মঙ্গলবার 2 শাওয়াল 1446 - 1 এপ্রিল 2025
বাংলা

খাদ্যশস্য ও ফলমূলের যাকাত এবং এগুলোতে নেসাবের পরিমাণ

প্রশ্ন

শস্য ও ফলের যাকাত কতটুকু এবং এতে নেসাবের পরিমাণ কত?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

আলেমদের ইজমার ভিত্তিতে খাদ্যশস্য ও ফলফলাদিতে যাকাত ওয়াজিব।

ইবনে কুদামা রাহিমাহুল্লাহ আল-মুগনী (২/২৯৪) বইয়ে বলেন: “আলেমরা একমত যে গম, যব, খেজুর ও কিসমিসে যাকাত ওয়াজিব। ইবনুল মুনযির ও ইবনে আব্দুল বার এমনটি বলেছেন।”[সমাপ্ত]

শস্য ও ফলে যাকাতের আবশ্যকতার প্রমাণ হলো আল্লাহ তায়ালার বাণী:

وَآتُوا حَقَّهُ يَوْمَ حَصَادِهِ

“ফসল সংগ্রহের দিন তোমরা এর হক (ন্যায্য অংশ) প্রদান করবে।”[সূরা আন’আম: ১৪১]

যে শস্য ও ফল পরিমাপযোগ্য ও সংরক্ষণযোগ্য তাতে যাকাত ওয়াজিব হয়; সেটি খাদ্য হোক কিংবা না হোক। দলিল হলো সহিহ বুখারীতে (১৪৮৩) আছে, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “বৃষ্টি ও প্রবাহিত পানি দ্বারা সিক্ত ভূমিতে উৎপাদিত ফসল বা সেচ ছাড়া উর্বরতার ফলে উৎপন্ন ফসলের উপর (এক-দশমাংশ) উশর ওয়াজিব হয়। আর সেচ দ্বারা উৎপাদিত ফসলের উপর অর্ধ উশর (বিশ ভাগের এক ভাগ) ওয়াজিব হয়।”

হাদীসটি যমীন থেকে উৎপন্ন সকল কিছুকে অন্তর্ভুক্ত করে; সেটি খাদ্য হোক কিংবা না হোক।

ইমাম মুসলিম (৯৭৯) বর্ণনা করেন: আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “পাঁচ ওসক থেকে কম পরিমাণে কোনো যাকাত নেই।” সুতরাং ‘ওসক’ বিবেচনা করার বিষয়টির প্রমাণ পাওয়া গেল। এটি পরিমাপের অন্যতম একটি একক।

পক্ষান্তরে, সংরক্ষণযোগ্য হওয়ার শর্ত এ জন্য যে, সংরক্ষণ করা না গেলে নিয়ামত পূর্ণতা পায় না। যেটা সংরক্ষণ করা যায় সেটার উপকারিতা দীর্ঘ সময় জুড়ে থাকে।

বুহূতী রাহিমাহুল্লাহ ‘কাশশাফুল ক্বিনা’ গ্রন্থে (২/২০৫) বলেছেন: ‘পরিমাপযোগ্য ও সংরক্ষণযোগ্য প্রত্যেক ফলে যাকাত আবশ্যক হয়। যেমন: খেজুর, কিসমিস, কাঠবাদাম, পেস্তাবাদাম, হ্যাজেলনাট প্রভৃতি।’[সমাপ্ত]

শাইখ ইবনে উছাইমীন রাহিমাহুল্লাহ আশ-শারহুল মুমতি (৬/৭০) বইয়ে বলেন: “খাদ্যশস্য ও ফলমূলে যাকাত ফরয হয়; শর্ত হলো তা পরিমাপযোগ্য ও সংরক্ষণযোগ্য হতে হবে। যদি এমনটি না হয়, তাহলে এতে যাকাত নেই।”[সমাপ্ত]

দুই:

খাদ্যশস্য ও ফলমূল নেসাব পরিমাণ না হলে যাকাত আবশ্যক হবে না। নেসাব পরিমাণ হলো পাঁচ ওসক। এক ওসক হলো ষাট সা‘। আর এক সা‘ হলো চার মুদ্দ। এক মুদ্দ হলো মাঝারি গড়নের একজন মানুষের দুই হাতের সম্মিলিত অঞ্জলিতে ধারণকৃত পরিমাণ। পাঁচ ওসকের প্রমাণ হলো আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদীস, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “কোনো শস্যদানা ও খেজুর পাঁচ ওসক পরিমাণে না পৌঁছা অবধি এতে যাকাত সদকা নেই।”

শস্য ও ফল থেকে কী পরিমাণ যাকাত প্রদান করা ফরয সেটি সেচের পদ্ধতির ভিন্নতা অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন হবে।

যদি কোনো কষ্ট ও পরিশ্রম ছাড়া সেচ হয়ে যায়, যেমন: বৃষ্টি বা ঝরনার পানিতে, তাহলে এক-দশমাংশ যাকাত দিতে হবে।

আর যদি কষ্ট ও পরিশ্রম করে সেচ দিতে হয়, যেমন: পানি উত্তোলনের যন্ত্রের প্রয়োজন পড়ে, তাহলে বিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত দিতে হবে।

এর প্রমাণ হলো পূর্বোক্ত ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণিত হাদীস: “বৃষ্টি ও প্রবাহিত পানি দ্বারা সিক্ত ভূমিতে উৎপাদিত ফসল বা সেচ ছাড়া উর্বরতার ফলে উৎপন্ন ফসলের উপর (এক-দশমাংশ) উশর ওয়াজিব হয়। আর সেচ দ্বারা উৎপাদিত ফসলের উপর অর্ধ উশর (বিশ ভাগের এক ভাগ) ওয়াজিব হয়।”

হাফেয ইবনে হাজার বলেন: ‘হাদীসের عَثَرِيّا শব্দটির ব্যাখ্যায় খাত্তাবী বলেছেন: যা কোনো প্রকার সেচ ছাড়া শেকড় দিয়েই পানি সংগ্রহ করে।

আর النضح শব্দের দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যে উট দ্বারা পানি এনে সেচ দেয়া। উটকে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। নতুবা গরু বা অন্য প্রাণীর দ্বারা হলেও একই হুকুম।’[সমাপ্ত] এটি বর্তমান যুগের সেচযন্ত্রের সাথে তুলনীয়।

শাইখ ইবনে উছাইমীন রাহিমাহুল্লাহ আশ-শারহুল মুমতি বইয়ে (৬/৭৭) বলেন: “এতে নিহিত প্রজ্ঞা হলো: ‘খরচ দিয়ে সেচ দেয়া হলে এতে খরচের মাত্রা বেড়ে যায়। আর খরচ ছাড়া সেচ দেয়া হলে এতে খরচের হার কম হয়। শরীয়তপ্রণেতা সেচের খরচ ও অন্য খরচকে বিবেচনায় এনেছেন এবং যে জমি খরচ দিয়ে সেচ দেয়া হয় সেটার যাকাত হ্রাস করেছেন।”

শাইখ ইবনে বায (১৪/৭৪) বলেন: ‘বৃষ্টি, নদী ও ঝরনার পানি দ্বারা যে শস্যদানা ও ফলমূলে সেচ দেওয়া হয়; যেমন: খেজুর, কিসমিস, গম ও যব সেগুলোর থেকে এক-দশমাংশ যাকাত দিতে হবে। আর যা যন্ত্র ও অন্যান্য বস্তু দিয়ে সেচ দেওয়া হয়, সেগুলোর থেকে বিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত দিতে হবে।’[সমাপ্ত]

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব