বৃহস্পতিবার 20 জুমাদাল আউওয়াল 1446 - 21 নভেম্বর 2024
বাংলা

সৌন্দর্য চর্চা হিসেবে নারীর চুল ছোট করা জায়েয; এতে গুনাহ হবে না

প্রশ্ন

আমি অনেকবার শুনেছি যে, ইসলামী বিধান মোতাবেক কোন নারীর আদৌ চুল কাটা জায়েয নেই। আমি এর কারণটি বুঝতে চাই। কারণ আমি মনে করি যে, কিছু দিন পর পর নারীর চুল পরিপাটি করার প্রয়োজন হয়। এ মাসয়ালাটি সম্পর্কে কি বিস্তারিত জানানো যাবে? আমি আরও শুনেছি যে, নারীর উচিত তার চুল যতটুকু পারা যায় লম্বা করে রাখা এবং ছোট না করা ও মুণ্ডন না করা। কেননা কিয়ামতের দিন মানুষ যখন উলঙ্গ অবস্থায় পুনরুত্থিত হবে তখন নারীর চুল তার জন্য আচ্ছাদন হবে­­- এ ধরণের কথা কি ঠিক? এর সপক্ষে কি কোন দলিল আছে?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

আলেমগণ নারীর চুল ছোট করার ব্যাপারে যেটাকে হারাম বলেছেন তা হচ্ছে নিম্নে উল্লেখিত অবস্থাসমূহ:

১। যদি এ চুল নিয়ে গাইরে মাহরাম পুরুষের সামনে নিজেকে প্রদর্শন করা হয়।

২। যদি কাফের কিংবা ফাসেক নারীদের স্টাইল অনুকরণের উদ্দেশ্য থেকে চুল ছোট করা হয়।

৩। যদি পুরুষের চুলের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ স্টাইলে চুল ছোট করা হয়।

৪। যদি কোন গাইরে মাহরাম পুরুষ দ্বারা চুল কাটানো হয়; যা অনেক পাপাচারপূর্ণ সেলুনে ঘটে থাকে।

৫। যদি স্বামীর বিনা অনুমতিতে করা হয়।

উল্লেখিত অবস্থাসমূহে যে কারণগুলো চুল ছোট করাকে হারাম করেছে; সেগুলো সুস্পষ্ট এবং এসব অবস্থায় হারাম হওয়ার গূঢ় রহস্যও সুস্পষ্ট।

দুই:

যদি চুল ছোট করার উদ্দেশ্য হয়: স্বামীর জন্য নিজেকে সাজানো ও স্বামীর কাছাকাছি যাওয়া, কিংবা উদ্দেশ্য হয় যে, লম্বা চুলের যত্ন নেয়ার খরচ ও কষ্ট কিছুটা লাঘব করা, কিংবা অন্য কোন যৌক্তিক বৈধ উদ্দেশ্য হয় তাহলে আলেমদের সঠিক মতানুযায়ী এতে গুনাহ হবে না। কেননা, ইবাদতশ্রেণীয় নয় এমন বিষয়সমূহের মূলবিধান হল বৈধতা; যতক্ষণ পর্যন্ত না হারাম হওয়ার পক্ষে কোন দলিল উদ্ধৃত হয়। ইসলামী শরিয়তে নারীর চুল ছোট করার নিষেধাজ্ঞাসূচক কোন দলিল নেই। বরং এমন কিছু দলিল রয়েছে যাতে জায়েয হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। সে দলিলটি হচ্ছে- আবু সালামা বিন আব্দুর রহমান (রহঃ) বলেন: "নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পত্নীগণ মাথার চুল ছাটাই করতেন; যেন সেটা ওয়াফরা স্টাইল হয়"।

ওয়াফরা হচ্ছে- কারো কারো মতে, যে চুল কাঁধের একটু নীচে থাকে। কারো কারো মতে, যে চুল কানের লতি পর্যন্ত পৌঁছায়।

ইমাম নববী বলেন:

এ হাদিসে মহিলাদের চুল ছোট করার পক্ষে দলিল রয়েছে।[সমাপ্ত][শারহে মুসলিম (৪/৫)]

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:

"নারীর চুল ছোট করা অর্থাৎ নারীর মাথার চুল ছোট করা: আলেমদের কেউ কেউ এটাকে মাকরুহ বলেছেন। কেউ কেউ হারাম বলেছেন। কেউ কেউ জায়েয বলেছেন।

যেহেতু বিষয়টি মতবিরোধপূর্ণ তাই এ ক্ষেত্রে কুরআন-সুন্নাহ –এর দিকে প্রর্ত্যবর্তন করা বাঞ্ছনীয়। আমি আমার এই মুহূর্ত পর্যন্ত নারীর চুল ছোট করা হারাম হওয়ার পক্ষে কোন দলিল জানি না।

হারাম হওয়ার দলিল না থাকলে এটি বৈধ হওয়াই হচ্ছে মূলবিধান এবং এক্ষেত্রে প্রথার অনুসরণ করা হবে। আগের দিনে নারীরা চুল লম্বা করা পছন্দ করত এবং এ নিয়ে গর্ব করত। কোন শরয়ি কারণ ছাড়া কিংবা যৌক্তিক কারণ ছাড়া তারা মাথার চুল কাটত না। কিন্তু, এখন মানুষের অবস্থা পরিবর্তন হয়ে গেছে। তাই এটাকে হারাম বলা দুর্বল অভিমত; যার পক্ষে কোন দলিল নেই। মাকরুহ বলতে গেলে গভীর চিন্তাভাবনার দরকার আছে। জায়েয বলাটা ফিকহি সূত্রাবলি ও মূলনীতিগুলোর অধিক নিকটবর্তী। তাছাড়া সহিহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যুর পর তাঁর পত্নীগণ তাদের মাথার চুল ছোট করতেন; যাতে করে 'ওয়াফরা' স্টাইল হয় (কাঁধের একটু নীচ পর্যন্ত কিংবা কানের লতি পর্যন্ত প্রলম্বিত)।

তবে, কোন নারী যদি তার চুল এত ছোট করে যে, তার মাথা পুরুষের মাথার মত দেখায় তাহলে সেটা হারাম হওয়ার ব্যাপারে কোন আপত্তি নেই। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরুষদের সাথে সাদৃশ্যগ্রহণকারী নারীদের প্রতি লানত করেছেন।

কিংবা কোন নারী যদি কাফের কিংবা চরিত্রহীন নারীদের মত করে চুল ছোট করে সেটাও হারাম। কেননা যে ব্যক্তি যাদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদেরই দলভুক্ত।

আর যদি কোন নারী সামান্য চুল ছাটাই করে যেটা পুরুষের চুলের সাথে সাদৃশ্যের পর্যায়ে পৌঁছে না; কিংবা চরিত্রহীন নারী বা কাফের নারীদের মাথার সাথে সাদৃশ্যের পর্যায়ে পৌঁছে না­- তাহলে তাতে কোন সমস্যা নেই।[সমাপ্ত]

ফাতাওয়া নুরুন আলাদ দারব (ফাতাওয়ায যিনাহ ওয়াল মারআ/কাস্সু শা'র) (ক্যাসেট নং ৩৩৬, দ্বিতীয় সাইড)

আরও জানতে দেখুন: 1192 নং, 13248 নং ও 13744 নং প্রশ্নোত্তর।

তিন:

'নারীর চুল কিয়ামতের দিন তার জন্য আচ্ছাদন হবে' এ ধরণের যে কথাটি বলা হয় হাদিসে বা আছারে এমন কোন দলিল নেই। আলেমদের বক্তব্যেও আমরা এমন কিছু পাইনি। সুতরাং এ ধরণের কথা সঠিক কিনা, শরিয়তে সাব্যস্ত কিনা- সেটা নিশ্চিত হওয়ার আগে তা প্রচার করা ও বিশ্বাস করা থেকে সাবধান থাকা উচিত।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব