আমরা আশা করছি, আপনাদের ওয়েবসাইট Islam Q&A (ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব) কে সাপোর্ট দেয়ার জন্য মুক্তহস্তে দান করবেন; যাতে করে ইনশা আল্লাহ্ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবায় আপনাদের ওয়েবসাইট তার পথ চলা অব্যাহত রাখতে পারে।
আমি জানি যে, আল্লাহ্ আমাদের রিযিক লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। কিন্তু রিযিকের মধ্যে কি কি অন্তর্ভুক্ত? যে সম্পদ আমরা নিজে কামাই করি ও নিজ হাতে উপার্জন করি শুধু সেগুলো? নাকি আমাদের আত্মীয়-স্বজন ও অন্যদের পক্ষ থেকে আমরা যে উপহারগুলো পাই সেগুলোও কি এর মধ্যে পড়বে? শেষোক্ত প্রকারটিও কি রিযিকের অন্তর্ভুক্ত?
আলহামদু লিল্লাহ।.
আল্লাহ্ তাআলার নামসমূহের মধ্যে রয়েছে الرَّزَّاق (আর-রাজ্জাক— রিযিকদাতা)। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “আর আমি জ্বিন-ইনসানকে সৃষ্টি করেছি কেবল আমারই ইবাদত করার জন্য। আমি তাদের কাছে কোন রিযিক চাই না এবং এটাও চাই না যে, তারা আমাকে খাওয়াবে। নিশ্চয় আল্লাহ; তিনি প্রকৃষ্টভাবে রিযিকদাতা, প্রবল শক্তিধর, পরাক্রমশালী।”[সূরা যারিয়াত, আয়াত: ৫৬-৫৮]
আরবী الرَّزَّاق শব্দটি ইসমুল ফায়েল رَازِق থেকে اسم المبالغة (বাহুল্য প্রকাশক শব্দ) হিসেবে গঠিত। যার অর্থ হচ্ছে- অধিক দাতা।
আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের জন্য যা কিছু তাকদীর (নির্ধারণ) করে রেখেছেন, যা কিছু তিনি তাঁর ভাণ্ডার থেকে তাদের জন্য নাযিল করেছেন; যেমন- সম্পদ, সন্তান, স্ত্রী, জ্ঞান, কর্ম, চরিত্র ও স্বাস্থ্য... সবই আল্লাহ্র পক্ষ থেকে বান্দার জন্য রিযিক। চাই সেগুলো তাদের নিজেদের কামাই হোক; কিংবা তারা ওয়ারিশসূত্রে পেয়ে থাকুক কিংবা উপহারের মাধ্যমে তাদের কাছে পৌঁছুক। চাই সেগুলো হালাল হোক কিংবা হারাম হোক। সবই আল্লাহ্র পক্ষ থেকে বান্দার জন্য রিযিক।
আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “আর আসমানে রয়েছে তোমাদের রিযিক ও প্রতিশ্রুত সব কিছু।”[সূরা যারিয়াত, আয়াত: ২২] তিনি আরও বলেন: “আর তোমাদের কাছে যে সব নেয়ামত রয়েছে তা তো আল্লাহ্রই কাছ থেকে;”[সূরা নাহল, আয়াত: ৫৩]
কোন বান্দার কাছে অন্যের কাছ থেকে যা কিছু পৌঁছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেটাকে রিযিক হিসেবে অভিহিত করেছেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “যে ব্যক্তিকে আল্লাহ্ এই সম্পদ থেকে কোন কিছু (কারো কাছে) চাওয়া ব্যতীত প্রদান করেছেন সে সেটা গ্রহণ করুক। কারণ সেটি আল্লাহ্র রিযিক; আল্লাহ্ আয্যা ওয়া জাল্লা সেটি তার দিকে টেনে এনেছেন।”[মুসনাদে আহমাদ (৭৯০৮), আলবানী ‘সহিহুল জামে’ গ্রন্থে (৫৯২১) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
কা’কা’ বিন হাকিম থেকে বর্ণিত আছে যে, আব্দুল্লাহ্ বিন উমরের (রাঃ) কাছে আব্দুল আযিয বিন মারওয়ান এই মর্মে চিঠি লিখেন যে, আমার কাছে আপনার প্রয়োজন পেশ করুন। বর্ণনাকারী বলেন, তখন আব্দুল্লাহ্ বিন উমর (রাঃ) জবাবে লিখেন: আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন: “আপনি যাদের খরপোষ চালান তাদের দিয়ে শুরু করুন। উপরের হাত নীচের হাতের চেয়ে উত্তম।” আমি ধারণা করি উপরের হাত হচ্ছে— দানকারী হাত; আর নীচের হাত হচ্ছে— অনুদানপ্রার্থী হাত। আমি আপনার কাছে কোন কিছুর প্রার্থনাকারী নই এবং আল্লাহ্ আপনার পক্ষ থেকে কোন কিছু আমার কাছে টেনে আনলে সেটাকে প্রত্যাখানকারীও নই।”[মুসনাদে আহমাদ (৬৪০২), মুসনাদের মুহাক্কিকগণ হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
বাইহাক্বী বলেন: “আবু সুলাইমান বলেন; (যা তাঁর পক্ষ থেকে আমার কাছে বর্ণনা করা হয়েছে): الرَّزَّاق (আল-রাজ্জাক) হলেন: রিযিকের দায়িত্বগ্রহণকারী এবং প্রত্যেক প্রাণীর খাদ্যের দায়িত্বগ্রহণকারী; যে খাদ্য তার মেরুদণ্ডকে সোজা রাখে।
তিনি আরও বলেন: প্রত্যেক যা কিছু তাঁর পক্ষ থেকে তার কাছে পৌঁছে; সেটা বৈধ হোক কিংবা অবৈধ হোক— সেটি আল্লাহ্র দেয়া রিযিক। অর্থাৎ আল্লাহ্ সেটাকে তার জন্য খাদ্য ও জীবিকা বানিয়েছেন।”[আল-আসমা ওয়াল হুসান (১/১৭২) থেকে সমাপ্ত]
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন:
“রিযিক শব্দটি দ্বারা বুঝানো হয় যা আল্লাহ্ বান্দার জন্য বৈধ করেছেন ও তাকে যেটার মালিক বানিয়েছেন। এছাড়া যা কিছুকে বান্দা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে রিযিক দ্বারা সেটাকেও বুঝানো হয়।
প্রথমটির উদাহরণ হচ্ছে আল্লাহ্র বাণী: وَأَنْفِقُوا مِنْ مَا رَزَقْنَاكُمْ (এবং আমরা তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় কর) এবং তাঁর বাণী: وَمِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ يُنفِقُونَ (এবং আমরা তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে)[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ৩] এই প্রকারের রিযিক হলো হালাল। যেহেতু মদ ও হারাম জিনিস কারো মালিকানায় প্রবেশ করে না।
আর দ্বিতীয়টির উদাহরণ হচ্ছে আল্লাহ্র বাণী: وَمَا مِنْ دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ إلَّا عَلَى اللَّهِ رِزْقُهَا (আর যমীনে বিচরণকারী সবার রিযিকের দায়িত্ব আল্লাহ্রই।)[সূরা হুদ, আয়াত: ৬] আল্লাহ্ তাআলা পশুকেও রিযিক দেন। কিন্তু এ কথা বলা যায় না যে, ‘পশু সেই রিযিকের মালিক’ কিংবা ‘আল্লাহ্ পশুর জন্য আইনগতভাবে সেটাকে বৈধ করেছেন’। কেননা পশুদের উপর কোন শরয়ি দায়িত্ব আরোপ করা হয়নি; যেমনিভাবে শিশু ও পাগলদের উপর কোন দায়িত্ব আরোপ করা হয়নি। তাই সেই রিযিক পশুদের মালিকানাধীন নয় কিংবা তাদের জন্য হারামও নয়।
হারাম হলো: বান্দা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে এমন কিছু জিনিস। এগুলো ঐ রিযিকের অন্তর্ভুক্ত যেটার ব্যাপারে আল্লাহ্ পূর্ব থেকেই জানেন যে, বান্দা এটাকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করবে এবং তিনিই এটা তাকদীর (নির্ধারণ) করে রেখেছেন। এই রিযিক যা তার জন্য হালাল করেছেন ও তাকে যেটার মালিক বানিয়েছেন সেটার বিপরীত।
সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিমে ইবনে মাসউদ (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “তোমাদের সৃষ্টির উপাদানকে নিজ মায়ের পেটে একত্রিত করা হয়— চল্লিশ দিন পর্যন্ত বীর্যরূপে, অতঃপর তা জমাট বাঁধা রক্তে পরিণত হয় অনুরূপ সময়ে। এরপর তা গোশতপিন্ডে পরিণত হয় অনুরূপ সময়ে। এরপর আল্লাহ একজন ফেরেশতাকে প্রেরণ করেন। ফেরেশতাকে চারটি বিষয়ে আদেশ দেয়া হয়। তাঁকে লিপিবদ্ধ করতে বলা হয়: তার আমল, তার রিযিক, তার আয়ু এবং সে কি পাপী হবে; নাকি নেককার হবে। অতঃপর তার মধ্যে রূহ ফুঁকে দেয়া হয়। সেই সত্তার শপথ যার হাতে রয়েছে আমার প্রাণ! তোমাদের মধ্যে কেউ জান্নাতের অধিবাসীর আমল করতে করতে এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, তার ও জান্নাতের মাঝে মাত্র এক হাত ব্যবধান থাকে। এরপর তাকদীরের লিখন তার উপর জয়ী হয়ে যায়। তখন সে জাহান্নামবাসীর মত আমল করতে থাকে; অবশেষে সে জাহান্নামে প্রবেশ করে। আর তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি জাহান্নামবাসীর কর্ম করতে থাকে। এক পর্যায়ে তার ও জাহান্নামের মাঝে মাত্র একহাত ব্যবধান থাকে। তখন ভাগ্যলিপি তার উপর জয়ী হয়ে যায়। ফলে সে জান্নাতীদের ন্যায় আমল করতে থাকে। অবশেষে সে জান্নাতে প্রবেশ করে।”
হারাম রিযিকও আল্লাহ্ কর্তৃক তাকদীরকৃত, যা ফেরেশতারা লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন এবং যা আল্লাহ্র ইচ্ছা ও সৃষ্টিকর্মের অন্তর্ভুক্ত। তদুপরি তিনি সেটাকে হারাম করেছেন এবং সেটা থেকে নিষেধ করেছেন। তাই হারাম রিযিক উপার্জনকারীর জন্য আল্লাহ্র গজব, নিন্দাবাদ ও শাস্তি; যতটুকু সে প্রাপ্য। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
[মাজমুউল ফাতাওয়া (৮/৫৪৫) থেকে সমাপ্ত]
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।