আমরা আশা করছি, আপনাদের ওয়েবসাইট Islam Q&A (ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব) কে সাপোর্ট দেয়ার জন্য মুক্তহস্তে দান করবেন; যাতে করে ইনশা আল্লাহ্ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবায় আপনাদের ওয়েবসাইট তার পথ চলা অব্যাহত রাখতে পারে।
আলহামদু লিল্লাহ।.
আলহামদুলিল্লাহ।জমহুর আলেমের মতে, যে ব্যক্তি সূর্য ডুবে গেছে মনে করে, ইফতার করে ফেলেছে, এরপর জানতে পারে যে, সূর্য ডুবেনি; তাকে রোযাটি কাযা করতে হবে।
ইবনে কুদামা ‘আল-মুগনি’ গ্রন্থ (৪/৩৮৯) বলেন: “এটি অধিকাংশ ফিকাহবিদ ও অন্যান্য আলেমের অভিমত।” সমাপ্ত
ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটিকে যখন এমন ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল যিনি তার দুই মেয়ের কথার ভিত্তিতে ইফতার করে ফেলেছেন। এরপর যখন মাগরিবের নামাযের জন্য বের হন তখন শুনতে পান যে, মাত্র মুয়াজ্জিন মাগরিবের নামাযের আযান দিচ্ছে। জবাবে তারা বলেন: “যদি প্রকৃতপক্ষে সূর্য ডোবার পর আপনার ইফতার হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে রোযা কাযা করতে হবে না। আর যদি আপনার ইফতার সূর্যাস্তের পরে হয়ে থাকে থাকে অথবা সূর্যাস্তের পরে হয়েছে বলে আপনার প্রবল ধারণা হয়; অথবা আপনি এরকম সন্দেহ করে থাকেন তাহলে আপনাকে এবং আপনার সাথে যারা ইফতার করেছে তাদের সকলকে রোযাটি কাযা পালন করতে হবে। কারণ দিবস অবশিষ্ট থাকাটাই হচ্ছে মূল অবস্থা। আর এ মূল অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় রূপান্তরের জন্য শরয়ি দলিল থাকতে হবে। আর এখানে শরয়ি দলিল হচ্ছে- সূর্যাস্ত যাওয়া।” সমাপ্ত [স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র (১০/২৮৮)]
শাইখ বিন বাযকে প্রশ্ন করা হয়েছিল:এমন কিছু লোক সম্পর্কে যারা ইফতার করে ফেলার পর জানা যায় যে, সূর্য ডুবেনি। উত্তরে তিনি বলেন: জমহুর আলেমের মতে, যে ব্যক্তির ক্ষেত্রে এমনটি ঘটেছে তিনি সূর্যাস্ত যাওয়ার আগে যেটুকু সময় বাকী আছে তাতে পানাহার থেকে বিরত থাকবেন এবং রোযাটি কাযা পালন করবেন। সূর্য ডুবেছে কিনা তা জানার জন্য যদি যথাসাধ্য চেষ্টা করে থাকেন তাহলে তিনি গুনাহগার হবেন না। অনুরূপভাবে শাবান মাসের ৩০ তারিখ দিনের বেলায় যদি কারো কাছে সাব্যস্ত হয় যে, এ দিনটি ১ লা রমযান তাহলে তিনি বাকী সময়টুকু পানাহার থেকে বিরত থাকবেন এবং এ দিনের রোযাটি কাযা পালন করবেন; তিনি গুনাহগার হবেন না। কারণ তিনি যখন পানাহার করেছেন তখন জানতেন না যে, এ দিনটি রমযান। তাই এ বিষয়ে অজ্ঞ থাকার কারণে তার গুনাহ হবে না। তবে এ রোযাটি তাঁকে কাযা পালন করতে হবে।[সমাপ্ত; বিন বাযের ফতোয়া সমগ্র ১৫/২৮৮]
আর কিছু কিছু আলেমের মতে, রোযাটি শুদ্ধ হবে এবং কাযা করা আবশ্যক হবে না। এ অভিমতটি মুজাহিদ (রহঃ) ও হাসান (রহঃ) থেকেও বর্ণিত আছে। একই অভিমত দিয়েছেন, ইসহাক (রহঃ), এক বর্ণনামতে ইমাম আহমাদ, আল-মুযানি, ইবনে খুযাইমা এবং ইবনে তাইমিয়া। শাইখ ইবনে উছাইমীন এ অভিমতকে অগ্রগণ্য ঘোষণা করেছেন।[দেখুন: ফাতহুল বারী (৪/২০০), ইবনে তাইমিয়া এর ‘মাজমুউল ফাতাওয়া’ (২৫/২৩১), আল-শারহুল মুমতি (৬/৪০২-৪০৮)]
তাঁরা দলিল দেন বুখারি কর্তৃক বর্ণিত হাদিস দিয়ে- হিশাম বিন উরওয়া ফাতেমা থেকে তিনি আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন; তিনি বলেন: একবার মেঘাচ্ছন্ন আকাশ থাকায় আমরা ইফতার করে ফেললাম; এরপর আবার সূর্য দেখা গেল। হিশামকে জিজ্ঞেস করা হল: তাদেরকে কি রোযাটি কাযা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল? তিনি বললেন: অবশ্যই কাযা করতে হবে। মামার বলেন: আমি হিশামকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন: আমি জানি না- তারা কি কাযা করেছেন; নাকি করেননি।
হিশাম এর উক্তি: “অবশ্যই কাযা করতে হবে” এটি তাঁর নিজস্ব বোধ। তিনি এ কথা বলেননি যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি রোযাটি কাযা করার নির্দেশ দিয়েছেন। এ কারণে হাফেয ইবনে হাজার বলেন: আসমা (রাঃ) এর হাদিসটিতে রোযাটি কাযা করা বা না-করা কোনটি সাব্যস্ত নয়। সমাপ্ত
শাইখ উছাইমীন “আল-শারহুল মুমতি” (৬/৪০২) বলেন: দিনের কিছু অংশ অবশিষ্ট থাকতে সূর্য ডুবে গেছে এ ভিত্তিতে তারা ইফতার করে ফেলেছেন। তারা শরিয়তের হুকুম জানে না- এমনটি নয়। বরং তারা সূর্যের প্রকৃত অবস্থাটি সম্পর্কে অজ্ঞ। তারা মনে করেনি যে, এখনো দিন অবশিষ্ট আছে এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে রোযাটি কাযা করার নির্দেশও দেননি। যদি রোযাটি কাযা করা ফরজ হত; তাহলে সেটা আল্লাহর দেয়া শরিয়ত হিসেবে সাব্যস্ত হত এবং কাযা করার বিষয়টি হাদিসে সাব্যস্ত হয়। অতএব, যেহেতু সাব্যস্ত হয়নি এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকেও কিছু বর্ণিত হয়নি সুতরাং মানুষের মূল অবস্থা হল- তার উপর কোন যিম্মাদারি বা কাযা করার দায়িত্ব না থাকা। সমাপ্ত
ইবনে তাইমিয়া ‘মাজমুউল ফাতাওয়া’ (২৫/২৩১) গ্রন্থে বলেন:
এতে প্রমাণিত হয় যে, কাযা করা ফরয নয়। যদি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে রোযাটি কাযা করার নির্দেশ দিতেন তাহলে সেটা প্রচারিত হত; যেভাবে তাদের ইফতার করে ফেলার বিষয়টি প্রচারিত হয়েছে। যখন কাযা করার ব্যাপারটি প্রচারিত হয়নি এতে বুঝা যায় যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে কাযা করার নির্দেশ দেননি। যদি বলা হয় যে, হিশাম বিন উরওয়াকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে: তাদেরকে কি কাযা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল? তিনি বলেছেন: অবশ্যই কাযা করতে হবে? উত্তরে বলা হবে: হিশাম (রহঃ) সেটা নিজের ইজতিহাদ থেকে বলেছেন। হাদিসে এটি বর্ণিত হয়নি। এ বিষয়ে হিশামের যে ইলম ছিল না তার প্রমাণ পাওয়া যায় মামার এর বর্ণনা থেকে। মামার বলেন: আমি হিশামকে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন: আমি জানি না- তারা কি রোযাটি কাযা করেছেন; নাকি কাযা করেননি। ইমাম বুখারি এ উক্তিটি উল্লেখ করেছেন। হিশাম তার পিতা উরওয়া থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তাদেরকে রোযাটি কাযা করার নির্দেশ দেয়া হয়নি। আর উরওয়া তার ছেলের চেয়ে অধিক অবহিত। [সংক্ষেপিত ও সমাপ্ত]
যদি আপনার সাবধানতা অবলম্বন করতঃ একটি রোযা রেখে দেন সেটা ভাল। আলহামদুলিল্লাহ; একদিনের রোযা রাখা তেমন কষ্টের কিছু না। যা ঘটে গেছে সে জন্য আপনাদের কোন গুনাহ হবে না।
আল্লাহই ভাল জানেন।