আমরা আশা করছি, আপনাদের ওয়েবসাইট Islam Q&A (ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব) কে সাপোর্ট দেয়ার জন্য মুক্তহস্তে দান করবেন; যাতে করে ইনশা আল্লাহ্ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবায় আপনাদের ওয়েবসাইট তার পথ চলা অব্যাহত রাখতে পারে।
সুনম্য কলা ও চিত্রাঙ্কণ ইসলামে হারাম গণ্য কেন? কিতাব-সুন্নাহ থেকে এর সপক্ষে দলিল কি? আমার গবেষণায় আমি যতটুকুকে পৌঁছেছি তা হলো: এ মাসয়ালাটি অস্পষ্ট কিংবা বলুন যে, মতভেদপূর্ণ। যারা এগুলোকে হারাম বলেন তাদের দলিল হলো: এগুলোতে আল্লাহ্র সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্য দান রয়েছে এবং এতে শির্ক ও তাওহীদকে কলুষিতকরণ রয়েছে। কিন্তু আপনারা কি দেখছেন না— যদি চিত্রকর বা শিল্পী একত্ববাদী মুসলিম হয় তাহলে এটি তার উপর প্রযোজ্য হয় না এবং সে এর মাধ্যমে আল্লাহ্র সৃষ্টিকর্মের সাথে সাদৃশ্য দান বা শির্ক করাকে উদ্দেশ্য করে না। চিত্রকর বা শিল্পী যতটুকু করে তা হলো পূর্ব থেকে বিদ্যমান কোন ছবিকে আঁকা ও অবয়ব দেয়া। এতে কোন সৃষ্টি করা বা অস্তিত্ত্ব দেয়া নেই। কারণ সেটা তো আল্লাহ্ ছাড়া কারো সাধ্যে নেই। সুতরাং এতে সমস্যা কোথায়?
আলহামদু লিল্লাহ।.
এক:
সুনম্য কলা বা শৈল্পিক অঙ্কন সর্বৈব হারাম নয়। বরঞ্চ যে অঙ্কন বা আকৃতি নির্মাণ প্রাণীকে অন্তর্ভুক্ত করে সেটাই হরাম। সেটি করা শির্ক নয়। বরং হারাম ও কবিরা গুনাহ। যেহেতু এতে আল্লাহ্র কর্মের সাথে সাদৃশ্য দান রয়েছে এবং সেটি শির্কের বাহন। এ দুটো প্রাণীর চিত্রাঙ্গন করা হারাম হওয়ার সর্বাধিক স্পষ্ট গূঢ়রহস্য।
ইমাম নববী (রহঃ) বলেন: “আলেমগণ বলেন: তারা (ফেরেশতারা) যে ঘরে ছবি আছে সে ঘরে প্রবেশ না করার কারণ: এটি নিকৃষ্ট গুনাহ। এতে আল্লাহ্র সৃষ্টিকর্মের সাথে সাদৃশ্য দান রয়েছে।”[শারহু মুসলিম (১৪/৮৪) থেকে সমাপ্ত]
দুই:
চিত্রকর একত্ববাদী মুসলিম হওয়ার অর্থ এই নয় যে, তার কাজটি হালাল। বরং সে যদি সত্যিকার ইসলামকে বাস্তবায়নকারী হত তাহলে শরিয়তের বিধানের প্রতি আত্মসমর্পন করত এবং নিষিদ্ধ বিষয় থেকে বিরত থাকত। পবিত্র শরিয়ত শির্কের দিকে নিয়ে যায় এমন সব বাহনকে রোধ করার বিধান নিয়ে এসেছে। উপকরণসমূহ মূল আমলসমূহের হুকুম গ্রহণ করে; যেমনটি বলে থাকেন আলেমগণ। আমরা সকলে একমত যে, আল্লাহ্র সৃষ্টির অনুরূপ কিছুর অস্তিত্ব দেয়ার ক্ষমতা বান্দার নেই। হাদিসে বান্দাকে চিত্রায়ন ও আকৃতিদান থেকে নিষেধ করা হয়েছে; যা আল্লাহ্র কর্মভুক্ত। গুনাহগার বান্দার কর্ম বাহ্যতঃ আল্লাহ্র কর্মের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ; প্রকৃতপক্ষে নয়।
এই বিষয়টির ক্ষেত্রে অনেক মানুষ অবহেলা করে। অথচ এটাই হচ্ছে এই পৃথিবীতে শির্কের সূচনার কারণ। নূহ আলাইহিস সালামের কওম তাদের মধ্য থেকে কিছু নেককার লোকের প্রতিকৃতি তৈরী করেছিল (তারা হলেন: ওয়াদ্দ, সুওয়াআ’, ইয়াগূছ, ইয়াঊক ও নাসর) যাতে করে তারা দোয়াতে ও প্রশংসাতে তাদেরকে স্মরণ করতে পারে এবং এটি নেক আমলের প্রতি তাদের উদ্বুদ্ধ হওয়ার কারণ হয়। এভাবে যখন দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেল তখন তারা এদের ইবাদত করা ও আল্লাহ্র সাথে শির্ক করা শুরু করল। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “এবং বলেছে, ‘তোমরা কখনো পরিত্যাগ করো না তোমাদের উপাস্যদেরকে; পরিত্যাগ করো না ওয়াদ্দ, সুওয়া‘আ, ইয়াগূছ, ইয়া‘ঊক ও নাসরকে। বস্তুত তারা অনেককে বিভ্রান্ত করেছে; কাজেই আপনি যালিমদের বিভ্রান্তি ছাড়া আর কিছুই বৃদ্ধি করবেন না।”[সূরা নূহ, আয়াত: ২৩]
শাইখ আব্দুর রহমান সা’দী (রহঃ) বলেন: এগুলো কিছু নেককার লোকের নাম; যারা মারা গিয়েছেন। শয়তান তাদের কওমের কাছে তাদের ছবি আঁকাকে শুশোভিত করেছিল; যাতে করে তারা (তাদের দাবীমত) তাদেরকে দেখে ইবাদতে উদ্যমী হতে পারে। এরপর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যায় এবং অন্য লোকেরা আসে। তখন শয়তান তাদেরকে বলে: তোমাদের পূর্বপুরুষগণ তাদের ইবাদত করত, তাদের মাধ্যমে ওসিলা দিত, তাদের মাধ্যমে বৃষ্টি প্রার্থনা করত। এভাবে ওরা তাদের ইবাদত করা শুরু করল। এ কারণে তাদের নেতারা অনুসারীদেরকে ওসিয়ত করেছিল যাতে করে তারা এদের ইবাদত ত্যাগ না করে।[তাফসিরে সা’দী (পৃষ্ঠা-৮৮৯) থেকে সমাপ্ত]
তিন:
প্রাণীর ছবি আঁকা ও আকৃতি নির্মাণ হারাম হওয়ার দলিল অনেক; যেমন:
১। আব্দুল্লাহ্ বিন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “নিশ্চয় যারা এই ছবিগুলো বানায় কিয়ামতের দিন তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে এবং বলা হবে: তোমরা যা সৃষ্টি করেছ সেগুলোকে প্রাণ দাও।”[সহিহ বুখারী (৫৬০৭) ও সহিহ মুসলিম (২১০৮)]
২। আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “কিয়ামতের দিন সর্বাধিক শাস্তিপ্রাপ্ত মানুষ হবে যারা আল্লাহ্র সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্য তৈরী করে।”[সহিহ বুখারী (৫৬১০) ও সহিহ মুসলিম (২১০৭)]
ইমাম নববী (রহঃ) বলেন: “আমাদের মাযহাবের আলেমগণ ও অন্যান্য আলেমগণ বলেন: প্রাণীর ছবি চিত্রাঙ্কন কঠিন হারাম। এটি কবিরা গুনাহ। কেননা উল্লেখিত হাদিসগুলোতে এই কর্মের কারণে কঠিন শাস্তির হুমকি দেয়া হয়েছে; চাই সেটা তুচ্ছ-হীন জিনিস দিয়ে বানানো হোক কিংবা অন্য জিনিস দিয়ে বানানো হোক। সর্বাবস্থায় তা বানানো হারাম। কেননা এতে আল্লাহ্র সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্য করা রয়েছে। চাই সেটি কাপড়ে, চাটাইয়ে, দিরহামে, দিনারে, মুদ্রাতে, পাত্রে কিংবা দেয়ালে ইত্যাদিতে আঁকা হোক কিংবা অন্য কিছুতে আঁকা হোক। আর গাছের ছবি আঁকা, উটের জিনের ছবি আঁকা ইত্যাদি যাতে প্রাণীর ছবি নেই; সেটা হারাম নয়। এটাই চিত্রাঙ্কনের হুকুম।[শারহু মুসলিম (১৪/৮২) থেকে সমাপ্ত]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই বিধানগুলোর মাধ্যমে কেবল কাফের কুরাইশদেরকে সম্বোধন করেননি; বরং সাহাবীদেরকেও সম্বোধন করেছেন। এই সম্বোধন গোটা উম্মাহর প্রতি। এ ক্ষেত্রে মুসলিম হওয়া বা কাফের হওয়ার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।
সাঈদ বিন আবুল হাসান থেকে বর্ণিত বলেন: এক লোক ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর কাছে এসে বলল: আমি এমন লোক যে এই ছবিগুলো তৈরী করি; এ ব্যাপারে আমাকে ফতোয়া দিন। তখন তিনি বললেন: আমার কাছে আস। লোকটি কাছে আসল। তিনি এরপরও বললেন: কাছে আস। লোকটি কাছে আসলে তিনি তার মাথার উপর হাত রেখে বললেন: আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে যা শুনেছি তোমাকে কি সেটা বলব? আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি: “প্রত্যেক ছবি অঙ্কনকারী জাহান্নামী। প্রত্যেক ছবির বিপরীতে তার জন্য একটি জান তৈরী করা হবে এবং সেটাকে জাহান্নামে শাস্তি দেয়া হবে। তিনি বললেন অর্থাৎ ইবনে আব্বাস (রাঃ): যদি তুমি করতেই চাও; তাহলে গাছ আঁক কিংবা যা কিছুর প্রাণ নাই তা আঁক।[সহিহ বুখারী (২১১২) ও সহিহ মুসলিম (২১১০)]
সারাংশ:
প্রাণীর ছবি হাত দিয়ে আঁকা কিংবা কাঠে বা অন্য কিছুতে অঙ্কন কিংবা মাটি দিয়ে বা অন্য কিছু দিয়ে আকৃতি নির্মাণ— এগুলো হারাম হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই এবং এগুলো হাদিসের ভাষ্যে উল্লেখিত শাস্তির হুমকির আওতাধীন। আর এটি হারাম হওয়ার গূঢ়রহস্য ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।