আলহামদু লিল্লাহ।.
এক:
নারীর মূল অবস্থা হলো সে ঘরে থাকবে। প্রয়োজন ছাড়া বের হবে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَقَرۡنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ ٱلۡأُولَىٰۖ
“তোমরা তোমাদের ঘরে থাকবে এবং অজ্ঞতাযুগের মত নিজেদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করবে না।”[সূরা আহযাব: ৩৩]
আয়াতটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদের উদ্দেশ্য করে বলা হলেও মুমিন নারীরা এর অন্তর্ভুক্ত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদেরকে বলার কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে তাদের মর্যাদা ও অবস্থান। অধিকন্তু তারা মুমিন নারীদের কাছে আদর্শ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “মেয়ে মানুষ (সবটাই) লজ্জাস্থান (গোপনীয়)। যখন সে নিজ বাড়ি থেকে বের হয় তখন শয়তান তার দিকে চোখ তুলে তাকায়। সে যখন নিজ বাড়ির অন্দরমহলে অবস্থান করে তখন সে আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী থাকে।”[হাদীসটি ইবনু হিব্বান ও ইবনু খুযাইমা বর্ণনা করেন। শাইখ আলবানী আস-সিলসিলাতুস সহীহা বইয়ে (২৬৮৮) এটিকে বিশুদ্ধ বলে গণ্য করেন]
মসজিদে নারীদের নামাযের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “তাদের ঘরই তাদের জন্য উত্তম।”[হাদীসটি আবু দাউদ (৫৬৭) বর্ণনা করেন এবং শাইখ আলবানী সহিহু আবি দাউদে এটিকে বিশুদ্ধ বলে গণ্য করেন]
আরো জানতে দেখুন 6742 নং প্রশ্নের উত্তর।
দুই:
নারীর জন্য ঘরের বাইরে চাকুরী করা বৈধ। তবে সেটি নির্দিষ্ট কিছু শর্তসাপেক্ষে। শর্তগুলো পাওয়া গেলে নারীর জন্য ঘর ছেড়ে বের হওয়া বৈধ। সেগুলো হলো:
- নিজের আবশ্যকীয় অর্থের যোগান দেওয়ার জন্য চাকুরী করা তার প্রয়োজন হওয়া; যেমনটি আপনার অবস্থা।
- কাজটি নারীর প্রকৃতি ও শারীরিক গঠনের সাথে মানানসই হওয়া। যেমন: চিকিৎসা, নার্সিং, শিক্ষকতা, সেলাই ইত্যাদি।
- কাজটি নিছক নারীর অঙ্গনে হওয়া। সেখানে কোনো বেগানা পুরুষের সাথে মেলামেশা না থাকা।
- নারী তার কর্মক্ষেত্রে শরয়ি হিজাব মেনে চলা।
- চাকুরীর জন্য তাকে মাহরাম ছাড়া সফর করা না লাগা।
- চাকুরীতে যাওয়ার জন্য তাকে কোনো হারামে লিপ্ত হতে না হওয়া। যেমন: ড্রাইভারের সাথে একাকী অবস্থান, এভাবে সুগন্ধি লাগানো যার ঘ্রাণ বেগানা পুরুষ পায়।
- চাকুরীর কারণে এর চেয়ে আবশ্যকীয় দায়িত্ব নষ্ট না হওয়া; ঘরের পরিচর্যা, স্বামী ও সন্তানদের দেখভাল করা।
শাইখ মুহাম্মাদ আস-সালেহ আল-উছাইমীন বলেন: “নারীর কর্মক্ষেত্র হলো: নারী নারীদের সাথে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলোতে কাজ করবে। যেমন: মেয়েদের শিক্ষাখাতে চাকুরী করা; সেটা প্রশাসনিক চাকুরী হোক বা টেকনিক্যাল চাকুরী হোক। ঘরে বসে নারীদের জামা সেলাই বা অনুরূপ কাজ করা। কিন্তু পুরুষদের সাথে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে কাজ করা তার জন্য জায়েয নেই। কারণ এতে করে পুরুষদের সাথে তাকে মেলামেশা করতে হয়। এটি বড় ধরনের ফিতনা। এর থেকে সতর্ক থাকা আবশ্যক। এটা জানা জরুরী যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত হয়েছে: “আমি আমার পরে পুরুষদের জন্য নারীর চেয়ে ক্ষতিকর কোনো ফিতনা রেখে যাইনি। বনী ইসরাইলের ফিতনা ছিল নারীদের দিয়ে।” সুতরাং প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত তার পরিবারকে ফিতনার স্থান ও কারণসমূহ থেকে সর্বাবস্থায় নিরাপদে রাখা।”[সমাপ্ত][ফাতাওয়াল মারআ আল-মুসলিমাহ: (২/৯৮১)]
আপনার চাকুরী করার ক্ষেত্রে যদি এই শর্তাবলি পরিপূর্ণ হয়, তাহলে ইন শা আল্লাহ এতে আপনার কোনো গুনাহ হবে না।
আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আপনাকে একজন নেককার স্বামীর ব্যবস্থা করে দেন। তিনিই বিষয়টির অভিভাবক ও তত্ত্বাবধায়ক।
আল্লাহ সর্বজ্ঞ।