল উদ্ধৃত হয়েছে; যেমন-

ক. ইবনে উমর (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, “যদি তোমাদের কারো কাছে তার স্ত্রী মসজিদে যাওয়ার অনুমতি চায় তাহলে তাকে বাধা দিও না।”[সহিহ বুখারী (৮২৭) ও সহিহ মুসলিম (৪৪২)]

খ. আব্দুল্লাহর স্ত্রী যয়নব (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে বলেছেন: “তোমাদের কেউ যদি মসজিদে আসতে চায় তাহলে সে যেন সুগন্ধি না মাখে”[সহিহ মুসলিম (৪৪৩)]

গ. জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমার খালার তালাক হয়ে যাওয়ার পর তিনি তাঁর খেজুর পাড়তে গেলেন। বাহিরে আসার কারণে এক লোক তাঁকে ধমক দিল। তখন তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে জানালেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: অবশ্যই; তুমি তোমার খেজুর পাড়বে। হতে পারে এর থেকে তুমি সদকা করবে কিংবা কোন ভাল কাজে লাগাবে।”[সহিহ মুসলিম (১৪৮৩)]

প্রশ্নে যে বিনোদনের ইঙ্গিত করা হয়েছে সে বিনোদনের মধ্যে বেগানা পুরুষদের সাথে সংমিশ্রণ থাকতে পারে, কিংবা গায়রে মোহরেম এর সাথে সফর হতে পারে কিংবা প্রয়োজন ছাড়া বেশি বেশি বাহিরে যাওয়া হতে পারে; তাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা আবশ্যক। অর্থাৎ বিনোদন সত্যিকার অর্থে বৈধ বিনোদন হতে হবে এবং আল্লাহর শাস্তি আবশ্যককারী যাবতীয় হারাম মুক্ত হতে হবে। যদি নারী এমন কোন স্থানে বের হন যেখানে হারাম কিছু নেই এবং বেশি বেশি বের না হন তাহলে এতে কোন অসুবিধা নেই।

আমরা আল্লাহর কাছে পুত- পবিত্রতা, আত্মসংরক্ষণ ও ভাল দ্বীনদারি অর্জনের প্রার্থনা করছি। আমাদের নবী মুহাম্মদের ওপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।

সূত্র: শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