আমরা আশা করছি, আপনাদের ওয়েবসাইট Islam Q&A (ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব) কে সাপোর্ট দেয়ার জন্য মুক্তহস্তে দান করবেন; যাতে করে ইনশা আল্লাহ্ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবায় আপনাদের ওয়েবসাইট তার পথ চলা অব্যাহত রাখতে পারে।
আলহামদু লিল্লাহ।.
আলহামদুলিল্লাহ।মানুষ যে যে প্রকারের খাবারকে প্রধান খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে সেসব খাবার দিয়ে ফিতরা প্রদান করা যায়। যেমন- গম, ভুট্টা, চাল, সীমের বিচি, ডাল, ছোলা, ফূল (একজাতীয় ডাল), নূডুলস, গোশত ইত্যাদি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফিতরা হিসেবে এক স্বা’ খাবার প্রদান করা ফরয করেছেন। যেসব খাবার সাহাবীগণের প্রধান খাদ্য ছিল তাঁরা সেটা দিয়ে ফিতরা আদায় করতেন। সহিহ বুখারী (১৫১০) ও সহিহ মুসলিমে (৯৮৫)আবু সা‘ঈদ আল-খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে তিনি বলেন:“আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যামানায় ঈদের দিনএক স্বা খাদ্যদ্রব্য (ফিতরা) হিসেবে প্রদান করতাম। আবু সাঈদ (রাঃ) বলেন:তখন আমাদের খাদ্য ছিল— যব, কিসমিস, পনির ও খেজুর।” অপর এক বর্ণনায় তিনি বলেন: “যখন আমাদের মাঝে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন তখন আমরা ছোট-বড়, স্বাধীন-ক্রীতদাস সবার পক্ষ থেকে যাকাতুল ফিতর (ফিতরা) হিসেবে এক স্বা’ খাদ্য কিংবা এক স্বা’ পনির কিংবা এক স্বা’ যব কিংবা এক স্বা’ খেজুর কিংবা এক স্বা’ কিসমিস আদায় করতাম।”
অনেক আলেম হাদিসে উল্লেখিত ‘খাদ্যদ্রব্য’ এর ব্যাখ্যা করেছেন: গম। আবার কোন কোন আলেম বলেন: ‘খাদ্যদ্রব্য’ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে: কোন এলাকার মানুষ যে খাদ্য খেয়ে অভ্যস্ত; সেটা গম হোক, যব হোক কিংবা অন্য কিছু হোক। এটাই সঠিক অভিমত। কারণ ফিতরা হচ্ছে- ধনীদের পক্ষ থেকে গরীবদের প্রতি সহমর্মিতার প্রকাশ। স্থানীয় খাদ্য ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে সহমর্মিতা প্রকাশ করা মুসলমানের উপর ফরয নয়। বর্তমানে হারামাইনের দেশে ভাত হচ্ছে- প্রধান খাদ্য এবং এটি দামী ও ভাল খাদ্য। তাই যব এর চেয়ে চাউল দিয়ে ফিতরা দেয়া উত্তম; যদিও যব দিয়ে ফিতরা দেয়া জায়েয মর্মে দলিলে উল্লেখিত হয়েছে। এভাবে জানা গেল যে, চাউল দিয়ে ফিতরা আদায় করতে কোন অসুবিধা নেই।[সমাপ্ত]
[মাজমু ফাতাওয়াস শাইখ বিন বায (১৪/২০০)]
শাইখুল ইসলাম (রহঃ) ‘মাজমুউল ফাতাওয়া’ (২৫/৬৮) গ্রন্থে বলেন: “উল্লেখিত খাদ্যসমূহের কোনটি যদি কোন এলাকার মানুষের প্রধান খাদ্য হয়ে থাকে তাহলে সন্দেহাতীতভাবে সে খাদ্যদ্রব্য দিয়ে ফিতরা আদায় করা জায়েয। প্রশ্ন হচ্ছে- তারা অন্য যেসব খাদ্য গ্রহণ করে থাকে সেটা দিয়ে কি ফিতরা দেয়া যাবে? যেমন কারো প্রধান খাদ্য যদি হয় ভাত কিংবা ভূট্টা তারা গম কিংবা যব দিয়ে কি ফিতরা আদায় করতে পারবে? নাকি চাউল বা ভূট্টা দিতে হবে? এ বিষয়ে বিশাল মতভেদ রয়েছে। সবচেয়ে শুদ্ধ অভিমত হচ্ছে- হাদিসে উল্লেখিত শ্রেণীর মধ্যে না থাকলেও যেটা তাদের খাদ্য সেটা দিয়ে ফিতরা আদায় করতে পারবে। এটি অধিকাংশ আলেমের অভিমত, যেমন- ইমাম শাফেয়ি ও অন্যান্য আলেম। কারণ ফিতরা ফরয করা হয়েছে দরিদ্রদের প্রতি সহমর্মিতাস্বরূপ। আল্লাহ তাআলা বলেন: “মধ্যম মানের খাদ্য যা তোমরা তোমাদের স্ত্রী-পরিবারকে খাইয়ে থাক”[সূরা মায়িদা, আয়াত: ৮৯] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাকাতুল ফিতর (ফিতরা) হিসেবে এক স্বা’ খেজুর কিংবা এক স্বা’ যব ফরয করেছেন। কারণ তখন এগুলো ছিল মদিনাবাসীর খাদ্য। যদি এগুলো তাদের খাদ্য না হয়ে অন্য কিছু হত; তাহলে তাদেরকে তাদের খাদ্যদ্রব্য ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে ফিতরা আদায় করার দায়িত্ব দিতেন না; যেমনিভাবে আল্লাহ তাআলা কাফফারার ক্ষেত্রে নির্দেশ দেননি।[কিছুটা পরিমার্জিতভাবে সমাপ্ত]
ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) ‘ইলামুল মুওয়াক্কিয়ীন’ (৩/১২) গ্রন্থে বলেন: “মদিনাতে এগুলো ছিল তাদের প্রধান খাদ্য। পক্ষান্তরে, কোন দেশের কিংবা এলাকার প্রধান খাদ্য যদি অন্য কিছু হয় তাহলে তাদের উপর তাদের খাদ্য দিয়ে ফিতরা আদায় করা ফরয। যেমন- যাদের খাদ্য ভুট্টা কিংবা ভাত কিংবা ত্বীন কিংবা অন্য কোন শস্যদানা (তারা সেটা দিয়ে ফিতরা দিবে)। আর তাদের খাদ্য যদি শস্যদানা না হয়ে অন্য কিছু হয়; যেমন- দুধ, গোশত, কিংবা মাছ ইত্যাদি তাহলে তারা তাদের প্রকৃতিগত খাদ্য দিয়ে ফিতরা দিবে সেটা যেমনি হোক না কেন। এটা জমহুর আলেমের অভিমত। এটাই সঠিক মত; অন্য মত প্রকাশ করার সুযোগ নেই। কারণ ফিতরা দেয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে- ঈদের দিন মিসকীনের প্রয়োজন পূরণ করা এবং সবাই যেমন খাবার খায় সে জাতীয় খাবার দিয়ে তাদের সহমর্মী হওয়া। এর আলোকে বলা যায় আটা বা ময়দা দিয়ে ফিতরা দেয়া জায়েয হবে; যদিও কোন সহিহ হাদিসে এর কথা আসেনি।[সমাপ্ত]
শাইখ উছাইমীন (রহঃ) ‘আশ-শারহুল মুমতি’ (৬/১৮৩) গ্রন্থে বলেন: সঠিক মতানুযায়ী, যেটা খাদ্য হিসেবে প্রচলিত সেটা শস্যদানা হোক, ফল-ফলাদি হোক কিংবা গোশত হোক সেটা দিয়ে ফিতরা দেয়া জায়েয।”[সমাপ্ত]