আলহামদু লিল্লাহ।.
তাহাজ্জুদের নামায, বিতিরের নামায ও তারাবীর নামায এ সবগুলো নামাযকে একত্রে কিয়ামুল লাইল বা তারাবীর নামায বলা যায়। তবে তারাবীর নামায রমযান মাসের সাথে খাস।
আয়েশা (রাঃ) এর উক্তিটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রাত্রিকালীন নামায সম্পর্কে। তাই তিনি রাতের বেলায় যে যে নামায পড়তেন সবগুলো এ উক্তির অধীনে পড়বে।
সহিহ বুখারী (৩৫৬৯) ও সহিহ মুসলিমে (৭৩৮) আবু সালামা বিন আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি আয়েশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করেন: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রমযান মাসের নামায কেমন ছিল? আয়েশা (রাঃ) বলেন: তিনি রমযানে কিংবা রমযান ছাড়া অন্য সময়ে এগার রাকাতের বেশি নামায পড়তেন না। তিনি চার রাকাত নামায পড়তেন। এ চার রাকাতের সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করবেন না। এরপর তিনি আরও চার রাকাত নামায পড়তেন। এ চার রাকাতেরও সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করবেন না। এরপর তিনি তিন রাকাত নামায পড়তেন। একবার আমি বললাম: ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আপনি বিতির পড়ার আগে ঘুমিয়ে যাচ্ছেন? তিনি বললেন: আমার চোখ ঘুমায়। কিন্তু আমার অন্তর ঘুমায় না।
ইমাম নববী বলেন:
আয়েশা (রাঃ) থেকে সহিহ বুখারীতে এসেছে যে, তাঁর রাতের নামায ছিল ৭ রাকাত বা ৯ রাকাত। বুখারী ও মুসলিম এ হাদিসের পর ইবনে আব্বাস (রাঃ)- এর হাদিসে উল্লেখ করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রাতের বেলার নামায ছিল ১৩ রাকাত এবং সুবহে সাদিক হওয়ার পর ফজরের দুই রাকাত সুন্নত পড়তেন। যায়েদ বিন খালিদ এর হাদিসে রয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হালকাভাবে দুই রাকাত নামায পড়েছেন। এরপর দুই রাকাত দীর্ঘ নামায পড়েছেন। এরপর হাদিসের বাকী অংশ উল্লেখ করেন। হাদিসের শেষাংশে বলেন: এই হল: তের রাকাত। কাযী ইয়ায বলেন: এ হাদিসসমূহে ইবনে আব্বাস (রাঃ), যায়েদ (রাঃ) ও আয়েশা (রাঃ) বাস্তবে যা দেখেছেন সেটা জানিয়েছেন।
উল্লেখিত সাহাবীদের প্রত্যেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতের বেলায় সর্বমোট কত রাকাত নামায পড়তেন সেটা উল্লেখ করেছেন; এর মধ্যে তাহাজ্জুদের নামাযও রয়েছে অন্য নামাযও রয়েছে।
হাফেয ইবনে হাজার (রহঃ) উল্লেখ করেছেন যে, আয়েশা (রাঃ) এর উক্তি: "নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রাতের নামায ছিল সাত রাকাত বা নয় রাকাত।" এর দ্বারা আয়েশা (রাঃ) এর উদ্দেশ্য হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে যা ঘটেছে। আর আয়েশা (রাঃ) এর উক্তি: "তিনি রমযানে কিংবা রমযান ছাড়া অন্য সময়ে এগার রাকাতের বেশি নামায পড়তেন না।" এটাই ছিল রাতের বেলায় তাঁর আদায়কৃত নামাযের সর্বাধিক সংখ্যা। তিনি এর চেয়ে বাড়াতেন না।
আর আয়েশার উক্তি: "নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১৩ রাকাত নামায পড়েছেন": এ প্রসঙ্গে হাফেয ইবনে হাজার দুটো সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছেন। হতে পারে আয়েশা (রাঃ) রাতের নামাযের সাথে এশার দুই রাকাত সুন্নতকেও যোগ করেছেন; যেহেতু এ রাকাতদ্বয়ও রাতের বেলায় আদায় করা হয়। আরেকটি সম্ভাবনা হল: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতের নামাযের শুরুতে খুবই হালকাভাবে যে দুই রাকাত নামায পড়তেন তিনি সে দুই রাকাত নামাযকেও যোগ করেছেন। হাফেয ইবনে হাজার বলেন: আমার দৃষ্টিতে এটাই অগ্রগণ্য...।[ফাতহুল বারী]
এর মাধ্যমে ফুটে উঠল যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতের বেলায় সর্বমোট কত রাকাত নামায পড়তেন আয়েশা (রাঃ) সেটাই উদ্দেশ্য করেছেন। তার হাদিস থেকে আলেমগণ এটাই বুঝেছেন।
আরও জানতে পড়ুন: 9036 নং প্রশ্নোত্তর।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।