আলহামদু লিল্লাহ।.
এক:
ফিকাহবিদদের মধ্যে এই মর্মে কোন মতভেদ নাই যে, মানুষের চুল বিক্রি করা নিষিদ্ধ। কেননা চুল মানুষের শরীরের একটি অংশ। মানুষ সম্মানিত। মানুষের কোন অঙ্গ বিক্রি করা মানে মানুষকে অপমানিত করা।
“আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা”-তে (২৬/১০২) এসেছে:
ফিকাহবিদগণ এই মর্মে একমত যে, মানুষের চুল বিক্রি করা ও ব্যবহার করা নাজায়েয। কেননা মানুষ সম্মানিত। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “আমি বনী আদমকে সম্মানিত করেছি।” তাই মানুষের কোন অংশকে অসম্মানিত করা নাজায়েয।[সমাপ্ত]
দুই:
যারা চুল দিয়ে নকল চুল (পরচুলা) বানায় তাদেরকে চুল দান করা প্রসঙ্গে:
নকল চুল ব্যবহার করা কখনও জায়েয; কখনও হারাম। যদি কোন ত্রুটিকে সংশোধন করার জন্য হয় তাহলে সেটা জায়েয। আর যদি এর দ্বারা সাজসজ্জা উদ্দেশ্য হয় তাহলে সেটা হারাম।
শাইখ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উছাইমীন (রহঃ) বলেন:
“পরচুলা পরা দুই ধরণের:
১। এর দ্বারা সাজসজ্জা উদ্দেশ্য হওয়া; যাতে করে কোন নারীর মাথাকে চুলভর্তি দেখা যায় এবং পরচুলা পরলে সেটা বাস্তবায়িত হয়। এই পরাটা বিশেষ কোন ত্রুটিগত কারণে নয়। তাহলে পরচুলা পরা নাজায়েয। কেননা এটি চুলের সাথে চুল যুক্ত করার পর্যায়ভুক্ত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম “ঐ নারীকে লানত করেছেন যে চুলের সাথে চুল যুক্ত করার কাজ করে এবং যেই নারী এর গ্রাহক।”
২। কোন নারীর কোন চুলই না থাকা এবং নারীদের কাছে এটি ত্রুটি হিসেবে গণ্য হওয়া এবং তার পক্ষে এ ত্রুটিকে লুকিয়ে রাখা সম্ভবপর না হওয়া। তথা পরচুলা পরা ছাড়া এটি লুকিয়ে রাখা সম্ভবপর না হওয়া। আমরা আশা করছি, সেক্ষেত্রে তা পরার কারণে এমন নারীর কোন গুনাহ হবে না। কেননা তা সাজ হিসেবে নয়। বরং ত্রুটিকে দূর করার জন্য। তদুপরি সতর্কতা হচ্ছে এমন অবস্থাতেও পরচুলা না পরা। বরং ঘোমটা দিয়ে মাথা ঢেকে রাখা; যাতে করে তার ত্রুটিটা প্রকাশ না পায়। আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।”[সমাপ্ত][ফাতাওয়া নুরুন আলাদ দারব]
তিনি আরও বলেন: “পরচুলা হারাম। এটি চুলের সাথে চুল যুক্ত করার অন্তর্ভুক্ত। যদি প্রকৃতপক্ষে সেটি চুলের সাথে চুল যুক্ত করার অন্তর্ভুক্ত না হয়; তদুপরি এটি নারীর মাথাকে প্রকৃত অবস্থার চেয়ে বড় করে দেখায়; যা চুলের সাথে চুল যুক্ত করার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম “ঐ নারীকে লানত করেছেন যে চুলের সাথে চুল যুক্ত করার কাজ করে, যেই নারী এর গ্রাহক।” কিন্তু যদি কোন নারীর মাথায় কোন চুলই না থাকে; কিংবা টাক মাথা হয়: তাহলে পরচুলা ব্যবহার করতে কোন গুনাহ নেই; যাতে করে তিনি এ দোষটি ঢেকে রাখতে পারেন। কেননা দোষ আড়াল করা জায়েয। এ কারণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন ব্যক্তিকে একটি স্বর্ণের নাক গ্রহণ করার অনুমতি দিয়েছিলেন কোন এক যুদ্ধে যার নাকটি কাটা পড়েছে।”[সমাপ্ত][মাজমুউ ফাতাওয়াস শাইখ উছাইমীন (১১/প্রশ্ন নং-৬৮)]
উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে যদি চুলের দান গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান আগুনে পোড়া ব্যক্তি বা ক্যান্সারের কারণে চুল পড়ে যাওয়া ব্যক্তি কিংবা এ ধরণের অন্য কোন কারণে চুল না থাকা ব্যক্তিদের জন্য নকল চুল বানায়; এবং তারা বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান হয় তাহলে তাদেরকে দান করা জায়েয হবে। দানকারী এর বিনিময়ে তার প্রভুর কাছে সওয়াবপ্রাপ্তির আশা করবেন।
আর যদি প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বস্ত না হয় কিংবা সাজসজ্জা হিসেবে নকল চুল বানায় তাহলে তাদেরকে দান করা জায়েয হবে না।
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।