বৃহস্পতিবার 20 জুমাদাল আউওয়াল 1446 - 21 নভেম্বর 2024
বাংলা

যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কিছু অর্থ গ্রহণ করেছে; কিন্তু সফর করে চলে আসার কারণে সেটা ফেরত দিতে পারছে না

প্রশ্ন

আমি উপসাগরীয় দেশগুলোর কোন একটিতে লিগ্যাল এডভাইজার হিসেবে কর্মরত ছিলাম। আমি কাজ করেই অর্থ নিতাম। কিন্তু, সমস্যা হল আমার অর্থের ভেতরে কিছু সন্দেহজনক অর্থ ঢুকে পড়েছে। যে অর্থগুলো আমি এজেন্টদের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে গ্রহণ করেছি এবং সেগুলো আমার হালাল অর্থের ভেতরে ঢুকে গেছে। আমি জানি না যে, এমন অর্থের পরিমাণ কত হবে; যেহেতু সেগুলো আমার অর্থের সাথে মিশে গেছে এবং আমার পক্ষে সেগুলো মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়াও সম্ভবপর নয়। যেহেতু আমি সে দেশ থেকে চলে এসেছি, এখন মিশরে থাকছি। আমি আল্লাহ্‌র কাছে এ গুনাহ থেকে তওবা করেছি এবং আমার সম্পদকে পুত-পবিত্র করার জন্য আল্লাহ্‌র রাস্তায় খরচ করে যাচ্ছি। এমতাবস্থায়, যাতে করে আল্লাহ্‌ আমার প্রতি খুশি হন ও আমাকে মাফ করে দেন সেটার উপায় কী?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারো সম্পদ গ্রহণ করেছে তার উপর আবশ্যকীয় হচ্ছে—সে সম্পদ ঐ ব্যক্তিকে ফিরিয়ে দেয়া। সম্পদ ফিরিয়ে দেওয়া ছাড়া  তার তওবা পূর্ণ হবে না। দলিল হচ্ছে আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদিস তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি বা অন্য কোন বিষয়ে যুলুমের জন্য দায়ী থাকে, সে যেন আজই তার থেকে মাফ করিয়ে নেয়, সে দিন আসার পূর্বে যে দিন তার কোন দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) বা দিরহাম (রৌপ্যমুদ্রা) থাকবে না। যদি তার সৎকর্ম থাকে তাহলে তার সৎকর্ম থেকে জুলুমের সমপরিমাণ কেটে রাখা হবে। আর তার সৎকর্ম না থাকলে তার প্রতিপক্ষের পাপ হতে জুলুমের সমপরিমাণ নিয়ে তা তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে।”[সহিহ বুখারী (২৪৪৯)]

ইমাম নববী (রহঃ) বলেন: “আলেমগণ বলেন, প্রত্যেক গুনাহ থেকে তওবা করা ওয়াজিব। যদি গুনাহটি বান্দার মাঝে ও আল্লাহ্‌র মাঝে হয়ে থাকে; কোন মানুষের হক্বের সাথে সম্পৃক্ত না হয় তাহলে সে তওবার জন্য শর্ত তিনটি: ১। গুনাহ ত্যাগ করা। ২। কৃত কর্মের জন্য অনুতপ্ত হওয়া। ৩। সে গুনাতে পুনরায় লিপ্ত না হওয়ার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেওয়া। যদি এ তিনটি শর্তের কোন একটি না পাওয়া যায় তাহলে সে তওবা শুদ্ধ হবে না।

আর যদি গুনাহটি মানুষের সাথে সম্পৃক্ত হয় তাহলে সে তওবার জন্য শর্ত চারটি: উল্লেখিত তিনটি এবং হক্বদারের হক্ব থেকে নিজেকে মুক্ত করা; যদি সম্পদ বা এ জাতীয় কিছু হয় তাহলে সেটা মালিককে ফিরিয়ে দেওয়া। আর যদি অপবাদ এবং এ ধরণের কিছু হয় তাহলে প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য নিজেকে তার কাছে পেশ করা কিংবা ক্ষমা চেয়ে নেওয়া। আর যদি গীবত হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে মাফ চেয়ে নেওয়া।”[রিয়াদুস সালেহীন, পৃষ্ঠা-৩৩ থেকে সমাপ্ত]

যদি আপনি অন্যায়ভাবে অর্জিত সম্পদের পরিমাণ না জানেন তাহলে সতর্কতা রক্ষা করে প্রবল ধারণাকে আমলে নিবেন। যদি অর্থের পরিমাণ ১০০-৮০ মাঝে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে আপনি ১০০ ধরবেন; যাতে করে নিশ্চিতভাবে আপনার যিম্মাদারি মুক্ত হয়।

যদি আপনি হক্বদারকে জানালে বিপত্তি ঘটার আশংকা করেন তাহলে তাকে জানানো আবশ্যকীয় নয়। বরং সম্ভাব্য যে কোন মাধ্যমে অর্থটা তার কাছে পৌঁছালেই যথেষ্ট। যেমন—তার একাউন্টে জমা করে দেওয়া, কিংবা এমন কাউকে দেওয়া যিনি তাকে না জানিয়ে তার কাছে অর্থটা পৌঁছিয়ে দিবেন।

আর যদি হক্বদার মারা যায় সেক্ষেত্রে আপনি হক্বদারের ওয়ারিশগণকে পরিশোধ করবেন।

দুই:

আর যদি আপনি চেষ্টা ও খোঁজাখুঁজি করার পরেও হক্বদারকে চিনতে ও অর্থটা তার কাছে পৌঁছাতে সক্ষম না হন; তার নাম ভুলে যাওয়ার কারণে কিংবা অন্য যে কোন কারণে সেক্ষেত্রে আপনি উক্ত অর্থ তার পক্ষ থেকে দান করে দিবেন। তবে শর্ত হল—যখনই আপনি তার কাছে পৌঁছতে সক্ষম হবেন তখনই আপনি তাকে দুটো অপশন দিবেন: এ সদকাকে মেনে যাওয়া কিংবা নিজে অর্থটা গ্রহণ করা।

“স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র” তে এসেছে— জনৈক সৈনিক একজন দাস থেকে কিছু অর্থ চুরি করেছে: যদি সৈনিক ব্যক্তি দাসটিকে চেনে কিংবা দাসটিকে যে ব্যক্তি চেনে তাকে চেনে সেক্ষেত্রে সন্ধান করে তাকে সে রৌপ্যমুদ্রা বা সমমূল্য বা তার সাথে যা পরিশোধ করতে একমত হবে সেটা পরিশোধ করা। আর যদি তাকে না চেনে ও তার সন্ধান পাওয়ার ব্যাপারে হতাশ হয়ে যায় তাহলে ঐ অর্থ কিংবা ঐ অর্থের সমমূল্যের কাগুজে মুদ্রা এর মালিকের পক্ষ থেকে সদকা করে দিবে। পরে যদি উক্ত ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া যায় তাহলে বিষয়টি তাকে অবহিত করবে। যদি মালিক সদকার বিষয়টি মেনে যায় তাহলে ভাল। আর যদি সদকা করাটা মেনে না যায় এবং অর্থ দাবী করে তাহলে তাকে তার অর্থ ফেরত দিতে হবে এবং সদকাকৃত অর্থ সৈনিকের নিজের সদকা হিসেবে গণ্য হবে। এ সৈনিকের কর্তব্য হল: আল্লাহ্‌র কাছে ইস্তিগফার করা, তওবা করা এবং এ অর্থের মালিকের জন্য দোয়া করা।”[ফাতাওয়া ইসলামিয়্যা (৪/১৬৫) থেকে সমাপ্ত]

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন: “... যদি আপনি কোন ব্যক্তি থেকে কিংবা কোন প্রতিষ্ঠান থেকে কোন কিছু চুরি করেন তাহলে আপনার উপর আবশ্যকীয় হল আপনি যার থেকে চুরি করেছেন তার সাথে যোগাযোগ করে বলা যে, আমার কাছে আপনার এত এত পাওনা আছে। এরপর উভয় পক্ষ একটা সমঝোতাতে পৌঁছবেন। কেউ মনে করতে পারেন যে, এটা তার জন্য কঠিন, তার পক্ষে সম্ভবপর নয় যে, গিয়ে সে ব্যক্তিকে বলবে: আমি আপনার থেকে এত এত চুরি করেছি বা আপনার থেকে এত এত নিয়েছি। সেক্ষেত্রে আপনি এ দিরহামগুলো তার কাছে পরোক্ষ কোন রাস্তায় পৌঁছিয়ে দিবেন। যেমন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কোন সাথী বা বন্ধুকে দিয়ে বলা যে, এটা অমুকের পাওনা। ঘটনাটা তাকে উল্লেখ করে বলবে যে, আমি এখন তওবা করেছি; আশা করি আপনি অর্থটা তাকে পৌঁছিয়ে দিবেন।

যদি কেউ এভাবে করে তার ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “আর যে আল্লাহ্‌কে ভয় করে তিনি তার জন্য (সংকট থেকে) বের হওয়ার পথ করে দেবেন।”[সূরা ত্বালাক, আয়াত: ২] তিনি আরও বলেন: “যে আল্লাহ্‌কে ভয় করে আল্লাহ্‌ তার কাজ সহজ করে দেন।”[সূরা ত্বালাক্ব, আয়াত: ৪]

ধরে নেয়া যাক, আপনি যার থেকে চুরি করেছেন তাকে এখন আর চিনবেন না এবং জানেনও না যে, সে কোথায় থাকে: তাহলে এর বিধান আগেরটার চেয়ে সহজ। কেননা আপনি চুরিকৃত সম্পদ মালিকের পক্ষ থেকে সদকা করে দিবেন; এভাবে আপনার দায়িত্ব মু্ক্ত হবে।

প্রশ্নকারী ভাই যে ঘটনাটি উল্লেখ করেছেন সেটা থেকে অবধারিত যে, মানুষের এ ধরণের কর্ম থেকে দূরে থাকা অপরিহার্য। কেননা হতে পারে কোন ব্যক্তি তার নির্বুদ্ধিতা ও বোকামিগ্রস্ত অবস্থায় চুরি করে ফেলল, সেটাকে তেমন কিছু মনে করল না। এরপর আল্লাহ্‌ যখন তাকে হেদায়েত দেয় তখন সে এ গুনাহ থেকে মুক্ত হতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ে।”[ফাতাওয়া ইসলামিয়্যা (৪/১৬২) থেকে সমাপ্ত]

আমরা আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করি, আল্লাহ্‌ যেন আমাদেরকে ও আপনাকে ক্ষমা করে দেন। 

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব