রবিবার 21 জুমাদাল ছানী 1446 - 22 ডিসেম্বর 2024
বাংলা

কিডনি রোগীকে ডাক্তার রোযা না রাখার উপদেশ দিয়েছেন

প্রশ্ন

প্রশ্ন:
অতি সম্প্রতি আমি জানতে পেরেছি যে, আমার কিডনিতে পাথর হয়েছে। একজন মুসলিম, তাক্বওয়াবান ডাক্তার (আমার কাছে সেটাই মনে হয়েছে) আমাকে রমজানের রোযা না-রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। ব্যাপারটি স্পষ্ট করার জন্য বলছি, এই পরামর্শ দেয়ার কারণ হলো- সারাদিন পানি পান করতে থাকা যাতে নতুন কোন পাথর তৈরী হওয়া থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায়। এমতাবস্থায় রমজানের রোযা না-রাখা কি আমার উপর ওয়াজিব?

আলহামদু লিল্লাহ।.

আল্‌হামদুলিল্লাহ।

যদি বিশ্বস্ত মুসলিম ডাক্তার একথা জানান যে, রোযা পালন আপনার স্বাস্থ্যের ক্ষতি করবে এবং তিনি আপনাকে রোযা না-রাখার নির্দেশ দেন তাহলে আল্লাহ তা‘আলার প্রদত্ত অবকাশ (রোখসত) গ্রহণ করা ইসলামী বিধিসম্মত। আল্লাহ তাআলা বলেন :

(فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ) [2 البقرة : 184]

“আর কেউ অসুস্থ থাকলে কিংবা সফরে থাকলে, অন্য সময় এই সংখ্যা পূরণ করবে।” [সূরা বাক্বারা, ২:১৮৪] ইবনে কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: “অর্থাৎএকজন অসুস্থ বা মুসাফির ব্যক্তি অসুস্থতা বা সফররত অবস্থায় রোযা পালন করবে না।কারণ এতে তাদের কষ্ট হবে। সুতরাং তারা রোযা ভঙ্গ করবে এবং সেই সংখ্যা অন্য দিনগুলোতে রোযা রেখে পূরণ করে নিবে।”সমাপ্ত।তাফসীর ইবনে কাছীর (১/৪৯৮)

আল্লাহ যেখানে ছাড় দিয়েছেনসেখানে নিজেকে কষ্ট দেওয়া উচিত নয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেছেন :

(إِنَّاللَّهَيُحِبُّأَنْتُؤْتَىرُخَصُهُكَمَايَكْرَهُأَنْتُؤْتَىمَعْصِيَتُهُ) رواهأحمد(5832)صححهالألبانيفي "صحيحالجامع" (1886) .

“নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর দেওয়া অবকাশ (রোখসত) গ্রহণ করা পছন্দ করেন, যেমনিভাবে তাঁর অবাধ্য হয়ে পাপে লিপ্ত হওয়া অপছন্দ করেন।” [হাদিসটি আহমাদ বর্ণনা করেছেন (৫৮৩২)। আলবানী সহীহ আল-জামি(১৮৮৬) গ্রন্থে সহীহ বলে উল্লেখ করেছেন]

যদি কারো এমন রোগ হয়যা থেকে আরোগ্য লাভের আশা করা যায় নাসেক্ষেত্রে রোগী রোযা ভঙ্গ করবেন এবং প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাওয়াবেন। আর যদি এমন রোগ হয় যা থেকে সুস্থ হওয়ার আশা করা যায়তবে সুস্থতার পর সেই দিনগুলোর রোযা কাযা পূরণ করে নিবেন।

শাইখ ইবনে ‘উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন:“আলেমগণ সিয়ামের প্রেক্ষিতে রোগকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন :

(১)যেসব রোগ থেকে আরোগ্য লাভের আশা করা যায়। এ ধরনের রোগী রোযা ভঙ্গ করবেন এবং সুস্থতার পরে সে রোযাগুলোর কাযা পূরণ করবেন।

