আমরা আশা করছি, আপনাদের ওয়েবসাইট Islam Q&A (ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব) কে সাপোর্ট দেয়ার জন্য মুক্তহস্তে দান করবেন; যাতে করে ইনশা আল্লাহ্ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবায় আপনাদের ওয়েবসাইট তার পথ চলা অব্যাহত রাখতে পারে।
আমি একবার ভুলবশতঃ মুসাল্লার (নামায পড়ার জায়গার) মহিলাদেরকে বলেছিলাম যে আমাদের জন্য নামাযরত নারীদের সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়া সম্ভব; এতে কোনো সমস্যা নেই। ফলে মেয়েরা মসজিদে নামাযরত ব্যক্তিদের সামনে দিয়ে পেরিয়ে যাওয়া শুরু করল। পরে আমি জানতে পারলাম যে কোনো বোন যদি একাকী নামায পড়ে তাহলে তার সামনে দিয়ে যাওয়া জায়েয নেই। তার সামনে দিয়ে যে অতিক্রম করবে তার উচিত হবে তাকে বাধা দেওয়া। আর তার সামনে দিয়ে যে পার হবে সে শয়তান বলে গণ্য হবে।
মসজিদে যে মহিলারা উপস্থিত ছিল, তাদের অনেককে আমি বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছিলাম। আমি না জেনে বিষয়টি বলার জন্য খুবই অনুতপ্ত। আল্লাহর কাছে আমি মাফ চেয়েছি। কিন্তু আমি যা বলেছি তা নিয়ে আমি অনুশোচনায় ভুগছি। কারণ মানুষজন সেটি হয়তো করতে থাকবে এবং প্রচার চালাবে। এর কারণ হবো আমি এবং পাপের দায়ভার আমিই বহন করব।
মসজিদে কী করণীয় সেটি কি আপনি আমাকে জানাতে পারবেন? একাকী নামায পড়ছে এমন ব্যক্তির সামনে দিয়ে যদি কেউ যেতে চায় তাহলে সে কোন দিক দিয়ে যাবে? এটি কি মক্কা-মদীনার হারামে নামাযরত মুসল্লীদের উপরেও প্রযোজ্য হবে?
আলহামদু লিল্লাহ।.
আল্লাহ আপনাকে মাফ করে দিন। জেনে রাখুন, আপনি অনেক বড় পাপ করেছেন। সেটি হলো আল্লাহর ব্যাপারে না জেনে কথা বলেছেন। এই পাপকে আল্লাহ শির্কের সাথে সংযুক্ত করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:
قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْإثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَأَنْ تُشْرِكُوا بِاللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَاناً وَأَنْ تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ مَا لا تَعْلَمُونَ
“বলো, বস্তুত আমার রব হারাম করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীল কাজকর্ম, (সবরকম) পাপ, অসঙ্গত বাড়াবাড়ি, আল্লাহর সাথে তোমাদের শরীক করা, যার পক্ষে তিনি কোন প্রমাণ নাযিল করেননি এবং আল্লাহ সম্পর্কে তোমাদের এমন কথা বলা যা তোমরা জানো না।”[সূরা আ’রাফ: ৩৩]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি ইসলামে ভাল সুন্নত (রীতি) চালু করবে সে তার নিজের এবং ঐ সমস্ত লোকের সওয়াব পাবে, যারা তার (মৃত্যুর) পর এর উপর আমল করবে। তাদের সওয়াবের কিছু পরিমাণও কম করা হবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলামে কোনো মন্দ সুন্নতের (রীতির) প্রচলন করবে, তার উপর তার নিজের এবং ঐ লোকদের গোনাহ বর্তাবে যারা তার (মৃত্যুর) পর এর উপর আমল করবে। তাদের গুনাহর কিছু পরিমাণও কম করা হবে না।”[হাদীসটি মুসলিম (১০১৭) জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেছেন]
সুতরাং আপনার উচিত হলো আল্লাহর কাছে তাওবা করে এই পাপ থেকে ক্ষমা চাওয়া। আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আপনাকে একনিষ্ঠ তাওবা করার তৌফিক দান করেন।
পাশাপাশি আপনি না জেনে প্রথমে যা বলেছেন সেটি যারা শুনেছে তাদেরকে সে বিষয়টি জানিয়ে নিজেকে দায়মুক্ত করার প্রচেষ্টা করবেন।
আর আপনি যে প্রশ্নটি উল্লেখ করেছেন সেটির ব্যাপারে বলব: যে ব্যক্তি মুসল্লীর সামনে দিয়ে গমন করতে ইচ্ছুক তার অবস্থা নিম্নের যে কোনো একটি:
১- মুসল্লীর সম্মুখ দিয়ে গমন করা। অর্থাৎ তার দাঁড়ানো ও সিজদার মাঝের স্থান দিয়ে গমন করা। এটি হারাম। বরং এটি বড় ধরনের কবীরা গুনাহ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “নামায আদায়কারী ব্যক্তির সামনে দিয়ে গমন করার পাপ সম্বন্ধে যদি গমনকারী জানতো তবে সে তার সম্মুখ দিয়ে গমন করার চেয়ে চল্লিশ দাঁড়িয়ে থাকাকে তার জন্য শ্রেয় মনে করতো।” বর্ণনাকারীদের মাঝে একজন আবুন-নদ্বর। তিনি বলেন: আমি জানি না তিনি কি চল্লিশ দিন, নাকি চল্লিশ মাস, নাকি চল্লিশ বছর বলেছিলেন।[হাদীসটি বুখারী (৫১০) ও মুসলিম (৫০৭) আবু জুহাইম রাদিয়াল্লাহু আনহুর সূত্রে বর্ণনা করেছেন]
এক্ষেত্রে মুসল্লির সামনে সুতরা (বিশেষ লাঠি) থাকা কিংবা না থাকার মাঝে কোনো পার্থক্য নেই।
২- তার সিজদার স্থানের বাহিরে দিয়ে অতিক্রম করা। এর দুটি অবস্থা:
(ক) মুসল্লী যদি সুতরা দিয়ে নামায পড়ে। এখানে সুতরার সামনে দিয়ে অতিক্রম করা জায়েয। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাই্হি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যখন তোমাদের কেউ নামায আদায় করতে যাবে তখন সে যেন তার সম্মুখে কিছু স্থাপন করে। কিছু না পেলে লাঠি খাড়া করে দেয়। তাও যদি না থাকে তাহলে একটা রেখা টেনে দিবে। এর ফলে সুত্রার সামনে দিয়ে কেউ গেলে কোন ক্ষতি হবে না।”[হাদীসটি আহমদ (৩/১৫), ইবনে মাজাহ (৩০৬৩) ও ইবনে হিব্বান (২৩৬১) বর্ণনা করেছেন। ইবনে হাজার বুলূগুল মারাম বইয়ে (২৬৯) বলেন: যিনি দাবি করেন হাদীসটি মুদতারিব, তিনি সঠিক বলেননি। বরং হাদীসটি হাসান]
তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের কেউ যখন নিজের সামনে হাওদার খুঁটির মত কিছু রেখে দেয়, তারপর এর দিকে নামায আদায় করে তখন খুঁটির পিছনে দিয়ে কেউ চলাচল করলে সেটাকে সে ভ্রুক্ষেপ করবে না।”[হাদীসটি মুসলিম (৪৯৯) বর্ণনা করেন]
(খ) মুসল্লী যদি সুতরা না দিয়ে নামায পড়ে। এমন অবস্থায় তার জায়গা কেবল সিজদার স্থান পর্যন্ত। আলেমদের মতের মাঝে এটি সঠিক হওয়ার সবচেয়ে কাছাকাছি। যিনি গমন করতে চান, তিনি মুসল্লীর সিজদার স্থানের বাহিরে দিয়ে যাবেন। কারণ হাদীসের নিষেধাজ্ঞা হচ্ছে মুসল্লীদের ঠিক সামনে দিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে। আর তার সিজদার স্থানের বাহিরের স্থান মুসল্লীর ঠিক সামনে নয়।
শাইখ ইবনে উছাইমীন রাহিমাহুল্লাহ মুসল্লী তার সামনে কী পরিমাণ স্থানে কাউকে যেতে বাধা দিতে পারবে তা নিয়ে মতামতগুলো উল্লেখ করার পর বলেন:
‘যে মতটি সঠিক হওয়ার সবচেয়ে কাছাকাছি সেটি হলো: ব্যক্তির দুই পা ও তার সিজদার স্থানের শেষ সীমা পর্যন্ত। কারণ নামাযে মুসল্লীর জন্য এর চেয়ে বেশি স্থানের প্রয়োজন নেই। সুতরাং মানুষের যা প্রয়োজন নেই সেটি থেকে বাধা দেওয়ার অধিকারও তার নেই।’[আশ-শারহুল মুমতি (৩/৩৪০)]
এ কথাগুলো সে ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে যদি ব্যক্তি একাকী নামায আদায়কারী কিংবা ইমাম হয়। আর যদি সে মুক্তাদি হয় তাহলে ইমামের সুতরাই তার সুতরা হিসেবে যথেষ্ট।
বুখারী রাহিমাহুল্লাহ বলেন: ‘ইমামের সুতরা তার পেছনের ব্যক্তিদের সুতরা শীর্ষক পরিচ্ছেদ:
ইবনে আব্বাস বলেন:
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিনায় সালাত আদায় করছিলেন, তাঁর সামনে কোন দেয়াল ছিল না। তখন আমি একটি গাধীর পিঠে আরোহন করে আগমন করলাম। সে সময় আমি আমি সাবালক হবার নিকটবর্তী বয়সে পৌঁছেছি। আমি কোন এক কাতারের সামনে দিয়ে গমন করেছি এবং গাধীটিকে বিচরণের জন্য ছেড়ে দিয়েছি। আমি কাতারের ভেতরে ঢুকেছি; কিন্তু আমাকে নিষেধ করা হয়নি।’[হাদীসটি বুখারী (৭৬) ও মুসলিম (৫০৪) বর্ণনা করেন] [দেখুন: আল-মুগনী (২/৪২), (২/৪৬)]
আলেমদের মতগুলোর মাঝে বিশুদ্ধ মত হলো মক্কা ও অন্যান্য স্থানের একই হুকুম; যেহেতু দলীলগুলোর মর্ম সাধারণ। এর ব্যাপকতা থেকে মক্কাকে বের করে দেয় এমন কোনো প্রমাণ নেই। শাইখ ইবনে উছাইমীনের মতও এটি।[দেখুন: আশ-শারহুল মুমতি (৩/৩৪২)]
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।