আমরা আশা করছি, আপনাদের ওয়েবসাইট Islam Q&A (ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব) কে সাপোর্ট দেয়ার জন্য মুক্তহস্তে দান করবেন; যাতে করে ইনশা আল্লাহ্ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবায় আপনাদের ওয়েবসাইট তার পথ চলা অব্যাহত রাখতে পারে।
কোন মুসলিমের জন্য এ কথা বলা কি জায়েয যে, আল্লাহ্ আরশে উপবিষ্ট? আমাদের কি এভাবে বলা জায়েয হবে যে, যখন আল্লাহ্ আরশের উপর বসেন তখন তিনি এটা এটা করেন? উল্লেখ্য, যিনি এ কথা বলেছেন তিনি আল্লাহ্র সাথে ঠাট্টা করে বলেননি। কিন্তু তিনি ‘আরশের উপরে বসা’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। সুতরাং তিনি কি আল্লাহ্র কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং এ ধরণের কাজ পুনরায় না করার সিদ্ধান্ত নেয়া যথেষ্ট? এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করাই আমার প্রশ্ন। কেননা আমি আল্লাহ্র সম্পর্কে অসঙ্গত কথা বলার ভয়াবহতা জানি এবং জানি যে, কিছু কিছু অবস্থায় ব্যক্তি মুসলিম মিল্লাত থেকে বের হয়ে যেতে পারে। আমি যেটার কথা উল্লেখ করেছি সেটা কি এমন অবস্থার মধ্যে পড়বে?
আলহামদু লিল্লাহ।.
আল্লাহ্র ক্ষেত্রে সাব্যস্ত হচ্ছে তিনি আরশের উপর ইস্তিওয়া করেছেন; যেভাবে তাঁর মর্যাদা ও পরিপূর্ণতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ সেইভাবে। পবিত্রময় তিনি।
আল্লাহ্র কিতাবের সাত জায়গায় ইস্তিওয়া গুণটি উদ্ধৃত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আল্লাহ্র বাণী:
إنَّ رَبَّكُمُ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ الأعراف/54
(নিশ্চয়ই তোমাদের প্রভু আল্লাহ্, যিনি ছয়দিনে আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন; অতঃপর আরশে ইস্তিওয়া করেছেন)[সূরা আরাফ, ৭: ৫৪]
ইস্তিওয়া এর মশহুর তাফসির হলো: ঊর্ধ্বে উঠা ও উপরে উঠা।
ইমাম বুখারী তাঁর সহিহ কিতাবে বলেন: ‘তাঁর আরশ ছিল পানির উপরে এবং তিনি মহান আরশের প্রভু’ শীর্ষক অধ্যায়।
আবুল আলিয়া বলেন: استوى إلى السماء অর্থাৎ ارتفع... (তিনি আসমানের উপরে উঠেছেন।)
মুজাহিদ বলেন: استوى মানে علا على العرش (তিনি আরশের ঊর্ধ্বে উন্নীত হয়েছেন)।
ইমাম বাগাভী বলেন: ثم استوى إلى السماء: ইবনে আব্বাস (রাঃ) সহ অধিকাংশ পূর্বসূরী (সালাফ) তাফসিরকার বলেছেন: ارتفع إلى السماء (আসমানের ঊর্ধ্বে উঠেছেন)।[তাফসিরে বাগাভী (১/৭৮) থেকে সমাপ্ত] হাফেয ইবনে হাজার ফাতহুল বারী (১৩/৪১৭)-তে এটি উদ্ধৃত করেছেন এবং বলেছেন: আবু উবাইদা, আল-ফাররা ও অন্যান্যরাও অনুরূপ কথা বলেছেন।
পক্ষান্তরে, الجلوس (বসা) এ তাফসিরটি কিছু হাদিসে উদ্ধৃত হয়েছে; যে হাদিসগুলো সহিহ নয়।
কিন্তু কিছু কিছু সালাফ (পূর্বসূরী) এটাকে ইস্তিওয়া-এর তাফসির হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন; যেমনটি এসেছে ইমাম খারিজা বিন মুসআ’ব আদ-দুবায়ি’ থেকে যা আব্দুল্লাহ্ বিন আহমাদ ‘আস-সুন্নাহ্’ গ্রন্থে (১/১০৫) সংকলন করেছেন।
হাফেয দ্বারাক্বুতনী তাঁর প্রসিদ্ধ কিছু পংক্তিতে: القعود (উপবিষ্ট) কে সাব্যস্ত করেছেন।
যদি এ শব্দটি সাব্যস্ত হওয়া ধরে নেয়া হয় তদুপরি এক্ষেত্রে সাদৃশ্যকে অস্বীকার করার বিশ্বাস রাখা ওয়াজিব।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন:
