আমরা আশা করছি, আপনাদের ওয়েবসাইট Islam Q&A (ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব) কে সাপোর্ট দেয়ার জন্য মুক্তহস্তে দান করবেন; যাতে করে ইনশা আল্লাহ্ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবায় আপনাদের ওয়েবসাইট তার পথ চলা অব্যাহত রাখতে পারে।
একই আমলে একাধিক নিয়ত থাকার কারণে কি একাধিক নেকী হয়? যেমন কোনো ব্যক্তি যদি ফজরের দুই রাকাত সুন্নত পড়ার সময় সুন্নতের নেকী, অযুর সুন্নতের নেকী এবং মসজিদে প্রবেশের দুই রাকাত সুন্নতের নেকীর নিয়ত করে?
আলহামদু লিল্লাহ।.
হ্যাঁ; একই আমলে একাধিক নিয়ত থাকার কারণে একাধিক নেকী হয়। কোনো মুসলিম যদি অযু অবস্থায় মসজিদে ঢুকে দুই রাকাত নামায পড়ে কিন্তু একই সাথে ফজরের সুন্নত, অযুর সুন্নত এবং মসজিদে প্রবেশের সুন্নতের নিয়ত করে, তাহলে সে যা যা নিয়ত করল সেগুলোর নেকী পাবে। আল্লাহ মহান অনুগ্রহের মালিক।
নববী রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “যদি কেউ নামায শুরু করার সময় একই সাথে ফরয এবং মসজিদে প্রবেশের দুই রাকাত সুন্নতের নিয়ত করে তাহলে তার নামায সঠিক হবে এবং ফরয নামাযের নেকী ও মসজিদে প্রবেশের নামাযের নেকী উভয়টা সে পাবে।”[আল-মাজমু (১/৩২৫) থেকে সমাপ্ত]
গাযালী ‘ইহয়াউ উলূমিদ্দীন’ (৪/৩৭০-৩৭১)-এ বলেন: “ইবাদতগুলো নিয়তের সাথে সম্পৃক্ত— মৌলিক শুদ্ধতা ও মর্যাদা বহুগুণ হওয়ার দিক থেকে।
মৌলিক শুদ্ধতা হল এ ইবাদতের মাধ্যমে শুধু আল্লাহর ইবাদতের নিয়ত করা; ভিন্ন কিছু নয়। যদি রিয়া তথা লৌকিকতার নিয়ত করে তাহলে সেটা পাপ হয়ে যাবে।
আর মর্যাদা বহুগুণ হওয়ার দিক হলো: ভালো নিয়তের সংখ্যাধিক্যের কারণে। একটা ইবাদতে অনেক ভালো নিয়ত করা যেতে পারে। তখন প্রতিটি নিয়তের জন্য নেকী হবে। কেননা সেগুলোর প্রত্যেকটা নেক কাজ। এরপর সেই নেককাজগুলোকে অনুরূপ দশগুণ বৃদ্ধি করা হবে যেমনটা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।
এর উদাহরণ হলো: মসজিদে বসে থাকা। এটা একটা ইবাদত। এটাতে বহু নিয়ত করা যেতে পারে; যাতে করে এটা মুত্তাকীদের নেক আমলে রূপ নেয় এবং এর মাধ্যমে ব্যক্তি আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্তদের স্তরে পৌঁছতে পারে।
এক: এই বিশ্বাস করা যে এটা আল্লাহর ঘর। এখানে যিনি প্রবেশ করেন তিনি আল্লাহর যিয়ারতকারী। সুতরাং তিনি মসজিদে প্রবেশের দ্বারা উদ্দেশ্য করবেন মাওলার যিয়ারত করা। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটার ওয়াদা দিয়ে বলেছেন: “যে ব্যক্তি মসজিদে বসে থাকল সে আল্লাহর যিয়ারতে থাকল। আর যার যিয়ারতে আসা হয়েছে তার উপর দায়িত্ব হল আগন্তুককে সম্মান করা।”
দুই: এক নামাযের পর অন্য নামাযের জন্য অপেক্ষা করা।
তিন: চোখ, কান এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নড়াচড়া করা থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে বৈরাগী হওয়া। কেননা ইতিকাফ করার অর্থ বিরত থাকা। আর এটা রোযার মতই। এটাও এক প্রকার বৈরাগ্য।
চার: আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকা, আখিরাতের চিন্তায় নির্জনতা অবলম্বন করা এবং আল্লাহ থেকে বিমুখ করে এমন সকল ব্যস্ততাকে প্রতিহত করা।
পাঁচ: আল্লাহর যিকির করার জন্য বা তাঁর যিকির শোনার জন্য কিংবা যিকির থেকে উপদেশ গ্রহণ করার জন্য নিঃসঙ্গ থাকা।
ছয়: সৎকাজের আদেশ ও মন্দকাজে নিষেধ করার মাধ্যমে জ্ঞান দানের উদ্দেশ্য করা। কারণ মসজিদে এমন কেউ না কেউ থাকে যার নামাজ ঠিকভাবে হয় না অথবা হালাল নয় এমন কিছুতে সে লিপ্ত হয়।
সাত: কোন দ্বীনি ভাই (আল্লাহর জন্য কোনো ভাই)- পাওয়া।
আট: আল্লাহকে লজ্জা করে গুনাহ বর্জন করা এবং আল্লাহর ঘরে তার মর্যাদা লঙ্ঘিত হয় এ লজ্জা করে পাপ ত্যাগ করা।
...
এটা নিয়ত বৃদ্ধি করার এটি একটি নমুনা। এর উপরে অন্য সকল ইবাদত ও বৈধ কাজগুলোকে কিয়াস করুন। কেননা প্রতিটি ইবাদতই বিপুল পরিমাণ নিয়তের সম্ভাবনা রাখে। কল্যাণ অন্বেষণে মুমিন বান্দার প্রচেষ্টা, প্রস্তুতি ও চিন্তার মাত্রা অনুযায়ী তার হৃদয়ে সেগুলো উপস্থিত হয়। আর এভাবেই আমলগুলো বাড়ে এবং নেকী বৃদ্ধি পায়।”[সমাপ্ত]
শাইখ ইবনে বায রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “ব্যক্তি যদি অযু করার পর দুই রাকাত নামায আদায় করে তখন সে অযুর সুন্নতের নিয়ত করতে পারে। আবার অযু করার পর মসজিদে ঢুকে মসজিদে প্রবেশের সুন্নত নামায ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ ও অযুর সুন্নতের নিয়ত করলে সে উভয় নেকী পাবে: অযুর সুন্নতের নেকী এবং তাহিয়্যাতুল মাসজিদের নেকী। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। তাঁর অনুগ্রহ বিশাল। আর যদি এই নামাযকে যোহরের আগের সুন্নতের নিয়তে আদায় করে; অর্থাৎ অযু করে মসজিদে ঢুকে যোহরের সুন্নত, অযুর সুন্নত এবং মসজিদে প্রবেশের সুন্নতের নিয়ত করে তাহলে সবগুলোর নেকী সে পাবে। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর।”[ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব: (১১/৫৭) থেকে সমাপ্ত]
আল্লাহ তায়ালা সর্বজ্ঞ।