সোমবার 22 জুমাদাল ছানী 1446 - 23 ডিসেম্বর 2024
বাংলা

যে ব্যক্তি রমযানের শেষ দশদিন ইতিকাফ করতে চান তিনি কখন মসজিদে প্রবেশ করবেন এবং কখন বের হতে পারবেন

প্রশ্ন

আমি রমযানের শেষ দশদিন ইতিকাফ করতে চাই। আমি জানতে চাই আমি কখন মসজিদে প্রবেশ করব এবং কখন মসজিদ থেকে বের হতে পারব?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

ইতিকাফকারীর মসজিদে প্রবেশের ব্যাপারে জমহুর আলেম (চার ইমাম আবু হানিফা, মালেক, শাফেয়ি, আহমাদ) এর অভিমত হচ্ছে- ২১ রমযানের রাত শুরু হওয়ার আগে সূর্যাস্তের পূর্বে মসজিদে প্রবেশ করবেন। এ মতের পক্ষে তারা নিম্নোক্ত দলিল দেন:

১- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি রমযানের শেষ দশরাত্রি ইতিকাফ করতেন।[বুখারি ও মুসলিম]

এ হাদিসে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, তিনি রাত্রিতে ইতিকাফ করতেন; দিনে নয়। কারণ العشر শব্দটিاللياليশব্দের تمييز। আল্লাহ তাআলা বলেন: “দশরাত্রির শপথ” [সূরা আল-ফজর, আয়াত: ২]

শেষ দশরাত্রি ২১ তম রাত থেকে শুরু হয়।

উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায়, ২১ তম রাত্রির সূর্যাস্তের পূর্বেই মসজিদে প্রবেশ করবেন।

২- তারা আরও বলেন: ইতিকাফকারী যে উদ্দেশ্য নিয়ে ইতিকাফ করেন তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- লাইলাতুল ক্বদর প্রাপ্তি। রমযানের ২১তম রাত্রি শেষদশকের একটি বেজোড় রাত্রি; তাই এ রাতটি লাইলাতুল ক্বদর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য এ রাতে ইতিকাফ করাটা বাঞ্ছনীয়।[এ কথাটি ইমাম সিন্দি রচিত নাসাঈর হাশিয়াতে রয়েছে; দেখুন: আল-মুগনি ৪/৪৮৯]

তবে সহিহ বুখারি (২০৪১) ও সহিহ মুসলিম (১১৭৩) কর্তৃক আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম যদি ইতিকাফ করতে চাইতেন তিনি ফজরের নামায পড়ে তাঁর ইতিকাফের স্থানে ঢুকে যেতেন।

এ হাদিসের বাহ্যিক অর্থের পক্ষে অভিমত দিয়ে বেশ কিছু সলফে সালেহীন বলেন: ফজরের নামাযের পর ইতিকাফস্থলে ঢুকতে হবে। এ মতটি সৌদি ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটি গ্রহণ করেছেন (১০/৪১১) এবং বিন বাযও গ্রহণ করেছেন (১৫/৪৪২)।

তবে জমহুর আলেম এ দলিলের বিপক্ষে দুইটি জবাব দিয়ে থাকেন:

এক: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূর্য ডোবার আগে থেকেই ইতিকাফ শুরু করেছেন। তবে তিনি ইতিকাফের জন্য মসজিদের সুনির্দিষ্ট স্থানে ফজরের নামাযের আগে প্রবেশ করেননি।

ইমাম নববী বলেন:

“যদি ইতিকাফ করতে চাইতেন তাহলে তিনি ফজরের নামায পড়ে ইতিকাফস্থলে ঢুকে যেতেন” এ হাদিসাংশ দিয়ে সেসব আলেম দলিল দেন যারা মনে করেন: দিনের শুরু থেকে ইতিকাফ শুরু হয়। আওযায়ি, ছাওরি, এক বর্ণনামতে লাইছ এ মতের প্রবক্তা। আর ইমাম মালেক, আবু হানিফা, শাফেয়ি ও আহমাদের মতে, যদি গোটা মাস অথবা দশদিন ইতিকাফ করতে চায় তাহলে সূর্যাস্তের পূর্বে ইতিকাফস্থলে প্রবেশ করবে। যারা এ মতের প্রবক্তা তারা উল্লেখিত হাদিসটির অর্থ করেন এভাবে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সম্পূর্ণ একাকিত্ব গ্রহণ করে ইতিকাফের বিশেষ স্থানে প্রবেশ করেছেন ফজরের নামাযের পর। এর অর্থ এ নয় যে, তিনি ফজরের নামাযের পর ইতিকাফ শুরু করেছেন। বরং মাগরিবের আগেই তিনি ইতিকাফ শুরু করে মসজিদে অবস্থান নিয়েছেন; আর ফজরের নামাযের পর নির্জনতা গ্রহণ করেছেন। সমাপ্ত

দুই:

হাম্বলি মাযহাবের আলেম কাযী আবু ইয়ালা আয়েশা (রাঃ) এর হাদিসের একটি জবাব দেন সেটি হচ্ছে- এ হাদিসকে এ অর্থে গ্রহণ করা যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ২০ রমযান ফজরের নামাযের পরইতিকাফস্থলে প্রবেশ করতেন। সিন্দি বলেন: কিয়াসের মাধ্যমে এ জবাবটি জানা যায়। এ জবাবটি অধিক উত্তম এবং অধিক নির্ভরযোগ্য। সমাপ্ত

শাইখ উছাইমীনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল (ফাতাওয়াস সিয়াম পৃষ্ঠা-৫০১): কখন ইতিকাফ শুরু করা হবে?

জবাবে তিনি বলেন: জমহুর আলেমের মতে, ইতিকাফের শুরু হচ্ছে- ২১ রমযান রাত থেকে; ২১ রমযান ফজর থেকে নয়। যদিও কোন কোন আলেম বুখারি কর্তৃক সংকলিত আয়েশা (রাঃ) এর হাদিস “যখন ফজরের নামায পড়লেন তখন তিনি তাঁর ইতিকাফস্থলে প্রবেশ করলেন” দিয়ে দলিল দিয়ে বলেন: ২১ রমযান ফজর থেকে ইতিকাফ শুরু হবে। তবে জমহুর আলেম এর প্রত্যুত্তর দেন এভাবে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভোর থেকে মানুষ থেকে বিচ্ছিন্নতা গ্রহণ করেন; তবে ইতিকাফের নিয়ত করেছেন রাতের প্রারম্ভ থেকে। কারণ শেষ দশক শুরু হয় ২০ তারিখ সূর্যাস্ত থেকে। সমাপ্ত

তিনি আরও বলেন (পৃষ্ঠা-৫০৩):

ইতিকাফকারী সূর্যাস্তের পর ২১ রমযান রাত থেকে মসজিদে প্রবেশ করবে। কারণ এটি হচ্ছে- শেষ দশকের শুরু। আর এটি আয়েশা (রাঃ) এর হাদিসের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। কারণ সে হাদিসের শব্দাবলি বিভিন্ন। সুতরাং সে হাদিসের যে শব্দ আভিধানিক অর্থের অধিক নিকটবর্তী সে শব্দটি গ্রহণ করতে হবে। সেটি ইমাম বুখারি কর্তৃক আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে (২০৪১) তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক রমযানে ইতিকাফ করতেন। যখন ফজরের নামায পড়া শেষ হত তখন তিনি যে স্থানে ইতিকাফ করেছেন সে স্থানে প্রবেশ করতেন।

তাঁর বাণী: “যখন ফজরের নামায পড়া শেষ হত তখন তিনি যে স্থানে ইতিকাফ করেছেন সে স্থানে প্রবেশ করতেন” এ বাণীর দাবী হচ্ছে- এ প্রবেশের পূর্বেই তিনি অবস্থান করেছেন। অর্থাৎ তিনি ইতিকাফের সুনির্দিষ্ট স্থানে প্রবেশের পূর্বে মসজিদে অবস্থান নিয়েছেন। আর তাঁর বাণী: “তিনি ইতিকাফ করেছেন” এটি অতীত কালের ক্রিয়া। অতীত কালের ক্রিয়ার মূল রূপ হচ্ছে- এর আসল অর্থে ব্যবহার করা। সমাপ্ত

দুই: পক্ষান্তরে ইতিকাফ থেকে বের হওয়ার সময়:

রমযানের সর্বশেষ দিনের সূর্যাস্তের পর মসজিদ থেকে বের হতে হয়।

শাইখ উছাইমীনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল: ইতিকাফকারী কি ঈদ-রাত্রির সূর্যাস্তের পর ইতিকাফ থেকে বের হবে; নাকি ঈদের দিন ফজরের পর বের হবে?

উত্তরে তিনি বলেন:

রমযান মাস শেষ হওয়ার পর ইতিকাফকারী ইতিকাফ থেকে বের হবে। ঈদের রাত্রির সূর্যাস্তের মাধ্যমে রমযান শেষ হয়ে যাবে। ফাতাওয়াস সিয়াম (পৃষ্ঠা-৫০২) সমাপ্ত

স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্রতে (১০/৪১১) এসেছে-

রমযানের দশদিনের ইতিকাফ রমযানের শেষদিনের সূর্যাস্তের মাধ্যমে শেষ হবে।[সমাপ্ত]

আর যদি ফজর পর্যন্ত মসজিদেঅবস্থান করে ইতিকাফ থেকে সরাসরি ঈদের নামাযে যেতে চান এতেও কোন অসুবিধা নেই। কিছু কিছু সলফে সালেহীন এটাকে মুস্তাহাব বলেছেন।

ইমাম মালেক বলেন: তিনি কিছু কিছু আলেমকে দেখেছেন তাঁরা রমযানের শেষ দশদিন ইতিকাফ করলে মানুষের সাথে ঈদের নামায পড়ে তারপর তাদের পরিবারের নিকট ফিরে আসতেন। মালেক বলেন: পূর্ববর্তী মর্যাদাবান আলেমদের থেকে এটি বর্ণিত আছে। এ মাসয়ালায় এটি আমার নিকট অধিক প্রিয়।

ইমাম নববী ;আল-মাজমু’ গ্রন্থে বলেন:

ইমাম শাফেয়ি ও তাঁর ছাত্রগণ বলেন: যে ব্যক্তি রমযানের শেষ দশদিনের ইতিকাফের ক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসরণ করতে চায় তার উচিত সূর্যাস্তের আগে ২১ রমযান রাতে মসজিদে প্রবেশ করা। যাতে করে, শেষ দশদিনের কোন অংশ তার ছুটে না যায়। ঈদের রাত্রির সূর্যাস্ত যাওয়ার পর মসজিদ থেকে বের হবে। এক্ষেত্রে রমযান মাস পূর্ণ ৩০ দিন হোক অথবা অপূর্ণ হোক। উত্তম হচ্ছে- ঈদের রাত্রিতে মসজিদে অবস্থান করা; যাতে করে ঈদের নামায সেখানে পড়তে পারে অথবা মসজিদ থেকে সরাসরি ঈদগাহে গিয়ে ঈদের নামায আদায় করে আসতে পারে। সমাপ্ত

যদি ইতিকাফ থেকে সরাসরি ঈদের নামাযে বের হয় তাহলে নামাযে যাওয়ার আগে গোসল করে নেয়া ও পরিপাটি হওয়া মুস্তাহাব। কারণ এটি ঈদের সুন্নত। এ বিষয়টি বিস্তারিত জানতে 36442 নং প্রশ্নোত্তর দেখুন।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব