আমরা আশা করছি, আপনাদের ওয়েবসাইট Islam Q&A (ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব) কে সাপোর্ট দেয়ার জন্য মুক্তহস্তে দান করবেন; যাতে করে ইনশা আল্লাহ্ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবায় আপনাদের ওয়েবসাইট তার পথ চলা অব্যাহত রাখতে পারে।
উৎপীড়নের বিভিন্ন প্রকারের হুকুম উল্লেখ, উৎপীড়নকারীর ব্যাপারে কঠোর হুমকি এবং উৎপীড়কদের লক্ষ্য করে কিছু কথা আশা করছি।
আলহামদু লিল্লাহ।.
উৎপীড়ন সংস্কৃতি: এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে পুনরাবৃত্তিমূলক মৌখিক ও শারীরিক আক্রমণ, যা সাধারণত ছেলে বা মেয়ে তার সমবয়সী বা তার চেয়ে কমবয়সীদের সাথে চর্চা করে থাকে। আক্রমণকারী তার শক্তি বা সঙ্গিদের উপর নির্ভর করে; অপরদিকে উৎপীড়িতের দুর্বলতা বা একাকিত্বের সুযোগকে ব্যবহার করে।
দুঃখের সাথে বলতে হয় এই সংস্কৃতি স্কুলগুলোতে, আবাসিক এলাকায় বিস্তার লাভ করছে। সাধারণতঃ এটি উৎপীড়িতের শারীরিক ও মানসিক ব্যাপক ক্ষতি করে। কখনও কখনও এর কুপ্রভাব উৎপীড়িতকে আত্মহত্যা করতেও প্ররোচিত করে; যদি তার ব্যাপারে কিংবা তার দৈনন্দিন ভোগান্তির ব্যাপারে কেউ সচেতন না হয়।
এই সামাজিক সমস্যা নিরসনে আল্লাহ্ তাআলার সাহায্যের পর এই সংস্কৃতিকে ঘিরে যে পক্ষগুলো রয়েছে তাদের সকলের অংশগ্রহণ আবশ্যক। বিশেষতঃ
উৎপীড়কের পরিবার:
যে পরিবারের সদস্য এমন কোন সংস্কৃতি দ্বারা আক্রান্ত হয় তাদের উচিত উৎপীড়কের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা। তাদেরকে আল্লাহ্র ভয় স্মরণ করিয়ে দেয়া, তাদেরকে নিজ সন্তানদের প্রতি যত্মশীল হতে বলা এবং সন্তানদেরকে খারাপ চরিত্র থেকে বাঁচিয়ে রাখতে অনুরোধ করা।
আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদেরকে ও নিজেদের পরিবারবর্গকে আগুন থেকে বাঁচাও। যে আগুনের ইন্ধন হচ্ছে- মানুষ ও পাথর। যার দায়িত্বে নিয়োজিত আছে নির্দয় ও কঠোর ফেরেশতারা। তারা আল্লাহ্র নির্দেশ অমান্য করে না এবং যা করার নির্দেশ পায় তাই করে।”[সূরা আল-তাহরীম, আয়াত: ৬]
শাইখ মুহাম্মদ আল-আমীন আশ-শানক্বিতী (রহঃ) বলেন:
ব্যক্তির উপর আবশ্যক তার পরিবারকে তথা স্ত্রী ও সন্তানদেরকে সৎকাজের আদেশ দেয়া এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা। যেহেতু আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদেরকে ও নিজেদের পরিবারবর্গকে আগুন থেকে বাঁচাও।
এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল। প্রত্যেককে তার অধীনস্থদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”[আল-হাদিস][আয-ওয়াউল বায়ান (২/২০৯) থেকে সমাপ্ত]
সন্তানদের ব্যাপারে তাদের অবহেলার কারণে তাদেরকে আখিরাতে শাস্তি পাওয়ার ব্যাপারে সাবধান করা। কেননা এই অবহেলা ও এই সীমালঙ্ঘন মেনে নেয়া এটি সন্তানদের প্রতিপালনে ধোকাবাজি।
হাসান থেকে বর্ণিত আছে যে, উবাইদুল্লাহ্ বিন যিয়াদ মৃত্যুর রোগে আক্রান্ত মা’কিল বিন ইয়াসার (রাঃ) কে দেখতে গেলেন। তখন মা’কিল (রাঃ) বললেন: আমি তোমাকে একটি হাদিস বর্ণনা করছি যে হাদিসটি আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনেছি। আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন: “আল্লাহ্ কোন বান্দার উপর কোন কওমের দায়িত্ব অর্পণ করলে সে বান্দা যদি তাদের কল্যাণ সাধন না করে তাহলে সে ব্যক্তি জান্নাতের ঘ্রাণ পাবে না।”[সহিহ বুখারী (৭১৫০) ও সহিহ মুসলিম (১৪২)]
অনুরূপভাবে সন্তানদেরকে সীমালঙ্ঘন ও বাড়াবাড়ি থেকে বিরত না-রাখার খারাপ পরিণতির ব্যাপারেও তাদেরকে সতর্ক করা। কারণ কর্মফল কর্মশ্রেণীয়; শরিয়তের অনেক দলিল ও অভিজ্ঞতা তা প্রমাণ করে।
সকল পিতামাতার কর্তব্য হলো সন্তানদের মাঝে দ্বীনি চেতনা মজবুত করা, তাদেরকে সঠিক আকিদার দীক্ষা দেয়া। সহনশীলতা, অপরকে সম্মান করা, শিষ্টাচার, অন্যদেরকে ভালোবাসা, অন্যদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসা, পারস্পারিক সহযোগিতা ইত্যাদি উত্তম আখলাকের প্রশিক্ষণের উপর তাদেরকে বড় করা।
উৎপীড়িতের পরিবারের:
শিশুর পিতামাতার কর্তব্য তাদের সন্তানের প্রতি গুরুত্বারোপ করা। তদারকি না করে এভাবে ফেলে না-রাখা; এই যুক্তিতে যে, সে যেন নিজের সমস্যা নিজে নিরসন করতে শিখে এবং অন্যদের জন্য বোঝা না হয়।
আব্দুল্লাহ্ বিন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল। প্রত্যেককে তার অধীনস্থদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। শাসক দায়িত্বশীল; তাকে তার অধীনস্থদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হবে। পুরুষ তার পরিবারে দায়িত্বশীল; তাকে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। স্ত্রী তার স্বামীর ঘরের ও স্বামীর সন্তানের উপর দায়িত্বশীল। তাকে তার অধীনস্থ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ক্রীতদাস তার মালিকের সম্পদের দায়িত্বশীল। তাকে সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ওহে তোমরা শুনে রাখ! সুতরাং তোমরা প্রত্যেক দায়িত্বশীল। প্রত্যেককে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”[সহিহ বুখারী (৮৫৩) ও সহিহ মুসলিম (১৮২৯)]
বিশেষতঃ নিপীড়নের শিকার শ্রেণীর অনেকে চুপচাপ অর্ন্তমুখী প্রকৃতির। তারা তাদের মনের কথা বলতে চায় না। তাই পিতামাতার কর্তব্য তার নিবীড় সম্পর্ক গড়ে তোলা যা পিতৃত্বের সম্পর্ককে পেরিয়ে বন্ধুর সম্পর্কে গিয়ে পৌঁছবে; যাতে করে সে তাদের কাছে স্বস্তি অনুভব করে এবং তার মনের কথা তাদের কাছে খুলে বলতে সাহস পায়। অনুরূপভাবে পিতামাতার কর্তব্য সময়ে সময়ে সন্তানদের স্কুল ভিজিট করা, তার সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়া। অনুরূপভাবে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সন্তানের জন্য সৎ বন্ধু নির্বাচন করে দেয়া এবং সময়ে সময়ে তাদেরকে বাসায় মেহমানদারি করার অনুমতি দেয়া; যাতে করে সে বৈধ খেলাধুলা কিংবা উপকারী অভ্যাসগুলো চর্চা করতে পারে কিংবা স্কুলের হোম ওয়ার্কগুলো একত্রে সম্পাদন করতে পারে। এটি একদিকে শিশুকে বহির্মুখী করে তুলবে; অপরদিকে তাদের সাথে একতা গড়ে তোলার মাধ্যমে সে উৎপীড়কদের নির্যাতন থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে।
অনুরূপভাবে সন্তানদেরকে আত্মরক্ষামূলক ব্যায়ামের প্রশিক্ষণ দেয়া বাঞ্চনীয়। এটি তাদের শারীরিক ও মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করবে। তাদের আত্মনির্ভরশীলতা বাড়াবে। তাদেরকে উৎপীড়ক ছেলেদের থেকে দূরে রাখবে। এর সাথে সন্তানদের কাছে সর্বদা এটি নিশ্চিত করতে হবে যে, এই ব্যায়াম অন্যদের উপর আক্রমণ করা ও নির্যাতন করার জন্য নয়; বরং শারীরিক সুস্থতা ও শক্তি বাড়ানোর জন্য এবং প্রয়োজন হলে আত্মরক্ষা করার জন্য।
অনুরূপভাবে মসজিদের ইমাম, খতীব ও স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোর সাথেও যোগাযোগ রাখা বাঞ্চনীয় এবং এ বিষয়টির উপর আলোকপাত করার জন্য তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাতে করে তারা কথা বা কাজ দিয়ে মানুষকে নির্যাতন করা থেকে সতর্ক করে। যে ব্যক্তি এমন কাজে লিপ্ত হবে সে ব্যক্তি দুনিয়াতে শাস্তি পাওয়ার সাথে সাথে আখিরাতে শাস্তি পাবে এ বিষয়ে সাবধান করা।
একই প্রতিষ্ঠানের বা মহল্লার অন্যান্য শিশুর অভিভাবকগণ:
তাদের সাথেও যোগাযোগ রাখা ভাল এবং তাদেরকে সমস্যার ভয়াবহতার ব্যাপারে অবহিত করা। তাদেরকে উপদেশ দেয়া যাতে করে তারা তাদের শিশুদেরকে মজলুমকে সাহায্য করা ও জালিমকে প্রতিরোধ করার প্রশিক্ষণের উপর গড়ে তোলে। তাদের ভূমিকা যেন ঘটনার দর্শক ও শ্রোতা হওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ না হয়। ইসলাম এ ধরণের চরিত্রকে নাকচ করে।
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: তুমি তোমার ভাইকে সাহায্য কর; হোক সে জালেম কিংবা মজলুম। এক ব্যক্তি বলল: হে আল্লাহ্র রাসূল! মজলুম হলে তাকে সাহায্য করব; কিন্তু জালেম হলে আমি তাকে কিভাবে সাহায্য করব; আপনি কি বলেন? তিনি বললেন: তাকে জুলুম করা থেকে আটকে রাখবে কিংবা বলেছেন বারণ করবে। এটাই তাকে সাহায্য করা।[সহিহ বুখারী (৬৯৫২)]
বারা বিন আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে সাতটি বিষয়ের নির্দেশ দিলেন এবং সাতটি বিষয় থেকে নিষেধ করলেন। তিনি উল্লেখ করেন: রোগী দেখা, জানাযার অনুসরণ করা, হাঁচির উত্তর দেয়া, সালামের জবাব দেয়া, মজলুমকে সাহায্য করা, দাওয়াতে সাড়া দেয়া এবং কসমকারীর কসম পূর্ণ করা।[সহিহ বুখারী (২৪৪৫) ও সহিহ মুসলিম (২০৬৬)]
অনুরূপভাবে স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা ভালো। এই সমস্যাটি রোধ করা কিংবা এর প্রকোপকে প্রশমিত করার মত চিন্তাধারা ও সমাধানগুলো নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা করা।
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।