(২)যেসব রোগ থেকে সুস্থতা লাভের আশা করা যায় না। এ ধরনের রোগী প্রতিদিনের বদলে একজন মিসকীনকে খাওয়াবেন। এ খাওয়ানোটা রোযার স্থলাভিষিক্ত হবে।” সমাপ্ত। [‘ফাত্‌ওয়া‘নূরুন‘আলাদ্‌ দার্‌ব’– ইবনে ‘উছাইমীন (৪৮/২১৬)]

গবেষণা ও ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির আলেমগণকে এমন এক মহিলা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল রমজান মাস শুরু হওয়ার আগে যার অপারেশন হয়েছিল। তিনি অপারেশনের পূর্বেও কখনো রোযা পালন করেনি।তার অপারেশনটি ছিল একটি কিডনি একেবারে ফেলে দেওয়া এবং দ্বিতীয় কিডনি থেকে পাথর অপসারণ করা। ডাক্তাররা তাকে আজীবন সিয়াম পালন না করার পরামর্শ দিয়েছেন।

তাঁরা উত্তরে বলেন :

‘যদি কাউকে কোন মুসলিমবিশ্বস্ত ডাক্তার পরামর্শ দেয় যে, সিয়াম পালন করা তার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হবেতবে তিনি রোযা রাখবেন না। রমজানের প্রতিদিনের বদলে একজন মিসকীনকে অর্ধেক সা‘ (নবী (সাঃ) এর যামানায় পরিমাণের একক) গম, চাল, খেজুর বা এ পরিমাণ স্থানীয় কোন খাদ্যদ্রব্য কাফ্‌ফারা হিসেবে প্রদান করবেন। কিন্তু খাদ্যের পরিবর্তে অর্থকড়ি দিয়ে কাফ্‌ফারা দেওয়া জায়েয হবে না।’সমাপ্ত।[গবেষণা ও ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র (১০/১৮২-১৮৩)]

শাইখ ইবনে ‘উছাইমীনকে (রাহিমাহুল্লাহ) প্রশ্ন করা হয়েছিল:

গত বছর রমজান মুবারকের শুরুর দিকে আমার বাম কিডনিতে অপারেশন হয়েছিল।আমি সেই রমজানের রোযা পালন করতে পারিনি। কারণ আমি আধ ঘণ্টার জন্যেও পানি ছাড়া থাকতে পারতাম না। সেই রোযা আমি এখন পর্যন্ত কাযা করতে পারিনি। এখন আমার করণীয় কি?

তিনি উত্তরে বলেন :

“আপনার কোন কিছু করণীয় নেই। কারণ আপনি অপারগ। এ অপারগতা অব্যাহত থাকলেও আপনার কোন কিছু করণীয় নেই। আর ডাক্তারেরা তো বলেছেন: এই অল্প সময়ের মধ্যেও আপনাকে পানি পান করতেহবে।তাই আপনার উপর সিয়াম পালন ওয়াজিব নয়। কারণ এ অবস্থা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনাই বেশি। সুতরাং আপনাকে প্রতিদিনের রোযার বদলে একজন মিসকীনকে খাওয়াতে হবে।”সমাপ্ত। [ফাতাওয়া নূরুন‘আলাদ দার্‌ব -ইবনে উছাইমীন (৪০/২১৬) ]

এ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়- যদি ডাক্তার আপনাকে এ কথা জানান যে, আপনি ভবিষ্যতে রোযা পালন করতে পারবেন না তাহলে আপনার জন্য রোযা ভঙ্গ করা এবং প্রতিদিনের বদলে একজন মিসকীন খাওয়ানো শরিয়তসম্মত।আর যদি ভবিষ্যতে সিয়াম পালন করতে পারবেন মর্মে জানান, তাহলে আপনি এখন রোযা ভঙ্গ করবেন এবং আল্লাহ আপনাকে সুস্থ করা পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন।সুস্থ হওয়ার পর যেসব দিনের রোযা ভঙ্গ হয়েছে সেদিনগুলোর রোযা কাযা করবেন। এ বিষয়েআরো জানতে দেখুন : (12488)ও(23296)নং প্রশ্নের উত্তর।

আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব