আলহামদু লিল্লাহ।.
জমরাতগুলোতে (স্তম্ভগুলোতে) কংকর নিক্ষেপ করা হজ্জের ওয়াজিবগুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রত্যেক যে ব্যক্তি এ মহান ইবাদতটি আদায় করে তার জন্য এটি আদায় করা বিধিবদ্ধ। এই আমলটি আদায়ের বিষয়টি আলেমদের নিকট সহিহ সাব্যস্ত হাদিসে সরাসরি উদ্ধৃত হয়েছে। ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজল (রাঃ) কে বাহনের পিছে চড়িয়েছেন। ফজল (রাঃ) জানিয়েছে যে, তিনি জমরাতে কংকর নিক্ষেপ করার আগ পর্যন্ত তালবিয়া পড়েছেন।[সহিহ বুখারী (১৬৮৫) ও সহিহ মুসলিম (১২৮২)]
আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি যখন বড় জমরাতে পৌঁছলেন তখন বায়তুল্লাহ্কে বামে রেখে, মীনাকে ডানে রেখে সাতটি কংকর মারলেন এবং বললেন: যার উপর সূরা বাক্বারা নাযিল হয়েছে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এভাবেই কংকর মেরেছেন।[সহিহ বুখারী (১৭৪৮) ও সহিহ মুসলিম (১২৯৬)]
ইবনে উমর (রাঃ) সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তিনি ছোট জমরাতকে সাতটি কংকর মারতেন। প্রত্যেকবার কংকর মারার শেষে তিনি তাকবীর বলতেন। এরপর একটু অগ্রসর হয়ে ঢালু জায়গায় দাঁড়িয়ে কিবলামুখী হয়ে লম্বা সময় দোয়া করতেন। তিনি দুই হাত তুলে দোয়া করতেন। এরপর মাঝারি জমরাতে কংকর মারতেন। কংকর মারার পর বামদিকের ঢালু জায়গায় কিবলামুখী হয়ে দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে দোয়া করতেন। দুই হাত তুলে দোয়া করতেন। দীর্ঘ সময় দাঁড়াতেন। এরপর তিনি উপত্যকার ভেতরে দাঁড়িয়ে জমরাতে আকাবাতে কংকর মারতেন। এই জমরাতের কাছে তিনি না দাঁড়িয়ে চলে যেতেন এবং বলতেন: আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এভাবেই করতে দেখেছি।[সহিহ বুখারী (১৭৫১)]
ইবনুল মুনযির (রহঃ) বলেন:
“তারা (আলেমগণ) এই মর্মে ইজমা করেছেন যে, যে ব্যক্তি তাশরিকের দিনগুলোতে সূর্য হেলে পড়ার পর জমরাতগুলোতে কংকর নিক্ষেপ করবে; এটি যথেষ্ট।”[ইবনুল মুনযিরের আল-ইজমা (১১)]
ইবনে হাযম (রহঃ) বলেন:
“তারা (আলেমগণ) এই মর্মে একমত যে, কোরবানী ঈদের দিনের পর তিনদিন জমরাতগুলোতে কংকর নিক্ষেপ করার দিন। যে ব্যক্তি এই দিনগুলোতে সূর্য হেলে পড়ার পর কংকর মারবে; সেটা যথেষ্ট।”[মারাতিবুল ইজমা (৪৬)]
ইবনে কুদামা (রহঃ) বলেন:
“যখন মীনায় পৌঁছবে তখন জমরাতে আকাবাতে কংকর মারা দিয়ে কাজ শুরু করবেন। এটি হচ্ছে জমরাতগুলোর মধ্যে সর্বশেষ; যা মীনার দিক থেকে শেষ ও মক্কার দিকের প্রথম জমরাত এবং এটি আকাবার কাছাকাছি। তাই এটিকে জমরাতে আকাবা বলা হয়। এই জমরাতে সাতটি কংকর নিক্ষেপ করবেন। প্রত্যেকবার নিক্ষেপের সময় তাকবীর বলবেন। উপত্যকার ভেতর থেকে কিবলামুখী হয়ে মারবেন। এরপর সে স্থান ত্যাগ করবেন। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকবেন না। যে যে আলেমদের অভিমত আমরা জানতে পেরেছি এই হলো তাদের অভিমতের মোটকথা।”[সমাপ্ত][আল-মুগনী (৩/২১৮)]
আবু হামেদ আল-গাজালী (রহঃ) বলেন:
“পক্ষান্তরে, কংকর নিক্ষেপের মাধ্যমে আপনি নির্দেশ মান্য করা, দাসত্ব প্রকাশ করা, আনুগত্য বাস্তবায়ন করার নিয়ত করুন। এ ব্যাপারে আকল ও মনকে কোন সুযোগ না দিয়ে। এই আমলের মাধ্যমে আপনি ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের সাথে সাদৃশ্য লাভের নিয়ত করুন; কারণ এই স্থানে ইবলিস (তার উপর আল্লাহ্র লানত হোক) তাঁর হজ্জের মধ্যে সংশয় ঢুকানোর চেষ্টা করেছিল কিংবা কোন গুনাহ করানোর চেষ্টা করেছিল। তখন আল্লাহ্ তাঁকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি যেন কংকর মেরে তাকে তাড়িয়ে দেন এবং তার উদ্দেশ্যকে ধুলিসাৎ করে দেন। যদি আপনার মনে উদয় হয় যে, শয়তান তাঁর সামনে এসেছে, তিনি শয়তানকে দেখেছেন ও তাকে কংকর মেরেছেন। কিন্তু শয়তান আমার সামনে আসেনি; তাহলে জেনে রাখুন এই চিন্তা শয়তানের পক্ষ থেকে। শয়তান আপনার মনে এই চিন্তা ঢুকিয়ে দিয়েছেন যাতে করে কংকর মারার ক্ষেত্রে আপনার দৃঢ়তাকে শিথিল করে দিতে পারে এবং আপনার মনে এ কল্পনা জাগ্রত করতে পারে যে, এটি এমন এক কাজ যার কোন অর্থ নেই, এটি এক ধরণের খেলতামশা; আপনি কেন এটি করবেন। সর্বাত্মকভাবে এই চিন্তাকে আপনার মন থেকে দূর করুন এবং শয়তানকে নাখোশ করে পূর্ণ উদ্যমতা নিয়ে কংকর নিক্ষেপ করুন। জেনে রাখুন, বাহ্যতঃ আপনি আকাবার (গিরিপথের) দিকে কংকরগুলো ছুড়ে মারছেন; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আপনি যেন শয়তানের মুখে সেটি মারছেন এবং তার মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিচ্ছেন। কারণ শয়তানকে আর কিছু এত উত্যক্ত করে না; আল্লাহ্র নির্দেশের আনুগত্য করা তাকে যেভাবে উত্যক্ত করে; আকল ও মনকে কোন সুযোগ না দিয়ে নিছক আল্লাহ্কে সম্মান দিয়ে তাঁর নির্দেশের যখন আনুগত্য করা হয়।”[সমাপ্ত][ইহইয়াউ উলুমিদ্দীন (১/২৭০)]
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।