সোমবার 17 রমজান 1446 - 17 মার্চ 2025
বাংলা

সুদী ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকের পার্থক্য

প্রশ্ন

ইসলামী ব্যাংকগুলো যেহেতু সুদী পদ্ধতিতে লেনদেন করে না, তাহলে ব্যাংকগুলো মুনাফা অর্জন করে কিভাবে, এগুলোর লাভ হয় কীভাবে? তারা সেবার বিনিময়ে যে অর্থ গ্রহণ করে সেটি কি সুদ বলে গণ্য হবে? আর ইসলাম কোন ধরনের লেনদেনকে সুদ হিসেবে গণ্য করে?

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যে সুদী পদ্ধতির উপর নির্ভর করে সেটি হচ্ছে হারাম সুদী ব্যবস্থা। এর ভিত্তি হলো সুদের মাধ্যমে ঋণ প্রদান ও গ্রহণ। ব্যাংক একজন কাস্টমারকে সুদে বিনিময়ে ঋণ দেয়। যে কাস্টমার ব্যাংকে টাকা রাখে সে ব্যাংককে সুদের বিনিময়ে ঋণ প্রদান করে। সুদের বিনিময়ে ঋণ দেয়া হলো আলেমদের সর্বসম্মতিক্রমে হারাম সুদ।

আর ইসলামী ব্যাংকগুলো জায়েয লেনদেনগুলোর উপর নির্ভর করে; যেমন ক্রয়-বিক্রয়, মুদারাবা ও অংশীদারিত্ব ইত্যাদি শরিয়তসম্মত বিনিয়োগ পদ্ধতি। এছাড়াও মানি ট্রান্সফার ফি, মানি এক্সচেঞ্জ রেট ও মানি এক্সচেঞ্জ থেকে তারা উপকৃত হয়।

সুদী লেনদেন ও বৈধ লেনদেনের মাঝে পার্থক্য করা এবং এ ধরনের লেনদেন করার ক্ষেত্রে ব্যাংক কীভাবে উপকৃত হয়, তার একটি সরল উদাহরণ হলো: কাস্টমার যদি তার অর্থ থেকে উপকৃত হতে চায়, অর্থ বৃদ্ধি করতে চায় তাহলে সে সুদী ব্যাংকের সঞ্চয়ী হিসাবে অর্থ জমা করে। ব্যাংক তাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদ দেয়। সাথে মূলধনের নিশ্চয়তাও প্রদান করে। এটি মূলত সুদী ঋণ। কাস্টমার কর্তৃক ব্যাংককে প্রদত্ত ঋণ। আর ব্যাংকের লাভ হলো সে তার কাছে জমাকৃত অর্থ অন্য একজন কাস্টমারকে সুদের বিনিময়ে প্রদান করে মুনাফা লাভ করে । অর্থাৎ ব্যাংক ঋণ নেয় ও ঋণ দেয়। আর এ দুটোর মধ্যকার পার্থক্য থেকে সে মুনাফা অর্জন করে।

অন্যদিকে ইসলামী ব্যাংকের অন্যতম বিনিয়োগ পদ্ধতি হলো সে কাস্টমারের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে শরিয়ত অনুমোদিত ব্যবসায়, বা নির্মাণ প্রকল্পে বা অনুরূপ কিছুতে মুদারাবা প্রদ্ধতিতে বিনিয়োগ করে। এতে শর্ত থাকে যে, ব্যাংক কাস্টমারকে লভ্যাংশ প্রদান করবে। আর একজন মুদারাবা ব্যবসার শ্রমদাতা হিসেবে ব্যাংকেরও লাভের অংশ থাকবে। প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত লাভই ব্যাংকের লাভ। কখনো সুদী ব্যাংকের হারাম লাভের চেয়ে এটি বহুগুণে বেশি থাকে। কিন্তু মুদারাবায় ঝুঁকি থাকে। উপকারী প্রকল্প বাছাই করে ফলাফল আসা পর্যন্ত সেটি দেখাশোনা করার কাজে শ্রম দিতে হয়।

সুদী ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকের মাঝে এই পার্থক্য হলো হারাম সুদ ও বৈধ মুদারাবার মধ্যকার পার্থক্য, যে মুদারাবায় একজন কাস্টমার তার অর্থ হারিয়ে বসতে পারেন। এখানে মূলধনের কোনো নিশ্চয়তা থাকে না। কিন্তু যদি লাভ করে, তাহলে সে হালাল অর্থ লাভ করে।

মোদ্দাকথা হলো: ইসলামী ব্যাংকের সামনে লাভ করার বহু বৈধ পন্থা আছে। তাই এই ব্যাংকগুলোর বিকাশ ও প্রসার ঘটছে। এমনকি কিছু অমুসলিম দেশও ইসলামী ব্যাংকিং সিস্টেম প্রয়োগের চেষ্টা করছে। কারণ এতে লাভ হয়। আর সুদী পদ্ধতির অনিষ্ট থেকে বাঁচা যায়, যা ধ্বংস ও ক্ষতির কারণ।

আরো উপকৃত হতে (113852) নং প্রশ্নের উত্তর দেখুন।

দুই:

সুদী লেনদেনের নানান রূপ রয়েছে। যথা:

  • সুদী ঋণ প্রদান ও গ্রহণ।
  • এক মুদ্রার সাথে অন্য মুদ্রা বিনিময়ের (মুদ্রার বদলে মুদ্রা বিক্রি) ক্ষেত্রে একটি বা উভয়টি প্রদানে বিলম্ব করা।
  • অতিরিক্ত পরিমাণে কিংবা বিলম্ব করে স্বর্ণের সাথে স্বর্ণ বিনিময় করা।
  • কিছু বিষয় যা মূলত সুদী ঋণ। যেমন: বিল ডিসকাউন্টিং, সঞ্চয়ী হিসাব, সুদ অথবা উপহার হিসেবে বিনিময় পাওয়া যায় এমন বিনিয়োগ সনদ, কিস্তিতে বিক্রির ক্ষেত্রে বিলম্বের জরিমানা, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে অর্থ উত্তোলন।

এই ওয়েবসাইট থেকে উক্ত বিষয়গুলো দেখে নিতে পারেন।

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

সংশ্লিষ্ট প্রশ্নোত্তরসমূহ