আমরা আশা করছি, আপনাদের ওয়েবসাইট Islam Q&A (ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব) কে সাপোর্ট দেয়ার জন্য মুক্তহস্তে দান করবেন; যাতে করে ইনশা আল্লাহ্ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবায় আপনাদের ওয়েবসাইট তার পথ চলা অব্যাহত রাখতে পারে।
আমি সদকায়ে জারিয়ার কিছু সাধারণ উদাহরণ জানতে চাই। রমযানে ও অন্য সময়ে আমি আমার সম্পদ কোন খাতে ব্যয় করব: রোযাদারদের ইফতার করানোতে, নাকি ইয়াতীমের প্রতিপালনে, নাকি বৃদ্ধাশ্রমের পৃষ্ঠপোষকতায়?
আলহামদু লিল্লাহ।.
সদকায়ে জারিয়া হলো: ওয়াক্ফ। আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে সেটাই উদ্ধৃত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: যখন মানুষ মারা যায় তখন তার আমল স্থগিত হয়ে যায়; কেবল তিনটি আমল ছাড়া: সদাকায়ে জারিয়া, কিংবা এমন জ্ঞান যা থেকে মানুষ উপকৃত হয় কিংবা এমন সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে।[সহিহ মুসলিম (১৬৩১)]
ইমাম নববী এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন:
“সদকায়ে জারিয়া হলো— ওয়াক্ফ”।[সমাপ্ত][শারহু মুসলিম (১১/৮৫)]
আল-খাত্বীব আশ্-শারবিনী বলেন:
“সদাকায়ে জারিয়াকে আলেমগণ ওয়াক্ফ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন; যেমনটি বলেছেন রাফেয়ী। ওয়াক্ফ ছাড়া অন্যান্য দানগুলো জারী বা চলমান নয়”।[মুগনিল মুহতাজ (৩/৫২২-৫২৩)]
সদকায়ে জারিয়া হলো— ঐ দান ব্যক্তির মৃত্যুর পরেও যেই দানের সওয়াব অব্যাহত থাকে। পক্ষান্তরে যে সদকার সওয়াব অব্যাহত থাকে না; উদাহরণস্বরূপ গরীবদেরকে খাওয়ানো সেটি সদাকায়ে জারিয়া নয়।
পূর্বোক্ত আলোচনার আলোকে: রোযাদারদেরকে ইফতার করানো, ইয়াতীমের অভিভাবকত্ব গ্রহণ ও বৃদ্ধাশ্রমের পৃষ্ঠপোষকতা গ্রহণ (যদিও সদাকার অন্তর্ভুক্ত হোক না কেন) কিন্তু এগুলো সদাকায়ে জারিয়া নয়। আপনি ইয়াতীমদের জন্য কিংবা বৃদ্ধদের জন্য ঘর নির্মাণে অংশ গ্রহণ করতে পারেন তাহলে সেটা সদাকায়ে জারিয়া হবে। যতদিন এ ঘরের উপযোগিতা থাকবে ততদিন আপনি এর সওয়াব পেতে থাকবেন।
সদাকায়ে জারিয়ার প্রকার ও উদাহরণ অনেক। যেমন— মসজিদ নির্মাণ, গাছ লাগানো, কুপ খনন, মুসহাফ (কুরআনগ্রন্থ) ছাপানো ও বিতরণ, বই-ক্যাসেট ছাপানো ও বিতরণের মাধ্যমে ইল্মের প্রচার করা।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: নিশ্চয় মুমিনের মৃত্যুর পর যে আমল ও যে নেকী তার কাছে পৌঁছে সেটা হলো এমন ইল্ম যা সে শিখিয়ে গেছে কিংবা প্রচার করে গেছে, কোন নেক সন্তান রেখে গেছে, কোন মুসহাফ (কুরআনগ্রন্থ) রেখে গেছে কিংবা কোন মসজিদ বানিয়ে গেছে কিংবা মুসাফিরের জন্য কোন ঘর বানিয়ে গেছে কিংবা কোন নদী খনন করে গেছে কিংবা তার সুস্থতাকালে ও জীবদ্দশায় নিজের সম্পদ থেকে কোন সদকা করে গেছে তার মৃত্যুর পরেও যা তার কাছে পৌঁছে।[সুনানে ইবনে মাজাহ (২৪২); মুনযিরি ‘আত্-তারগীব ওয়াত তারহীব’ গ্রন্থে (১/৭৮) বলেন: এর সনদ হাসান। আলবানী হাদিসটিকে ‘সহিহু সুনানে ইবনে মাজাহ’ গ্রন্থে ‘হাসান’ বলেছেন।]
একজন মুসলিমের জন্য বাঞ্ছনীয় হলো বিভিন্ন খাতে সদকা করা; যাতে করে প্রত্যেক শ্রেণীর নেক আমলকারীদের সাথে তার একটি ভাগ থাকে। তাই আপনি আপনার সম্পদের একটি অংশ রোযাদারদের ইফতার করানোর জন্য বরাদ্দ করুন। অপর একটি অংশ ইয়াতীমদের প্রতিপালনের জন্য বরাদ্দ করুন। তৃতীয় একটি অংশ বৃদ্ধাশ্রমের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য বরাদ্দ করুন। চতুর্থ একটি অংশ দিয়ে মসজিদ নির্মাণে অংশ গ্রহণ করুন। পঞ্চম একটি অংশ দিয়ে বই ও মুসহাফ বিতরণের জন্য রাখুন...। এইভাবে করুন।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।