“যখন জানা গেল যে, ফেরেশতারা ও বনী আদমের রূহসমূহ নড়াচড়া করা, ঊর্ধ্বে উঠা ও অবতরণ করা ইত্যাদি গুণে গুণান্বিত; কিন্তু সেটা বনী আদমের দেহের নড়াচড়া ও অন্যান্য গুণাবলী যেগুলো আমরা দুনিয়াতে চর্মচক্ষে দেখি সেগুলোর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নয় এবং এগুলোর ক্ষেত্রে এমন কিছু ঘটা সম্ভব যা বনী আদমের দেহসমূহের মধ্যে ঘটা সম্ভবপর নয়= সুতরাং প্রভু এ ধরণের গুণে গুণান্বিত হওয়ার সম্ভাব্যতা ও দেহসমূহের অবতরণের সাদৃশ্য থেকে দূরবর্তী হওয়া আরও অধিক যুক্তিযুক্ত।
বরং তাঁর অবতরণ ফেরেশতাদের ও বনী আদমের অবতরণের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নয়; যদিও সেটা তাদের দেহের অবতরণের অধিক নিকটবর্তী।
যেহেতু মৃতব্যক্তির কবরে বসাটা তার দেহ বসার মত নয় সেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে আল্লাহ্র ‘উপবিষ্ট হওয়া ও বসা’-র ব্যাপারে যে হাদিসগুলো এসেছে; যেমন জাফর বিন আবু তালেব (রাঃ) এর হাদিস, উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এর হাদিস= সেটা মাখলুকের দেহের বৈশিষ্ট্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ না হওয়া অধিক যুক্তিযুক্ত।”[মাজমুউল ফাতাওয়া (৫/৫২৭)]
এই শব্দের ব্যাপারে অধিক নিকটবর্তী অভিমত হলো: এটি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা। যেহেতু এ শব্দটি কুরআনে আসেনি, সহিহ হাদিসে আসেনি এবং সাহাবীদের উক্তিতেও আসেনি।
শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন: “পক্ষান্তরে আল্লাহ্ তাঁর আরশের উপরে স্থিতিশীল হওয়ার তাফসির সালাফ (পূর্বসূরি) দের থেকে মশহুর। ইবনুল কাইয়্যেম তাঁর ‘নুনিয়্যা’ ও অন্যান্য গ্রন্থে তা উল্লেখ করেছেন।
আর ‘বসা’ ও ‘উপবিষ্ট’ মর্মে তাফসির সালাফদের কেউ কেউ উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এ ব্যাপারে আমার অন্তরে কিছু খটকা আছে। আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।”[মাজমুউ ফাতাওয়া ইবনে উছাইমীন (১/১৯৬) থেকে সমাপ্ত]
শাইখ বার্রাক (হাফিঃ) বলেন: “কিছু কিছু আছারে আল্লাহ্র দিকে ‘বসা’ গুণকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে এবং তিনি তাঁর কুরসিতে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে বসেন। হতে পারে কোন কোন ইমামও এ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। এবং শাইখ (অর্থাৎ শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া)-র কথার প্রাসঙ্গিকতা ‘ইস্তিওয়া’ উপবিষ্ট হওয়াকে অন্তর্ভুক্ত করার ই্ঙ্গিত দেয়। কিন্তু উত্তম হচ্ছে এ শব্দটি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা; যদি না এটি সাব্যস্ত হয়।”[শারহু রিসালাতু তাদমুরিয়্যা (পৃষ্ঠা-১৮৮) থেকে সমাপ্ত]
পূর্বোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা ‘বসা’ শব্দ ব্যবহার করার অভিমত পোষণ করি না। বরং এভাবে বলা যাবে: তিনি আরশের উপর ‘ইস্তিওয়া’ করেছেন। ইস্তিওয়াকে ঊর্ধ্বে উঠা ও উপরে উঠা দিয়ে তাফসির করা হবে।
আর কেউ যদি কোন কোন সালাফ থেকে যা বর্ণিত হয়েছে সেটাকে আঁকড়ে ধরেন তাহলে এর প্রতিবাদ করা ঠিক নয়।
কিন্তু তাকে এ কথা বলা যায় যে, সাধারণ মানুষের সামনে এ কথা বলা উচিত নয়। হতে পারে এটি তাদের জন্য ফিতনার কারণ হবে। হতে পারে তারা এটাকে সাদৃশ্যতা মনে করবে।
এই আলোচনার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, এইভাবে বলা কুফরী নয়। বরং এটি ইস্তিওয়া শব্দের মতভেদপূর্ণ তাফসির।
এবং আমরা উল্লেখ করেছি যে অগ্রগণ্য অভিমত হচ্ছে: এ শব্দটি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।